নরেন্দ্র মোদী বনাম রাহুল গাঁধী। একেবারে মুখোমুখি!
সোমবার বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু। তার চব্বিশ ঘণ্টা আগে রাজধানী সাক্ষী থাকল সরকার ও বিরোধী পক্ষের দুই নেতার এই বিরল রাজনৈতিক দ্বৈরথের।
রামলীলা ময়দানে দু’মাস ছুটি কাটিয়ে ফেরা রাহুলের ‘কৃষক-দরদি’ জনসভা পূর্বঘোষিত ছিল। কিন্তু তাকে টক্কর দিতেই বিজেপি সাংসদদের কর্মশালার কর্মসূচিতে পরিবর্তন করে তড়িঘড়ি মোদীকে আগে বক্তৃতার সুযোগ করে দেওয়া হল আজ। ঠিক ছিল তিন দিনের এই অনুষ্ঠান শেষ হবে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। তার বদলে সংবাদ মাধ্যমকে জরুরি তলব করে মোদীর বক্তৃতা দিয়েই এ দিন শুরু করা হল কর্মশালা।
আসলে আক্রমণকেই আত্মরক্ষার পন্থা হিসেবে বেছে নিলেন মোদী। কানাডা থেকে ফেরার আগেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করে ফেলেছিলেন, রাহুল বৈদ্যুতিন চ্যানেলের সর্বভারতীয় পরিসর দখল করার আগেই প্রধানমন্ত্রী আসরে নেমে নিজেই ঘোষণা করবেন— ‘‘হে কৃষক, হে দরিদ্র, আমি তোমাদেরই লোক!’’
চিত্রনাট্য নিয়ে কোনও গোলমাল নেই। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, জমি বিল নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা তৈরি হচ্ছে— কেন্দ্রে মোদীর সরকার ধনীদের সরকার, গরিব-বিরোধী, কৃষক-বিরোধী সরকার। সংসদে আগের অধিবেশনের প্রথম দিকটায় একটা ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাব নিয়েছিল মোদী সরকার। কিন্তু ক্রমশ দেখা গেল জমি বিল নিয়ে সরকারের ‘সদিচ্ছা’ আমজনতাকে বোঝাতে যথেষ্ঠ বেগ পেতে হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি স্তিমিত হয়ে এসেছে মোদী-ঝড়? আম জনতার ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন কি দুঃস্বপ্নে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে?
নরেন্দ্র মোদী মনে করেন, জমি বিল মানুষের স্বার্থে। তাই প্রয়োজনে যৌথ অধিবেশন করেও সেই বিল পাশ করানোর কথা বলেছিল সরকার। কিন্তু যত দিন গড়াচ্ছে ততই সরকার রাজনৈতিক ঐকমত্যের পথে হাঁটতে চাইছে। টিম রাহুল মনে করছে মোদীর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এক বছরেই দুর্বল হচ্ছে। মানুষের অসন্তোষ বাড়ছে। প্রশাসনিক কর্মক্ষমতার নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে অতিকেন্দ্রিকতা। তাই সরকারের এই পিছু হটা।
ঠিক এই রকম একটা পরিস্থিতিতে যখন সরকারের বর্ষপূর্তি আসন্ন, ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। এই অসন্তোষের ধারণা মহামারীর আকার ধারণ করার আগেই আরও বেশি সরব হয়ে, কিছুটা নিজের ঢাক নিজে পিটিয়ে জমি বিলের যৌক্তিকতা প্রচারের কৌশল নিলেন তিনি। রতন টাটার মত শিল্পপতি বলছেন— মোদীর উপর এখনই আস্থা হারাবেন না। কিন্তু প্রতিপক্ষ বলছেন, টাটার মন্তব্যই প্রমাণ দিচ্ছে এ দেশে মোদী সরকার যে এক বছরে ‘আচ্ছে দিন’ আনতে ব্যর্থ হয়েছে— জনমানসে এই ধারণাও তৈরি হয়েছে।
সবে মাত্র এক বছর হয়েছে নতুন সরকারের। জনতা পরিবার একত্রিত হচ্ছে। বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন করে বাম, জনতা পরিবার ও বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের জোট গঠনের একটা সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। নভেম্বর মাসে বিহারের নির্বাচন আসছে। এই পরিস্থিতিতে মোদী সরকার তথা বিজেপি নেতৃত্ব হয়তো কংগ্রেস সম্পর্কে আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে। এমনকী বিজেপি মুখপাত্র রবিশঙ্কর আজ যে ভাবে রবার্ট বঢরাকে আক্রমণ করেছেন, তাতে আরও বড় আশঙ্কা করছেন কংগ্রেস নেতারা। সে আশঙ্কা হল, অদূর ভবিষ্যতে হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিংহ হুডার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার জন্য ‘বেপরোয়া’ জমি অধিগ্রহণ এবং তার সঙ্গে রবার্ট বডরার সম্পর্ক নিয়ে আরও ‘তথ্য’ প্রকাশ করে সংসদ অধিবেশনের সময় হাঙ্গামা বাধিয়ে দিতে পারে বিজেপি।
সামনে নির্বাচন নেই। কিন্তু মোদী এবং রাহুল দু’জনেই নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা এবং কর্ত্বত্বকে অটুট রাখার জন্য আজ শুরু করে দিলেন এক নতুন রাজনৈতিক কুস্তি। যত সময় গড়াবে, ততই আকর্ষক হয়ে উঠতে পারে তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy