ছবি: সংগৃহীত।
খাস রাজধানীতে অনাহারে তিন শিশুকন্যার মৃত্যুর দায় কার, তা এখনও জানা যায়নি। যদিও আসরে নেমে পড়েছে সব পক্ষই। বিজেপি, কংগ্রেস, আম-আদমি-পার্টি, সিপিএম, সকলেই এখন এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ব্যস্ত।
এদিকে দিল্লির লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হাসপাতাল থেকে মিলল আসল পরিস্থিতির আরও মর্মান্তিক ছবি। প্রাথমিক ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, অনাহারই মৃত্যুর কারণ। কিন্তু আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। তাতেই জানা গিয়েছে, তিন মেয়ের কারও শরীরেরই ফ্যাট বা স্নেহপদার্থের বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই, দীর্ঘদিনের অনাহারে সমস্ত স্নেহপদার্থ খরচ হয়ে গিয়েছিল, পাকস্থলীতেও ছিল না বিন্দুমাত্র খাবার।
তিন মেয়ের রিপোর্ট দেখার পর লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিন্টেডেন্ট অমিত সাক্সেনা জানিয়েছেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে ১৫ বছর ধরে চাকরি করছি, কিন্তু এই রকম ঘটনা কোনও দিন দেখিনি।’’
আরও পড়ুন: দিল্লিতে অনাহারে মৃত্যু এ রাজ্যের ৩ শিশুর
মঙ্গলবারই সংসদভবন থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরে পূর্ব দিল্লির মান্ডাবলী এলাকায় না খেতে পেয়ে মারা যায় তিন শিশুকন্যা মানসী (৮), পারুল (৪) ও শিখা (২)। তাদের বাবা রিকশাচালক, মা মানসিক ভাবে সুস্থ নন বলেই জানা গিয়েছে। পরিবারটির বাড়ি মেদিনীপুরে, এমনটাই জানিয়েছেন পড়শিরা।
যে কামরাটিতে তিন মেয়েকে নিয়ে থাকতেন তাদের মা, সেখানেও বলার মত কিছুই পাননি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। ঘর থেকে মিলেছে খালি ওযুধের বোতল, ডায়েরিয়ার ওষুধ ও টুকিটাকি জিনিসপত্র। ছোট দুই বোনের শরীর কিছুদিন ধরেই খারাপ ছিল বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু বড় বোন কেন অনাহারে ছিল, তা নিয়ে ধন্ধ কাটেনি। কারণ, আট বছরের মানসী কাছেই একটি স্কুলে যেত। সেখানে তার মিড ডে মিল পাওয়ার কথা।
এ সবের মধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনের দাবি, খোদ দিল্লির বুকে ছোট ছোট বাচ্চারা না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে, কংগ্রেস সরকারের আমলে এমনটা কখনও হয়নি। দিল্লির বিজেপি প্রধান মনোজ তিওয়ারিও আম আদমি পার্টিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্র গণবন্টন ব্যবস্থার জন্য খাবার পাঠায়। সেই খাবার মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ব্যর্থ দিল্লি সরকার। যার জেরেই এই অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা। অবশ্য দায় নিতে নারাজ আম আদমি পার্টিও। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প এক বছর ধরে লাল ফিতের ফাঁসে আটকে আছে। যার জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় সরকার। সেই প্রকল্প চালু হয়ে গেলে এই ঘটনা ঘটতো না। ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমও। তাঁর খেদোক্তি, লেফটেনান্ট গভর্নর নাকি মুখ্যমন্ত্রী? কার হাতে দিল্লির ক্ষমতা, তা নিয়েই ব্যস্ত সবাই। সেই তরজার মধ্যে পেছনে চলে যাচ্ছে মানুষের জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের বিষয়গুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy