Advertisement
১৭ মে ২০২৪

‘আমার ভাইটাও যদি এ ভাবে ফিরে আসত!’

আমার অত দূর পৌঁছনোর মতো ক্ষমতা বা পরিচিতি নেই। তাই দূর থেকেই চোখের জল ফেলছি।

দলবীর কৌর।

দলবীর কৌর।

দলবীর কৌর (পাকিস্তানে জেলে নিহত সর্বজিৎ সিংহের দিদি)
জালন্ধর শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০২:৪১
Share: Save:

অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দিয়ে আমাদের ধন্য করছে না পাকিস্তান। ইমরান খানকে কৃতজ্ঞতা জানানোর মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি। জেনিভা সনদ অনুযায়ী কোনও বন্দিকে এই ভাবে আটকে রাখা যায় না। পাকিস্তানের উপরে যে ভাবে আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে, তাতে আমাদের বীর সেনা অভিনন্দনকে মুক্তি দিতেই হতো। আমার মন তো চাইছে, অভিনন্দনের সঙ্গে দেখা করে আসি। আমার ভাই ফিরে এসেছে ভেবে ওকেই বুকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু আমার অত দূর পৌঁছনোর মতো ক্ষমতা বা পরিচিতি নেই। তাই দূর থেকেই চোখের জল ফেলছি।

যেদিন পাকিস্তানের সেনাদের হাতে অভিনন্দনের ধরা পড়ার খবর দেখলাম, অস্থিরতার মধ্যে কেটেছে। আমি, আমার ভাইয়ের মেয়ে-বৌ সারাদিন মুখে কিছু তুলতে পারিনি। ভিডিয়োয় দেখছিলাম, কীভাবে স্থানীয় লোকের হাতে অভিনন্দনকে নিগৃহীত হতে হচ্ছিল। সেই সময়ে নিজের ছোট ভাইটার মুখই মনে পড়ে যাচ্ছিল।

অথচ, আমার ভাইয়ের দোষ ছিল না। ওরা সর্বজিতের বিরুদ্ধে প্রমাণ দিতে পারেনি। জানি, অভিনন্দন আর সর্বজিতের ঘটনা এক নয়।

তা-ও দুটো পরিবারের উৎকণ্ঠা তো এক! প্রতিবেশী দেশের হাতে আটক থাকা দুটো মানুষের রক্তপাতের যন্ত্রণাটা তো একই! ওরা অভিনন্দনকে মারছিল, স্তব্ধ হয়ে দেখছিলাম।

আরও পড়ুন: ‘এই তো বেঁচে, আমাদের কি জঙ্গি মনে হয়!’

নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। এই রক্ত তো আমার ভাইয়ের মুখেও দেখতে চাইনি। সর্বজিতের দুই মেয়ে পুনম আর স্বপনদীপ বার বার আমায় ফোন করছিল। বলছিল, ‘‘দেখো বুয়াজি, ইয়ে ক্যয়া হো রহা হ্যায়! ’’ সর্বজিতের স্ত্রী-ও কান্নাকাটি করছিল। মনে পড়ছিল, পাকিস্তান থেকে ফোন এল, ওর মৃত্যুদণ্ড স্থগিত হয়ে গিয়েছে। ও ফিরছে। গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে আলো দিয়ে সাজানো হল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেরেই ফেলা হল ওকে।

আজ তাই ভয় করছিল। মনে হচ্ছিল, সবাইকে বলি, যতক্ষণ পর্যন্ত না ঘরের ছেলে ঘরে ফিরছে, সংবাদমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমে এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক বন্ধ থাক। দেশের নেতাদের রাজনৈতিক তর্জন-গর্জন বন্ধ থাকুক। অভিনন্দনের ফেরার আগে পাকিস্তানকে খেপিয়ে তোলা কাজের কথা নয়। বার বার মনে হয়েছে, ওরা যে কোনও সময়ে মত বদল করতে পারে। আমার ভাইয়ের ক্ষেত্রেও তো এমনই ঘটেছিল। অভিনন্দনের আসার খবর শুনে মনে হচ্ছিল, বেশ হতো, অভিনন্দন যে পথ দিয়ে ফিরে আসছে, আমার ভাইটাও যদি একই রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতে পারত!

তবে স্পষ্ট বলছি, আমি যুদ্ধ চাই না। শুধু নাশকতা ধ্বংস হোক, সর্বান্তকরণে এ প্রার্থনা করি।

(অনুলিখন: চৈতালি বিশ্বাস)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE