জ্বলছে মোটরবাইক। মঙ্গলবার আগরতলার রাস্তায়। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।
মুহূর্তে পাল্টে গেল শান্ত আগরতলা শহরের ছবিটা। আলাদা ‘তুইপ্রাল্যান্ড’-এর দাবিদার, উপজাতি সংগঠন আইপিএফটি-র মিছিল থেকে উত্তেজনা। শেষ পর্যন্ত তা জনজাতি-সংঘর্ষের রূপ নিল। প্রথম দিকে পুলিশ নির্বাক দর্শকের ভূমিকা নিয়েছিল। পরে পরিস্থিতি সামলাতে লাঠি ছাড়া শূন্যে গুলিও চালায়। জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।
আজ, ২৩ অগস্ট ষষ্ঠ তফসিল দিবস। এই দিনেই ত্রিপুরার এডিসি গঠনের বিল লোকসভায় অনুমোদিত হয়। গত কয়েক বছর ধরে আইপিএফটি এই দিন শহরে মিছিল ও সভা করে। আজ দুপুরে সভাপতি এন সি দেববর্মার নেতৃত্বে আইপিএফটি-র সমর্থকদের মিছিল শহর পরিক্রমা শুরু করে। সেখান থেকে তাদের আস্তাবল ময়দানের সভাস্থলে যাওয়ার কথা। সেই মিছিল হঠাৎই মারমুখী হয়ে ওঠে। ওরিয়েন্ট চৌমুহনি, কর্ণেল চৌমুহনি, মঠ চৌমুহনি, লক্ষ্মীনারায়ণ বাড়ি-সহ শহরের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বাইক, স্কুটার, মোটরগাড়ি, এমনকী সংবাদমাধ্যমের গাড়িও ভাঙচুর করতে করতে মিছিল এগোতে থাকে। পুলিশের সামনেই আইপিএফটি সমর্থকরা লাঠি, লোহার রড দিয়ে দোকানপাট, শো-রুমের কাচ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।
পথচলতি মানুষকেও আক্রমণ করে তারা। বাদ যাননি মহিলারাও। পুলিশের সামনেই এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে রাস্তায় ফেলে লাথি মারতে দেখা যায়। শকুন্তলা রোডে এক রিকশচালককে লাঠিপেটা করে এক যুবক। পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেও ফল হয়নি। রাজ্য পুলিশের এই ভূমিকায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ জমতে শুরু করে।
ইট-পাটকেল ছুড়তে ছুড়তে এগোয় মিছিল। পুলিশও এগিয়ে যায় আস্তাবল ময়দানের দিকে। ইতিমধ্যে উত্তেজিত হয়ে ওঠে স্থানীয় বাসিন্দারা। ওরিয়েন্ট চৌমুহনি ও সূর্য চৌমুহনিতে পুলিশের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ শুরু হয়। ওরিয়েন্ট চৌমুহনিতে পুলিশের জিপে আগুন দেওয়া হয়। জনতা ওরিয়েন্ট চৌমুহনিতে চার উপজাতি যুবককে আটকে রাখে। পুলিশ তাদের জিপে তুলে সরিয়ে নিয়ে যায়। এতে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। স্থানীয় যুবকরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আস্তাবল ময়দানের দিকে রওনা হলে পুলিশ তাদের আটকায়।
তত ক্ষণে রাজ্য পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। রাজ্য পুলিশের ডিজি কে নাগরাজও হাজির হন। আক্রান্ত জনতার তরফে ডিজি-র কাছে জানতে চাওয়া হয়, পুলিশ কেন আইপিএফটির কর্মী-সমর্থকদের তাণ্ডবকে প্রশ্রয় দিল? তাদের কেন পুলিশ গ্রেফতার করছে না? ডিজি আশ্বাস দেন, ‘‘পরিস্থিতি শান্ত হতে দিন। তার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ বাঙালি-উপজাতি সম্প্রীতি নষ্টে যারা ইন্ধন জোগাচ্ছে, তাদের গ্রেফতারের দাবিও উঠেছে শহরের বিভিন্ন অংশের পাল্টা জমায়েত থেকে।
আস্তাবল ময়দানের জনসভাকে কেন্দ্র করে সংলগ্ন অঞ্চলেও গোলমাল ছড়ায়। ডিম সাগরের পাড়ে তিন উপজাতি যুবককে বেদম মারধর করে স্থানীয়রা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে পুলিশ লাঠি চালায়। বেসরকারি সূত্রের খবর, উপজাতি মিছিল থেকে ছড়িয়ে যাওয়া অশান্তি থেকে এখন পর্যন্ত ৩৯ জন জখম হয়েছেন। এই সংখ্যা বাড়তে পারে। মুখ্যসচিব যশপাল সিংহ জানান, ‘‘শহরে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। কিছু মানুষ জখম হলেও মৃত্যুর খবর নেই।’’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে টিএসআর, অসম রাইফেলস, বিএসএফ টহল দিচ্ছে।
এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। সিপিএমের মুখপাত্র গৌতম দাশ আজকের অশান্তির পিছনে ‘পূর্ব পরিকল্পনা’ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘শান্তি বিঘ্নিত করতে আইপিএফটি-র সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি।’’ সিপিএমের বক্তব্যে ক্ষিপ্ত তৃণমূল নেতৃত্ব এই ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মানিক সরকারের ইস্তফার দাবি জানিয়েছেন। কংগ্রেসও আজকের ঘটনায় প্রশাসনকেই কাঠগড়ায় তুলেছে। বিজেপি সভাপতি বিপ্লব দেবের আঙুলও প্রশাসনের দিকে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘অশান্তির আগুন লাগাতে শাসক দলের ইন্ধন ছিল আজ।’’ তবে সব পক্ষই এ দিন সম্প্রীতি রক্ষার আবেদন করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy