Advertisement
১৮ মে ২০২৪
sonia gandhi

নাগরিক ঐক্য চেয়ে কলম ধরলেন সনিয়া

মোদী সরকার নানা ভাবে সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের গেরুয়া রাজনীতিকে দেশের জনতার উপরে ‘চাপিয়ে দিতে চাইছে’ বলে একাধিক বার অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবির।

Sonia Gandhi and Narendra Modi.

এক ফ্রেমে: সংসদ ভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী। শুক্রবার। পিটিআই

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৪২
Share: Save:

সংবিধান প্রণেতা বিআর অম্বেডকরের জন্মজয়ন্তীতে কেন্দ্রের শাসক দলকে কড়া ভাষায় নিশানা করতে কলম হাতে নিলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী তথা কংগ্রেস সংসদীয় দলের প্রধান সনিয়া গান্ধী। ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক দীর্ঘ নিবন্ধে কেন্দ্রের মোদী সরকারের একাধিক নীতি এবং কর্মসূচিকে নিশানা করে সনিয়া লেখেন, ‘যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ধর্ম, ভাষা, জাতি, লিঙ্গের ভেদাভেদের মাধ্যমে দেশবাসীকে একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিতে চাইছে, তারাই ‘প্রকৃত দেশদ্রোহী’।’ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দেশের সংবিধানের উপর লাগাতার হামলা করছে বলে অভিযোগ তুলে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী দেশবাসীকে একজোট হয়ে তা প্রতিরোধ করার ডাকও দিয়েছেন। তাঁর মতে, নাগরিক ঐক্যই এই পরিস্থিতি বদলাতে পারে।

মোদী সরকার নানা ভাবে সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের গেরুয়া রাজনীতিকে দেশের জনতার উপরে ‘চাপিয়ে দিতে চাইছে’ বলে একাধিক বার অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবির। সেই সুরেই সনিয়া ওই নিবন্ধে বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে লেখেন, ‘আজ ক্ষমতায় থাকা শাসকগোষ্ঠী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির অপব্যবহার ও সেগুলিকে ধ্বংস করছে এবং সেগুলির স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে।’ তাঁর কথায়, ‘বর্তমান শাসকপক্ষ আইনের অপব্যবহার করে মানুষের অধিকার রক্ষার পরিবর্তে তাঁদের হেনস্থা করছে। হুমকির মুখে ব্যক্তি স্বাধীনতা।’ এই প্রেক্ষিতেই কংগ্রেস নেত্রী বলেছেন, ‘আমাদের বাবাসাহেবের সেই সতর্কবার্তা মনে রাখতে হবে যে, দেশের শাসনভার কাদের হাতে রয়েছে, তার উপরেই সংবিধানের সাফল্য নির্ভর করে।’

বিজেপি দেশে ঘৃণার রাজনীতি চালু করতে চাইছে বলে একাধিক বার সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। পাশাপাশি বিচারবিভাগের উপরেও যে তারা প্রভাব বিস্তার করতে মরিয়া, সে অভিযোগও উঠেছে। দু’টি প্রসঙ্গই নিজের নিবন্ধে টেনে সনিয়া লিখেছেন, ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে দেশে ঘৃণার পরিবেশ তৈরি করে মেরুকরণের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধ নষ্ট করা হচ্ছে। বিচারবিভাগকে লাগাতার নিশানা করে চলেছে বর্তমান শাসক গোষ্ঠী।’ এই পরিস্থিতিতে নাগরিক ঐক্য জোরদার করার ডাক দিয়ে কংগ্রেস নেত্রী বলেছেন, ‘এই পরিস্থিতিতে নাগরিক কর্তব্য হল, জোরালো ভাবে বিতর্ক এবং দ্বিমত পোষণ করা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাতির স্বার্থে এক সঙ্গে কাজ করাই সময়ের দাবি।’

কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির অভিযোছগ, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে কোনও যোগদান না থাকা সঙ্ঘ পরিবার নিজেদের দেশপ্রেমিক হিসেবে প্রচার করছে। পাশাপাশি স্বাধীনতা আন্দোলনের একাধিক মুখকে নিজেদের দিকে টানতেও সক্রিয় তারা। কংগ্রেসের যে সব প্রথম সারির নেতৃত্ব স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, তাঁদের ভূমিকাও নিজেদের মতো করে তুলে ধরতে চাইছে সঙ্ঘ পরিবার এবং বিজেপি। স্বাধীনতা আন্দোলনে নেহরু-গান্ধীর ভূমিকা খর্ব করে দেখানোর চেষ্টার পাশাপাশি দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই পটেলকে নিজেদের ‘আইকন’ হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছে গেরুয়া শিবির। একই ভাবে দলিত ভোটের লক্ষ্যে বাবাসাহেব অম্বেডকরকেও তুলে ধরে প্রচারে নেমেছে সঙ্ঘ পরিবার। এই বিষয়গুলিকে মাথায় রেখে সনিয়া তাঁর লেখায় স্বাধীনতা আন্দোলনে গান্ধী, নেহেরু, অম্বেডকর, পটেলের নানা বিষয়ে তীব্র মতবিরোধের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘দেশের ভবিষ্যতের জন্যই সে সব জরুরি ছিল। বিতর্ক করেও তাঁরা লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন।’

মোদী জমানায় প্রতিনিয়ত সংবিধানকে নানা ভাবে লঘু করার চেষ্টার অভিযোগ তুলে দেশ জুড়ে নাগরিক ঐক্য গড়ার ডাক দিয়ে সনিয়া লিখেছেন, ‘রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি, নাগরিক সমাজ— প্রত্যেককে এই সময় ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই ঐক্য গড়ার পাথেয় হোক অম্বেডকরের কথা।’

নিজের লেখায় কংগ্রেসের আর্থিক সংস্কার এবং একাধিক নীতির উল্লেখ করার পাশাপাশি মোদী জমানায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির নির্বিচার বিলগ্নিকরণ নিয়ে সরব হয়েছেন সনিয়া। তিনি লিখেছেন, ‘দেশবাসীর কল্যাণে কংগ্রেস সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলি আজ চ্যালেঞ্জের মুখে। ১৯৯১ সালে কংগ্রেস সরকারের গৃহীত অর্থনৈতিক সংস্কার মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি এনেছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময়ে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েই চলেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে নির্বিচারে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, যা দলিত, আদিবাসী এবং ওবিসিদের নিরাপত্তা এবং সামাজিক গতি প্রদান করেছিল।’ সনিয়া-পুত্র রাহুল সরাসরি অম্বানী-আদানির মতো শিল্পপতিদের নাম করে মোদীকে প্রতিনিয়ত নিশানা করেন। সনিয়া অবশ্য তা করেননি। তবে ছেলের অভিযোগ সুরেই তিনি লিখেছেন, ‘এই সরকার নিজেদের বন্ধু শিল্পপতিদের প্রতি সদয়। ফলে দেশবাসী আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’

তবে আশার সুর শুনিয়েই লেখা শেষ করছেন সনিয়া গান্ধী। তাঁর কথায়, ‘শাসকের অপচেষ্টা সত্ত্বেও ভারতীয়দের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ গভীর ভাবে বজায় রয়েছে। ধর্মীয় বিভাজনের বিরুদ্ধে কোটি কোটি দেশবাসী প্রতিবাদ করছেন।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sonia gandhi Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE