রাজীব গাঁধীর ৭০তম জন্মদিনে সংসদের এক অনুষ্ঠানে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এবং বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। বুধবার। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সমর্থকরাই আজকাল আর রাহুল গাঁধীর কথা শুনতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে আক্রমণ ও দলের প্রচারের রাশ তাই নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন সনিয়া গাঁধী।
ক’দিন আগে কেরলে দলের এক অধিবেশনে সাম্প্রদায়িক হিংসা বেড়ে যাওয়া ও মেরুকরণের রাজনীতি নিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। আজ দিল্লিতে মহিলা কংগ্রেসের সংকল্প অধিবেশনে ফের বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “কিছু লোক এমন জাল বিছিয়েছে যে মানুষ তাতে ফেঁসে গিয়েছেন। কেন্দ্রে ইউপিএ সরকার এত কর্মসূচি রূপায়ণ করেছে, অথচ সে সব কাজ এক দিকে পড়ে থেকেছে, আর এক জন মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন।”
স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী যে সব ঘোষণা করেছেন, সেগুলির প্রতিটি ধরে ধরে আজ সরকারকে বেঁধেন সনিয়া। তাঁর কথায়, “অন্যের কাজকে নিজেদের বলে চালিয়ে মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন ওঁরা।” ১৫ অগস্টের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন দেশ জুড়ে স্বচ্ছতা অভিযান ও গ্রামে শৌচাগার তৈরির উপরে। সেই প্রসঙ্গে এ দিন সনিয়ার প্রশ্ন, “নির্মল গ্রাম অভিযান কারা শুরু করেছিল? ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের আওতায় কোন সরকার গ্রামে শৌচাগার নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল? গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় ‘আশা’ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াই বা কখন শুরু হয়?”
রাহুল ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও মোদী সরকার নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। তিনি বলেছেন সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে। কংগ্রেসের এক শীর্ষনেতার কথায়, “মা-ছেলে বুঝতে পারছেন, ভোটে ভরাডুবির পরে রাহুল এখন সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলে তা খুব একটা গুরুত্ব পাবে না। কিন্তু সনিয়ার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এখনও। তাই তাঁরা এই কৌশল বেছে নিয়েছেন।
কংগ্রেস সূত্র বলছে, সনিয়া বুঝতে পারছেন, দলকে চরম হতাশা থেকে বের করে আনতে হলে তাঁকেই হাল ধরতে হবে ফের। এবং আজ সেটাই করেছেন তিনি। দলের কর্মীদের মনোবল ফেরাতে এ দিন সনিয়া বলেন, “দলের কর্মী-সমর্থকদের একটু বেশি পরিশ্রম করতে হবে। হয়তো এখন বেশ কিছু দিন লড়াই চালাতে হবে। কিন্তু কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াবেই।”
কিন্তু সনিয়া যতই ভোকাল টনিক দিন, দলের ছন্নছাড়া অবস্থা কাটাতে সংগঠনে রদবদলও জরুরি। আর সাংগঠনিক বিষয়ের রাশ যে নিজের হাতেই রয়েছে, রাহুল তা বোঝানোর চেষ্টা করেন এ দিন। মহিলা কংগ্রেসের অধিবেশনে তিনি ঘোষণা করেছেন, সংগঠনে ‘মহিলা সুনামি’ আনতে চান তিনি। তাঁর কথায়, “শুধু সংরক্ষিত আসনে নয়, আগামী দিনে সাধারণ আসনেও মহিলা প্রার্থী দেওয়া হবে।” রাহুল-ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, সংগঠনে অন্তত ৫০ শতাংশ পদে মহিলাদের দায়িত্ব দিতে চান রাহুল। দলের জগদ্দল কিছু ব্যবস্থা ও বৃদ্ধতন্ত্র ছেঁটে সংগঠনকে নতুন চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করবেন দলের সহসভাপতি।
কবে? রাহুলের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, অক্টোবরে মহারাষ্ট্রে ভোট। তার পরে এ কাজে হাত দেবেন রাহুল। মোদী-ঝড় ও প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার মুখে মহারাষ্ট্রেও কংগ্রেসের ভরাডুবির আশঙ্কা যথেষ্ট। মহারাষ্ট্রের ভোটেও ধাক্কা খেলে, তার পরে রাহুলের দাওয়াই কতটা কাজে আসবে? এ নিয়ে দলের কর্মীরাই ধন্ধে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy