ট্রেনের চাদর-কম্বল কতটা পরিষ্কার, যাচাই করছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার আশিসকুমার গয়াল। রেলের লন্ড্রিতে। — নিজস্ব চিত্র
প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভারত প্রকল্প নিয়ে হাঁকডাক দেশ জুড়ে। কিন্তু যেটা দেশের সাক্ষাৎ ‘লাইফলাইন’ বা জীবনরেখা, সেই রেলে পরিচ্ছন্নতার কী হাল? প্রাণরেখা যত নিখুঁত হবে, শরীর তো তত সাবলীল ভাবে চলবে। এই মুহূর্তে ঠিক কতটা স্বচ্ছতা রয়েছে রেলের অন্তরঙ্গ আর বহিরঙ্গে?
যাত্রীদের এই প্রশ্নের জবাবে উঠে আসছে যাত্রীদেরই আর এক প্রস্ত প্রশ্ন। তাঁরা বলছেন, ট্রেনের কামরায় সরবরাহ করা চাদর বা বালিশের ওয়াড়ে যদি নোংরা ছোপ থাকে কিংবা কম্বলের ভাঁজ খুললেই যদি উড়তে শুরু করে ধুলো, তা হলে কেমন লাগে? এর থেকেই বুঝে নিন, ট্রেনে শয্যা-ব্যবস্থার স্বচ্ছতার হাল!
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে ভারতীয় রেলেও স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলছে। তাতে প্ল্যাটফর্ম, লাইন এবং ট্রেনের কামরার চিরচেনা অস্বাস্থ্যকর অপরিচ্ছন্নতা কিছুটা পিছু হটছে, সন্দেহ নেই। তবে অভিযানের ঢক্কানিনাদ থামলে কী হবে, সেই বিষয়ে যাত্রীদেরই একাংশ সবিশেষ সন্দিহান। তাঁদের বক্তব্য, পরিচ্ছন্নতা একটা নিরবচ্ছিন্ন আচার। এবং সেটা একই সঙ্গে বাইরে ও ভিতরে আচরণীয়। প্ল্যাটফর্ম, লাইন, কামরা সাফসুতরো হওয়াটা জরুরি অবশ্যই। কিন্তু এই বহিরঙ্গ ছাড়াও রেলের সঙ্গে যাত্রীদের অন্তরের যোগ গড়ে উঠলে তবেই সফর হয় স্বস্তিকর। তার জন্য চাই শয্যার পরিচ্ছন্ন আয়োজন। ট্রেনে ট্রেনে এখনও সেটার বড়ই অভাব। সফরের স্বাভাবিক ধকল তো আছেই। তার উপরে নোংরা, ধূলিমলিন চাদর-বালিশ-তোয়ালে-কম্বল তিতিবিরক্ত করে তোলে যাত্রীদের। এমনকী রাজধানী, দুরন্ত, শতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো কুলীন ট্রেনেও অপরিষ্কার, বিটকেল গন্ধযুক্ত শয্যাসামগ্রী দীর্ঘ ট্রেনযাত্রা বিষময় করে তোলে।
এই অবস্থায় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর কাছে আমযাত্রীর আবেদন, একটি পরিচ্ছন্ন চাদর, তোয়ালে আর কম্বলের অন্তরঙ্গতা দীর্ঘ ট্রেন-সফর সুন্দর করে তোলার পক্ষে যথেষ্ট। বাইরের পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে সঙ্গেই রেল এই অন্তরঙ্গ স্বচ্ছতার ব্যবস্থা করুক।
দূরপাল্লার ট্রেনে পরিচ্ছন্ন বিছানার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না কেন?
ট্রেনে শয্যাসামগ্রীর অপরিচ্ছন্নতার কথা কবুল করছেন রেলকর্তারাও। এর কারণ যে পরিকাঠামোর অভাব, ঠারেঠোরে মানছেন সেটাও। তাঁরা বলছেন, সারা দেশের বিভিন্ন ট্রেনে রোজ প্রায় চার লক্ষ প্যাকেট কম্বল, বালিশ ও চাদর লাগে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পরিকাঠামো যা, তাতে এর মাত্র ৪০ শতাংশ নিজস্ব লন্ড্রিতে কেচে পরিষ্কার করতে পারেন তাঁরা। বাকিটা পরিষ্কার করানো হয় ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে। আর সমস্যার মূল সেটাই। অনেক ক্ষেত্রেই ঠিকাদার সংস্থা ঠিকমতো কাজ করছে না। না-কেচেই চাদর-বালিশ আবার প্যাকেটে ভরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ট্রেনে, এমন অভিযোগও কম নয়।
সমাধানের পথ কী?
ট্রেনে শয্যাসামগ্রী নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ-অনুযোগ দীর্ঘদিনের। এর আগে তাঁদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বড় বড় স্টেশনে ২৫০ টাকায় একটি করে বালিশ, একটি কম্বল এবং দু’টি চাদর বিক্রির ব্যবস্থা করেছিল রেল মন্ত্রক। কিন্তু যাত্রীরা সেগুলি কেনার ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ দেখাননি। এই অবস্থায় রেলের লন্ড্রিগুলির ক্ষমতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যাতে রেল-কর্তৃপক্ষ নিজেরাই যথাসম্ভব বেশি পরিচ্ছন্ন চাদর-কম্বল জোগাতে পারেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাতে এখন পাঁচটি যন্ত্রচালিত লন্ড্রি আছে। পূর্ব রেলের হাতে রয়েছে তিনটি। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ জানান, তাঁদের সাঁতরাগাছি লন্ড্রিতে দিনে দু’হাজার চাদর, কম্বল পরিষ্কার হতো। এখন আধুনিক মেশিনের সাহায্যে দিনে ছ’হাজার চাদর, কম্বল পরিচ্ছন্ন করে প্যাকেট তৈরি হচ্ছে। ‘‘এ ভাবেই ট্রেনে শয্যা-ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার ব্যবস্থা হচ্ছে,’’ বললেন সঞ্জয়বাবু।
যাত্রীদের একাংশ বলছেন, স্বচ্ছতা-পরিচ্ছন্নতা তো দূরের ট্রেনের একচেটিয়া নয়। লোকাল ট্রেনে বিছানা না-হয় লাগে না। কিন্তু ওই ট্রেনে নিত্যদিন সফর করতে হয় দুঃসহ অপরিচ্ছন্নতাকে সঙ্গী করে। স্বচ্ছ ভারত অভিযানে ট্রেনের কামরা, লাইন, বিশেষ করে প্ল্যাটফর্মের হাল কি আরও একটু ফেরানো যায় না?
তারও বন্দোবস্ত হচ্ছে বলে জানান দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব রেলের কর্তারা। তাঁদের দাবি, লোকাল ট্রেনেও স্বচ্ছতা বেড়েছে। দূরপাল্লার ট্রেন হোক বা লোকাল, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার দায়িত্ব যে যাত্রীদেরও, সেটা মনে করিয়ে দিচ্ছেন রেলকর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, দূরের ট্রেনে শৌচাগারের হাল অনেক ভাল হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এক শ্রেণির যাত্রীর জন্যই সেই পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা যাচ্ছে না। সেই জন্য ট্রেনে ট্রেনে উঠে প্রচারের ব্যবস্থাও হয়েছে। পিছিয়ে থাকতে রাজি নয় পাতাল রেলও। মেট্রো-কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে এখন থেকে সাধারণ ট্রেনের মতো মেট্রোর কামরাতেও থাকবেন সাফাইকর্মীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy