শুক্রবার সংসদে রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।
সনিয়া গাঁধী ক’দিন ধরেই আগ্রাসী। শুক্রবার সরকার ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আক্রমণে নতুন নজির গড়ে আগ্রাসনে মা-কেও ছাড়িয়ে গেলেন রাহুল গাঁধী। ললিত মোদীকে সুষমা স্বরাজের সাহায্য করার পিছনে ‘টাকা-কড়ির যোগ থাকার’ প্রশ্ন যেমন তিনি তুললেন, তেমনই বিষয়টি নিয়ে বিদেশমন্ত্রীর এই ঢাক ঢাক গুড় গুড়ের সঙ্গে ‘চোর-ডাকাতের কাজের’ তুলনা টানলেন। অনেকেই বলছেন— রাহুলের এমন উড়িয়ে খেলার মেজাজ আগে কেউই দেখেননি।
ললিত মোদী নয়, তাঁর স্ত্রী মিনালকে মানবিকতার খাতিরে সাহায্য করেছিলেন বলে গত কাল বিরোধীশূন্য লোকসভায় আত্মপক্ষ সমর্থন করেছিলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ! যুক্তির জমি দুর্বল বলে আবেগের মিশেলও ছিল তাতে! অসহায় মুখ করে এ কথাও বলেছিলেন, ‘‘হয়তো বা গ্রহের ফের!’’
সংসদ চত্বরে কালো ল্যান্ড রোভার থেকে নামতে নামতে সনিয়া আজ বললেন, ‘‘সুষমা নাটুকেপনায় ওস্তাদ!’’
এক ঝটকায় মনে হতেই পারে, পুরনো ঝাল ঝাড়লেন নাকি সনিয়া? সে-ও তো দশ বছর আগের ‘নাটক’। লোকসভা ভোটে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে নির্বাচিত হলেও বিদেশিনী ইস্যুতে সনিয়ার পিছনে পড়ে গিয়েছিলেন সুষমা। বড় করে খোপা বাঁধতেন তখন। বলেছিলেন, ‘‘সনিয়া প্রধানমন্ত্রী হলে মাথা মুড়িয়ে ফেলব।’’ মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সব মিটে গেলে এক দিন সংসদে সনিয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেন বিজেপির এই চৌখস নেত্রী। বলেছিলেন, ‘‘কিছু মনে করেননি তো!’’ ব্যাপারটা কিন্তু এতটা ‘ব্যক্তিগত’ ছিল না! সনিয়া তবুও হেসে বলেছিলেন— ধুস!
কংগ্রেস নেতাদের মতে, এমনিতেই অর্থনীতির চাকা ঘুরছে না। শিল্প মহলেও অসন্তোষ বাড়ছে। রাহুল বজাজের মতো যে শিল্পপতিরা এক সময় নরেন্দ্র মোদীর ‘ফ্যান’ ছিলেন, তাঁকে সম্রাট বলে সম্মোধন করতেও কুণ্ঠা করেননি, আজ তিনিও সরকারের সমালোচনা করেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে এই নেতিবাচক ধারণা বদ্ধমূল করতেই এখন গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন সনিয়া। মূল বক্তব্য— দুর্নীতি দমন নিয়ে লম্বা চওড়া কথা বলে এখন সরকারে দুর্নীতিপরায়ণদেরই আড়াল করছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে সুষমার বিরুদ্ধে শব্দ বাছাইয়ে সনিয়া আজ যেমন যত্নশীল ছিলেন, তেমনই লাগামছাড়া ছিল রাহুল গাঁধীর আক্রমণ।
আসলে গত ক’দিন অনেতেই বলছেন— মা মাঠে নামলেই ছেলের উপস্থিতি ফিকে পড়ে যাচ্ছে। হয়তো সেই কারণেই সুষমা প্রসঙ্গে দু’লাইন মন্তব্য করা ছাড়া আজ আর বিশেষ কথা বলতে চাননি কংগ্রেস সভানেত্রী। তুলনায় রাহুলের মন্তব্য ছিল দীর্ঘ ও ধারাল। ললিত মোদীর রোগাক্রান্ত স্ত্রীকে সাহায্য করার বিষয়ে গত কাল সুষমা প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘আমার জায়গায় থাকলে কী করতেন সনিয়াজি?’’ সনিয়া আজ তার জবাবে বলেন, ‘‘সাহায্য হয়তো করতাম, কিন্তু আইন ভেঙে নয়!’’ এর পরে রাহুল গাঁধীও বলেন, ‘‘ছেলে হিসাবে বলতে পারি, মা এমন কাজ করতেন না।’’ আর তার পরেই কংগ্রেসের সহ-সভাপতি বলেন, ‘‘দুটো ব্যাপার রয়েছে এখানে। প্রথমত চোর-ডাকাত যখন চুরি-ডাকাতি করতে আসে, তখন খুবই গোপনীয়তার সঙ্গে তা করে। সুষমাজিও খুবই গোপনে ললিত মোদীকে সাহায্য করেছেন। কেউ জানতে পারেনি। বিদেশসচিবও নন। দ্বিতীয়ত, চুরি ডাকাতির সঙ্গে আর্থিক ব্যাপারটিও জড়িয়ে থাকে। সুষমাজির স্বামী ও মেয়েও ললিত মোদীকে সাহায্য করেছেন। এখন বিদেশমন্ত্রী বলুন— ললিত মোদীর কাছ থেকে তাঁর পরিবার কত টাকা পেয়েছে?’’
এই ঝাঁঝালো সমালোচনার পর বিজেপি সাময়িক থতমত খায় ঠিকই। পর ক্ষণেই সনিয়ার ‘নাটুকেপনা’ টিপ্পনির জবাব দিতে নামিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে— অভিনয়ের সঙ্গে যাঁর যোগ রয়েছে। সনিয়াকে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘গাঁধী পরিবারের কেউ তো রোদে পুড়ে রোজগার করেননি। সুষমাজির মেয়ে খেটে রোজগার করেন!’’ আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘শব্দচয়নে সতর্ক হওয়া উচিত সনিয়া গাঁধীর।’’
কিন্তু মুখ সামলে তিনি যে আর থাকবেন না, স্থির করে নিয়েছেন সনিয়া। নইলে এমন কথার পিঠে কথা কবেই বা বলেছেন দশ নম্বর জনপথবাসিনী! কংগ্রেস সাংসদদের লোকসভা থেকে সাসপেন্ড করায় প্রতিবাদ জানিয়ে আজ নিয়ে পর পর চার দিন সংসদ চত্বরে ধর্না দেন সনিয়া। লক্ষ করার মতো বিষয় হল, অভিব্যক্তিতে তাঁর বেশ সন্তুষ্টি। বিজেপিকে ‘এক হাত নিয়ে’ যেন বেশ মজা পাচ্ছেন। ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বলে যখন স্লোগান তুলছেন, আপনিই মুঠি বন্ধ করে ফেলছেন।
সরকারের বিরুদ্ধে এই ধর্নায় আজও সামিল ছিলেন সংযুক্ত জনতা ও আরজেডি। সংসদের সিঁড়িতে বসে ধর্না দেন বামেরাও। তার পর সপা, বাম সাংসদরা লোকসভায় বিষয়টি উত্থাপন করে সভা ত্যাগ করেন।
প্রশ্ন হল, সোমবার ২৫ জন সাংসদের সাসপেনশনের মেয়াদ শেষের পর কংগ্রেস কী করবে? জবাবে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা আজ বলেন, কী আবার! ফের পোস্টার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে সুষমা-বসুন্ধরাদের ইস্তফা চাওয়া হবে। এ বার আরও বড় প্ল্যাকার্ড তৈরি করেছে কংগ্রেস।
যার এক ঝলক আজ দেখাও গেছে সংসদ চত্বরে। তাতে লেখা—‘‘ঝুটে ওয়াদে ঝুটে বোল, মোদী তেরি খুল গ্যয়ি পোল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy