প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
লোকসভা ভোটের আগে দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে ইতিমধ্যেই সক্রিয় হয়েছে তাঁর সরকার। কেন্দ্র-নিযুক্ত আইন কমিশনের তরফে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর বিষয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন এবং আমজনতার মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে জনমত তৈরির কাজ শুরু করে দিলেন। মধ্যপ্রদেশের ভোপালে বিজেপির বুথ কমিটির সভাপতিদের নিয়ে ‘মেরা বুথ সবসে মজবুত’ কর্মসূচিতে তাঁর প্রশ্ন— ‘‘কোনও পরিবারে যদি প্রত্যেক সদস্যের জন্য আলাদা আলাদা আইন থাকে, তা হলে কি সেই সংসার চালানো যায়?’’
এর পর সেই যুক্তিকে জাতীয় প্রেক্ষাপটে নিয়ে আসেন মোদী। বলেন, ‘‘দেশের এক একটি সম্প্রদায়ের জন্য যদি এক এক রকম আইন থাকে, তা হলে দেশ এগোতে পারে না। সংবিধানেও সকলের জন্য সমান আইনের কথা বলা আছে। সুপ্রিম কোর্টও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা বলেছে।’’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ২০২৪ সালে ভোটের আগেই কেন্দ্র যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে তৎপর, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে মঙ্গলবার তা স্পষ্ট হয়েছে।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রসঙ্গে তিন তালাকের কথাও বলেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘তিন তালাকের পক্ষে যাঁরা, তাঁরা মুসলিম মহিলাদের সঙ্গে অন্যায় করছেন। এর ক্ষতিকর প্রভাব শুধু মহিলাদের নয়, পুরুষদের উপরও পড়ে। কোনও মহিলাকে তিন তালাক দিয়ে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হলে তাঁর বাবা-ভাইদের উপর কী প্রভাব পড়ে, সেটা চিন্তা করে দেখুন।’’ এর পরেই মোদীর প্রশ্ন, ‘‘তিন তালাক যদি ইসলামের অপরিহার্য অংশ হয়, তা হলে মিশর, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, কাতারের মতো মুসলিম দেশে কেন তিন তালাক নেই।’’
বিজেপি-আরএসএসের ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে অযোধ্যায় রামমন্দির, ৩৭০ রদ, সিএএ বাস্তবায়িত করেছে মোদী সরকার। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা এখনও বাকি। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে এই বিধিকে বিজেপি ‘তুরুপের তাস’ করতে চাইছে বলে বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ। কারণ, এর ফলে মুসলিম সংগঠনগুলি তাদের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ হচ্ছে বলে আপত্তি তুলবে। আর সেই সুযোগে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির মতো সমস্যাগুলি তখন পিছনের সারিতে চলে গিয়ে মেরুকরণের রাজনীতিই প্রধান হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রসঙ্গে মোদী মঙ্গলবার কড়া ভাষায় বিরোধীদের সমালোচনা করেন। তাঁর অভিযোগ, বিরোধীদের তোষণ এবং ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি দেশের উন্নয়নের পথে অন্তরায়। প্রসঙ্গত, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মূল উদ্দশ্যে হল, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, সম্পত্তির অধিকারের মতো বিষয়ে প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সব আলাদা আলাদা নিয়ম, রীতি চালু আছে, তা তুলে দিয়ে দেশে একটি অভিন্ন ব্যবস্থা চালু করা। সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy