২৪ বছর আগের সেই আরডিএক্স আতঙ্ক। বিস্ফোরণ গাড়িবোমায়। —ফাইল চিত্র।
প্রায় ২৪ বছর ৩ মাস আগের একটা তারিখ— ১২ মার্চ, ১৯৯৩। ভারতের মাটিতে ভয়ঙ্করতম জঙ্গি নাশকতার ঘটনাটি ঘটেছিল। মৃত্যু আর্তনাদ আর আতঙ্কে কেঁপে উঠেছিল গোটা মুম্বই। সরকারি হিসেবে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ২৫৭ জনের, জখম হয়েছিলেন ৭০০র বেশি। মতান্তরে, মৃতের সংখ্যা ৩০০-র কিছু বেশি, জখম ১৪০০।
মুম্বইতে সে দিন ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট ধরে মৃত্যুর উল্লাস চলেছিল। ১৩টি জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল জঙ্গিরা। হামলার ২৪ বছর পর বিশেষ টাডা আদালত যখন দোষী সাব্যস্ত করল সেই হামলার আরও কিছু অভিযুক্তকে, তখন অনেকের চোখেই ভেসে উঠছে সেই ভয়ঙ্কর দিনটার স্মৃতি।
কী হয়েছিল ১৯৯৩-এর ১২ মার্চ? দেখে নেওয়া যাক এক ঝলকে:
যেখানে যেখানে বিস্ফোরণ।
দুপুর ১টা ৩০: মুম্বই স্টক এক্সচেঞ্জের বেসমেন্টে প্রথম গাড়িবোমাটিতে বিস্ফোরণ ঘটল। ২৮তলা বাড়িটি এবং তার আশপাশের কাঠামোগুলি ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত হল। মৃত্যু অন্তত ৫০ জনের।
দুপুর ২টো: ফের গাড়িবোমা বিস্ফোরণ। এ বার দক্ষিণ মুম্বইয়ের মাণ্ডবীতে কর্পোরেশন ব্যাঙ্কের শাখায় ঘটল বিস্ফোরণ।
পরবর্তী ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট: একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠতে থাকল মুম্বইয়ের নানা প্রান্ত। কোথায় কোথায় হল বিস্ফোরণ:
• ফিশারম্যানস কলোনি, মাহিম কজওয়ে
• জাভেরি বাজার
• প্লাজা সিনেমা
• সেঞ্চুরি বাজার
• কাঠা বাজার
• হোটেল সি রক
• এয়ার ইন্ডিয়া বিল্ডিং
• হোটেল জুহু সেন্টুর
• ওয়র্লি
• পাসপোর্ট অফিস
অধিকাংশ এলাকাতেই বিস্ফোরণ ঘটল গাড়িবোমায়। কয়েকটি জায়গায় স্কুটার বোমা ব্যবহৃত হল। হোটেলগুলিতে স্যুটকেস বোমা রেখে এসেছিল অতিথির ছদ্মবেশে ঘর ভাড়া নেওয়া জঙ্গিরা।
হামলা হল সহার এয়ারপোর্টের টার্মিনালেও। সেখানে গ্রেনেড হামলা চালাল সন্ত্রাসবাদীরা।
দুপুর ৩টে ৪০ নাগাদ শেষ বিস্ফোরণটি ঘটে। হাহাকার আর আর্তনাদ গোটা মুম্বই জুড়ে। বিস্ফোরণ ঘটে গিয়েছে ১৩টি স্থানে। বিপুল সংখ্যক মৃত্যু আর বেনজির ধ্বংসলীলায় হতচকিত গোটা মু্ম্বই। হতচকিত গোটা দেশ। দাবানলের চেয়েও দ্রুত বেগে ছড়াচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গুজব। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী কার্যত বিধ্বস্ত।
বেনজির হামলায় বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল গোটা মুম্বই। এত বড় জঙ্গি হামলা ভারতে আর কখনও হয়নি। —ফাইল চিত্র।
কারা চালাল এমন ভয়ঙ্কর হামলা?
উঠে এল দাউদ ইব্রাহিমের নাম। মুম্বই থেকে পালিয়ে পাকিস্তানে ঘাঁটি গাড়া আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ এবং পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এই ভয়ঙ্কর নাশকতার ছক তৈরি করেছিল বলে জানা গেল। দাউদের মূল সহযোগী হিসেবে উঠে এল টাইগার মেমনের নাম।
মুম্বইতে নাশকতা চালানোর জন্য ১৯ জন যুবককে বেছে নিয়েছিল টাইগার মেমন। তাদেরকে সে দুবাই ঘুরিয়ে পাকিস্তান পাঠায়। পাকিস্তানে অস্ত্রশস্ত্র এবং বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা মুম্বইতে ফেরে।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী ২৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল মু্ম্বইয়ের এই হামলায়। কিন্তু বেসরকারি হিসেব অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছিল, জখম হয়েছিলেন ১৪০০। —ফাইল চিত্র।
শিব জয়ন্তী উদযাপনের দিন হামলা চালানোর ছক কষেছিল জঙ্গিরা। কিন্তু যে ১৯ জন পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুম্বই ফিরেছিল, তাদের মধ্যে গুল নুর মহম্মদ শেখ নামে এক জন ৯ মার্চ, ১৯৯৩ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায়। নাশকতার ছক ফাঁস হয়ে যাবে বুঝতে পেরে আর দেরি করেনি সন্ত্রাসবাদীরা। ১২ মার্চই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেওয়া হয় মুম্বইতে।
মুম্বই বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত দাউদ ইব্রাহিম এখনও পাকিস্তানে। টাইগার মেমনও পাকিস্তানে বলেই খবর। টাইগারের ভাই ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি হয়ে গিয়েছে ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই। মেমন পরিবারে আরও তিন সদস্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে।
আরও পড়ুন: ১৯৯৩ মুম্বই বিস্ফোরণ: টাডা কোর্টে দোষী সাব্যস্ত আবু সালেম-সহ ছয়
১৯৯৩-এর সেই বিস্ফোরণের সময় দাউদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল আবু সালেম। নাশকতার ষড়যন্ত্রে সেও সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিল। গ্রেফতারি এড়াতে সে প্রথমে মধ্য এশিয়ায় আশ্রয় নেয়। পরে চলে যায় পর্তুগালে।
পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকেই পরে আবু সালেমকে থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ বার তাকে দোষী সাব্যস্ত করল বিশেষ টাডা আদালত। আবু সালেমের সঙ্গে দোষী সাব্যস্ত হল মুস্তফা দোসা, ফিরোজ খান, তাহের মার্চেন্ট, রিয়াজ সিদ্দিকি এবং করিমুল্লা খানও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy