জ্বলছে ট্রেন! ছবি— পিটিআই।
ভারতীয় সেনার সশস্ত্র বাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধিতায় দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিক্ষোভ। কোথাও উপমুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে আছড়ে পড়ছে উন্মত্ত নিয়োগপ্রার্থীদের ক্ষোভ, কোথাও আবার তরুণদের বিক্ষোভ সামলাতে গুলি চালাতে হচ্ছে নিরাপত্তারক্ষীদের। তাতে ঝরছে তাজা প্রাণ। তবে বিক্ষোভের জেরে অন্যান্য সময়ের মতো এ বারও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ। বলা ভাল, রেলপথই যেন হয়ে উঠেছে অগ্নিপথ!
বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, তেলঙ্গানা-সহ দেশের ১২টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে অগ্নিপথের আঁচ। দাউদাউ করে জ্বলছে ট্রেন। রাস্তায় ইট-পাথরের ছড়াছড়ি। বিপর্যস্ত জনজীবন। শতচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিহারের পশ্চিম চম্পারণ জেলার বেতিয়ায় রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী রেণু দেবীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়। ঘটনার সময় রেণু পটনায় ছিলেন। বিহার বিজেপির সভাপতি এবং পশ্চিম চম্পারণের বিজেপি সাংসদ সঞ্জয় জাওয়ালের বাড়িতেও দুষ্কৃতী হামলা হয়েছে। সমস্তিপুর, লক্ষ্মীসরাই এবং আরা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। লাখমিনিয়া স্টেশনে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। গুজব ছড়িয়ে পড়া রুখতে বিহারের ১২টি জেলায় ইন্টারনেট সংযোগ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।
তেলঙ্গানার সেকেন্দরাবাদ স্টেশনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ১৯ বছরের এক তরুণের। তাঁর বাড়ি ওয়ারাঙ্গেলে বলে জানা গিয়েছে। একই ঘটনায় ১৫ জন বিক্ষোভকারী ঘায়েলও হয়েছেন। বিক্ষোভকারী তরুণদের অভিযোগ, পুলিশ মোট ১৭ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলায় সকাল থেকেই বিভিন্ন স্টেশনে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন নিয়োগ প্রত্যাশী তরুণরা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তা হিংসাত্মক রূপ নেয়। জ্বলে ওঠে আগুন। পুড়ে ছারখার হয় একাধিক ট্রেন। বেশির ভাগ জায়গাতেই পুলিশ ও আরপিএফের সঙ্গেও সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। চলে তুমুল পাথরবৃষ্টি। বারাণসী, ফিরোজাবাদ এবং অমেঠীতে সরকারি বাসে ভাঙচুর করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আলিগড়ে এক বিজেপি নেতার গাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। পরে আলিগড় থানাতেও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
হরিয়ানায় বিক্ষোভ সামাল দিতে হিসার, নারনাউল, গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবাও।
সেনায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রকল্প অগ্নিপথের বিরোধিতায় বিক্ষোভের আঁচ এসে পড়েছে বাংলাতেও। শুক্রবার সকালে হাওড়া ব্রিজে অভিনব উপায়ে বিক্ষোভ দেখান তরুণরা। তাঁরা আচমকাই ব্রিজের উপর শারীরিক কসরত করতে শুরু করেন। এর ফলে আটকে যায় যানবাহন। পরে পুলিশ তাঁদের তুলে দেয়। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে শতাধিক তরুণ বিক্ষোভ দেখান। উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে ২ ঘণ্টা ট্রেন অবরোধ করা হয়। পুরুলিয়াতেও হয় বিক্ষোভ।
নিয়োগ নিয়ে ক্ষোভের আঁচ পৌঁছেছে রাজধানী দিল্লিতেও। ওয়াজিরাবাদে পথ অবরোধকে কেন্দ্র করে গোলমাল শুরু হয়। কয়েকটি বাসে ভাঙচুর হয়। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি আপাতত শান্ত। তবে পাশ্ববর্তী রাজ্য হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশে বিক্ষোভের আঁচে যে কোনও সময় আগুন জ্বলে উঠতে পারে রাজধানীতে। প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।
এখনও পর্যন্ত যা খবর, দেশ জুড়ে অন্তত ১২টি ট্রেনে আগুন জ্বালানো হয়েছে। ৩০০টি ট্রেনের যাত্রাপথ প্রভাবিত হয়েছে। ২১৪টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ১১টি ট্রেন ঘুরপথে চালানো হয়েছে এবং অন্তত ৯০টি ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলেও তা পৌঁছতে পারেনি। মাঝ পথেই থমকে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই আবহে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব শান্তিরক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি দেশের যুবসম্প্রদায়ের কাছে আবেদন করতে চাই, হিংসাত্মক প্রতিবাদ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে রেলের সম্পত্তি ধ্বংস করবেন না। রেল আমাদের দেশের সম্পত্তি।’’
অশান্তির আশঙ্কায় বাতিল করা হয়েছে হাওড়া-রাঁচি শতাব্দী এক্সপ্রেস, হাওড়া-ধানবাদ ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেস, হাওড়া-নয়াদিল্লি পূর্বা এক্সপ্রেস, হাওড়া-দ্বারভাঙ্গা এক্সপ্রেস এবং হাওড়া-জয়নগর এক্সপ্রেস।
এ বিষয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিংহ মান। তিনি বলেন, ‘‘এটা সেনার অপমান। দেশের যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে ছলচাতুরি করছে সরকার। অবিলম্বে এই প্রকল্প বাতিল করা হোক।’’ কেন্দ্রের কাছে প্রকল্প পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন তেলঙ্গানার তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী কেটি রামা রাও। এনডিএ সরকার এক তরফা ভাবে এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও অভিযোগ তাঁর।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy