Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Ayodhya Ram Mandir

রামমন্দিরের আগে বাল্মীকি বিমানবন্দরের উদ্বোধন, চা পান গরিবের ঘরে, শনিবার অযোধ্যা যেন ‘মোদীনগরী’

২২ জানুয়ারি অযোধ্যার রাম মন্দিরে রামলালার বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা। মনে করা হচ্ছে, তার পর থেকে উত্তরপ্রদেশের এই শহরে রোজ হাজার হাজার পুণ্যার্থীর সমাগম হবে।

An Image Of PM Narendra Modi

প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে অযোধ্যায় উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৩৭
Share: Save:

ঠাসা সরকারি কর্মসূচি। তার পর জনসভা। সে সবের মাঝে মন্দির নগরী অযোধ্যায় এসে জনসংযোগও সেরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একে বারে স্বকীয় ভঙ্গিতে। হঠাৎই তাঁকে ঢুকে পড়তে দেখা যায় উজ্জ্বলা যোজনার সুবিধাভোগী এক মহিলার বাড়িতে। বসে খোশগল্প করে চা পান করেন। তার পরেই দেশবাসীকে মনে করিয়ে দেন, অযোধ্যা নিয়ে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সবই পূরণ করেছেন। মনে করিয়ে দেন, এক সময় ‘তাঁবু’তে থাকতেন রামলালা। সেখান থেকে এই মন্দির। ঠিক যে ভাবে চার কোটি ভারতবাসী স্থায়ী বাড়ি পেয়েছে সরকারি যোজনায়। লোকসভা ভোটের মঞ্চ যেন এভাবেই বেঁধে দিয়ে গেলেন মোদী!

২২ জানুয়ারি অযোধ্যার রাম মন্দিরে রামলালার বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা। মনে করা হচ্ছে, তার পর থেকে উত্তরপ্রদেশের এই শহরে রোজ হাজার হাজার পুণ্যার্থীর সমাগম হবে। তার আগে তাঁদের সুবিধার জন্য অযোধ্যায় এসে বিমানবন্দর এবং রেল স্টেশন উদ্বোধন করেন মোদী। ১৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। তার আগে সমাজমাধ্যমে তিনি জানিয়ে দেন, রামের শহরে বিশ্বমানের পরিকাঠামো, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে তাঁর সরকার বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি এ-ও জানান তিনি যে, দেশের ‘ঐতিহ্যরক্ষা’ করতেও সচেষ্ট তাঁর সরকার। আর সে কথা তিনি অযোধ্যায় জনসভায় এসেও জানান। মনে করিয়ে দেন, এক সময় তাঁবুর নীচে থাকতে হয়েছিল রামলালাকে। সেখান থেকে মন্দির। অযোধ্যা নিয়ে তাঁর সরকার যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সবই পালন করেছে। আর সে কারণেই ১১ জানুয়ারির অনুষ্ঠানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা দুনিয়া।

তবে দেশবাসীকে আরও কিছু কাল অপেক্ষা করার পরামর্শও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ৫৫০ বছর ধরে রামের জন্য অপেক্ষা করেছি। আরও কিছু কাল করি।’’ জনসভায় তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দেন, ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় না আসাই ভাল। পরের দিন থেকেই অযোধ্যায় যেতে পারবেন ইচ্ছুকেরা। আর সে জন্য সমস্ত ব্যবস্থা তিনি করে দিয়েছেন। ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠান অনুষ্ঠানে আট হাজার বিশিষ্ট আমন্ত্রিত। যাঁরা মন্দির নির্মাণ করেছেন, তাঁদের ১৫ শতাংশও আমন্ত্রণ পেয়েছেন। উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীও। মনে করা হচ্ছে, নিরাপত্তার কারণেই সে দিন সাধারণ মানুষকে অযোধ্যা না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন মোদী।

শনিবার প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে অযোধ্যায় উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁকে স্বাগত জানান উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যপাল আনন্দীবেন পটেলও। মন্ত্রোচ্চারণ এবং পুষ্পবৃষ্টির মাধ্যমে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়। বিমানবন্দর থেকে রোড-শো করে যখন স্টেশনের দিকে এগিয়েছেন মোদী, তখন তাঁকে লক্ষ্য করে গোলাপের পাপড়ি ছুড়েছেন উপস্থিত জনতা। রাস্তার ধারে ধারে ছোট ছোট মঞ্চ তৈরি করে একাধিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়েছে। কেউ কেউ বিশালাকার ডুগডুগি বাজিয়েছেন। কেউ কেউ আবার আদিবাসী নৃত্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে ভিড় উপচে পড়েছে রাস্তার দু’ধারে। তাঁদের উদ্দেশে ক্রমাগত হাত নেড়ে গিয়েছেন মোদী।

এ সবের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার সুবিধাভোগী মীরা মাঝির বাড়িতে পৌঁছে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বসে চা পান করেন। শুনে নেন, ঠিক কী কী সুবিধা তাঁরা পেয়েছেন সরকারি যোজনায়। এর পর রামের মাথায় স্থায়ী ছাদের কথা বলতে গিয়েই তোলেন এই উজ্জ্বলা আবাস যোজনায় দেওয়া আশ্রয়ের প্রসঙ্গ। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষের সঙ্গে চা পান করেই জনসংযোগ শুরু করেছিলেন মোদী। নাম ছিল ‘চায়ে পে চর্চা’। সেখানেই নিজের অতীতের চা-বিক্রেতার পরিচয়ও তুলে ধরেছিলেন। শনিবার যেন নতুন আঙ্গিকে জন সংযোগের কাজটাই শুরু করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

মোদীর চা পান

দিনভর সরকারি কর্মসূচির ফাঁকে অযোধ্যায় আচমকাই মীরার বাড়ি চলে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর প্লাস্টার ছাড়া ঘরে বসেই পান করলেন চা। মীরা প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার সুবিধাভোগী। দেশে ১০ কোটি মহিলা রান্নার গ্যাসে বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি পান। তাঁদের মধ্যেই এক জন মীরা। মীরার ঘরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিল বেশ কয়েক জন খুদে। তাদের সঙ্গেও খোশগল্পে মাতেন মোদী। নিজস্বী তোলেন। অনুজ নামে এক কিশোর অযোধ্যার ছবি এঁকে প্রধানমন্ত্রীকে দেখান। অনুজ স্থানীয় স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। তার সেই ছবিতে সই করেন তিনি। লিখে দেন, ‘বন্দে মাতরম’। খুদেদের সঙ্গে খোশগল্পের সেই ভিডিয়ো এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। মীরা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, মোদীজি ঘরে এসে বসেন। তার পর তাঁর সন্তানদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি হাত জোড় করে তাঁকে স্বাগত জানাই। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এই যোজনায় কী কী সুবিধা পাচ্ছি? আমি জানাই, বাড়ি, গ্যাস, বিনামূল্যে জল পাচ্ছি। এখন আর উনুনে রান্না করতে হয় না। গ্যাসে রান্না করছি। আমি খুব খুশি।’’ এর পর প্রধানমন্ত্রীকে মীরা জানান, তিনি ভাত, ডাল, সব্জি রান্না করেছেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, শীতে চা পান করাই উচিত। তার পরেই চা বানিয়ে পরিবেশন করেন মীরা। তাঁর বাড়িতে বসে সেই চা পান করেন মোদী।

অযোধ্যায় বিমানবন্দর

২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় উদ্বোধন হবে রাম মন্দিরের। প্রশাসনের আশা, তার জেরে মন্দির নগরীতে বৃদ্ধি পাবে পুণ্যার্থীদের সমাগম। তাঁদের যাতায়াতের সুবিধার্থে শনিবার সেখান বিমানবন্দরের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। অযোধ্যায় আগেও ছিল বিমানবন্দর। নাম ছিল ‘মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রী রাম অযোধ্যা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’। সেটি মূলত আপৎকালীন প্রয়োজনে এবং বিশিষ্ট মানুষদের যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা হত। এ বার সাধারণের জন্য খুলছে সেই বিমানবন্দরের দরজা। পুণ্যার্থীদের কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবন তৈরি করা হয়। বিমানবন্দরের নতুন নামকরণ করা হয় রামায়ণ মহাকাব্যের স্রষ্টা মহর্ষি বাল্মীকির নামে— ‘মহর্ষি বাল্মীকি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অযোধ্যাধাম’। শনিবারই অযোধ্যা বিমানবন্দরে নামার কথা একটি যাত্রিবাহী বিমানের। উড়ে যাওয়ার কথা আর একটি বিমানের। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে দিল্লি, মুম্বই এবং আমদাবাদ থেকে অযোধ্যা বিমানবন্দরে নিয়মিত বিমান অবতরণ করবে বলে জানিয়েছে বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিগো।

‘অযোধ্যা ধাম’ স্টেশন

বিমানবন্দরের পাশাপাশি অযোধ্যায় রেল স্টেশনেরও উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। অযোধ্যায় পুণ্যার্থীদের ভিড়ের কথা মাথায় রেখে সংস্কার করা হয়েছে স্টেশন। সাজিয়ে নাম দেওয়া হয়েছে ‘অযোধ্যা ধাম’। নতুন রূপে সেই স্টেশনের উদ্বোধন করেন মোদী। তাঁকে স্টেশনের সব অংশ ঘুরিয়ে দেখান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। সঙ্গে ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও। এর পর অযোধ্যা স্টেশন থেকে দু’টি অমৃত ভারত এবং ছ’টি বন্দে ভারত ট্রেনের উদ্বোধন করেন মোদী। কয়েকটি ভার্চুয়াল মাধ্যমে। দু’টি অমৃত ভারত ট্রেনের মধ্যে একটি পেয়েছে বাংলা। রাজ্যের মালদহ টাউন স্টেশন থেকে ট্রেনটি যাবে কর্নাটকের বেঙ্গালুরুর পর্যন্ত। অযোধ্যায় যাওয়ার আগে শক্রবার রাতে এক্স হ্যান্ডেলে মোদী লেখেন, ‘‘ভগবান শ্রীরামের অযোধ্যায় বিশ্বমানের পরিকাঠামো তৈরি, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ঐতিহ্যরক্ষা করতে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। আমি শনিবার অযোধ্যায় নতুন করে তৈরি করা বিমানবন্দর এবং রেল স্টেশনটির উদ্বোধন করব। পাশাপাশি, অযোধ্যায় আরও অনেক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করব, যা অযোধ্যা, উত্তরপ্রদেশ এবং সর্বোপরি দেশের মানুষের জীবনযাত্রা আরও সহজ করে তুলবে।’’

কী বললেন

২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামলালার বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠা। ওই দিন দেশবাসীকে মন্দির-নগরীতে না যাওয়ার অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরিবর্তে ওই দিন দেশবাসীকে ‘অকাল দীপাবলী’ পালনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, ২২ জানুয়ারি প্রত্যেক ভারতবাসী বাড়িতে রামজ্যোতি (প্রদীপ) জ্বালাবেন। তবে পরের দিন থেকেই অযোধ্যায় যেতে পারবেন ইচ্ছুকেরা, জানিয়েছেন মোদী। এর আগে রামমন্দির নির্মাণে তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের অন্যতম শীর্ষকর্তা চম্পত রাইও গর্ভগৃহে ‘রামলালা বিরাজমান’-এর মূর্তি প্রতিষ্ঠার দিন ভক্তদের অযোধ্যায় যেতে নিষেধ করেছিলেন। নিরাপত্তার কারণে রাই এ কথা বলেছেন বলে জানা গিয়েছিল। শনিবার মোদী আগামী ১৪ জানুয়ারি অযোধ্যা-সহ দেশের সমস্ত ধর্মস্থান এবং তীর্থক্ষেত্রে ‘স্বচ্ছতা অভিযানে’ শামিল হওয়ার জন্য সকলকে অনুরোধ করেন। আরও জানান, অযোধ্যার মন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের দিকে গোটা বিশ্ব তাকিয়ে রয়েছে। তিনি এ-ও জানান যে, তিনি অযোধ্যার উন্নয়ন নিয়ে যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলির সবগুলিই প্রায় রক্ষা করতে পেরেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE