বাড়িতে তাঁরা এমন সাদামাঠা মেনুতে দুপুর বা রাতের ভোজন সারেন, এমন কথা বুক ঠুকে বলতে পারবেন না রেলকর্তারা।
কিন্তু রেল বোর্ডে বসে তাঁরাই যে-ফতোয়া জারি করেছেন, তাতে রেল-মহল থেকে যাত্রী-শিবির— সর্বত্রই বিস্ময় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফতোয়া বলছে, রাজধানী, দুরন্ত, শতাব্দীর মতো ভারিক্কি নামের দূরপাল্লার ট্রেনও ৩-৪ ঘণ্টার বেশি দেরিতে চললে অতিরিক্ত মেনুতে থাকবে কেবল ভাত, ডাল, আচার!
অর্থাৎ দেরি করবে রেল, ভুগতে হবে আমযাত্রীদের! কেন? প্রশ্নটা শুধু যাত্রিসাধারণের নয়, রেলকর্তাদের একাংশেরও। ওই কর্তাদের বক্তব্য, বিমান দেরি করলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা যাত্রীদের উপযুক্ত খাওয়াদাওয়া তো বটেই, প্রয়োজনে থাকারও বন্দোবস্ত করে। ভাড়া বাড়িয়ে এখন সেই বিমানের সঙ্গে টক্কর দিতে চাইছে রেল। অথচ বিমান সংস্থার মতো পরিষেবা দিতে অনীহা কেন? এতে তো আখেরে ক্ষতি রেলেরই। কারণ রাজধানী, শতাব্দীর মতো কুলীন ট্রেনেও যদি খাবারের তালিকা এ-ই হয়, যাত্রীরা বিমুখ হবেন। ভাড়া বৃদ্ধির পরে রাজধানী, দুরন্তের মতো ট্রেনে এমনিতেই যাত্রী কমেছে প্রায় ২০%। তা আরও কমতে পারে বলে রেলকর্তাদের একাংশের আশঙ্কা।
রেলের অন্দরে এমন ক্ষোভ ও বিতর্ক সত্ত্বেও বোর্ডের সিদ্ধান্ত বদলের ইঙ্গিত নেই। গত দু’সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন শিয়ালদহ-নয়াদিল্লি দুরন্ত এক্সপ্রেস দেরিতে চলেছে এবং সেখানে অতিরিক্ত খাবারের তালিকায় ভাত-ডাল-আচারই ছিল। খাদ্য পরিবেশনকারীদের কাছে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন যাত্রীরা। অনেকেই ওই খাবার খাওয়ার থেকে অভুক্ত থাকাই শ্রেয় মনে করেছেন।
এমনিতে প্রায় সব ট্রেনেই খাবার নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই। টিকিটের সঙ্গেই খাবারের টাকা নিয়ে নেয় রেল। কিন্তু খাবারের নিম্ন মান, পরিবেশনে পরিচ্ছন্নতার অভাব নিয়ে যাত্রীরা তিতিবিরক্ত। ট্রেন দেরিতে চলার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যাত্রীদের দায় থাকে না। তা হলে রেল এমন খাবার দেওয়ার কথা ভাবতে পারল কী করে?
রেলকর্তাদের কেউ কেউ একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁদের বক্তব্য, ট্রেন দেরিতে চললে যে-খাবার দেওয়া হয়, তার দাম টিকিটের সঙ্গে নেওয়া হয় না। রেলকেই বাড়তি খরচ করে সেই খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। তাই অতিরিক্ত সময়ের জন্য কী খাবার দেওয়া হবে, সেটা রেলই ঠিক করতে পারে। যাত্রীদের প্রশ্ন, বিমান দেরি করলে হোটেলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা তো বিমান সংস্থাই করে। তার জন্য যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না। রেল তা দিতে পারবে না কেন?
ট্রেনে যাত্রীদের খাবার সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে রেলেরই সহযোগী স্বশাসিত সংস্থা রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন (আইআরসিটিসি)। প্রশ্ন উঠছে, মেনু নিয়ে রেল বোর্ডের নাক গলাচ্ছে কেন? আইআরসিটিসি-র কোনও কোনও কর্তা বলছেন, ভাত, ডাল, আচারের টাকাতেই এর থেকে ভাল খাবার দেওয়া সম্ভব। ভাতের সঙ্গে এমন তরকারি দেওয়া যেতে পারে, যাতে আলাদা করে ডাল দরকার হবে না। কিন্তু রেল তো বলেই দিয়েছে, ভাত, ডাল, আচারই দিতে হবে। তাই আইআরসিটিসি-র পক্ষে অন্য রকম কিছু করার সুযোগ থাকছে না। কেবল অতিরিক্ত মেনু নয়, টিকিটের সঙ্গে দাম ধরে নেওয়া খাবারের ক্ষেত্রেও রেলই মেনু ঠিক করে দিচ্ছে। অথচ আইআরসিটি-কে দায়িত্ব ছাড়লে একই দামে ভাল খাবার দেওয়া যেত বলে সংস্থার একাংশের দাবি।
প্রাক্তন রেলকর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, আইআরসিটিসি-র কাজে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ বন্ধ করুক রেল বোর্ড। আর যাত্রীদের অনেকেরই দাবি, টিকিটের সঙ্গে খাবারের টাকা নেওয়া একেবারে বন্ধ করে দিক রেল। আইআরসিটিসি-র তৈরি মেনু রাখা হোক ট্রেনে। যাতে যাত্রীরা ইচ্ছেমতো খাবার কিনে খেতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy