Advertisement
১৯ মে ২০২৪

নাগরিকত্ব নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে বিতর্ক

নাগরিকত্ব নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত ঘিরে চর্চা চলছে দক্ষিণ অসমে। অধিকাংশের গলায় ক্ষোভের সুর। অভিযোগ করছেন, প্রতিশ্রুতি দিয়েও এই অঞ্চলের বাঙালিদের নিয়ে দায়সারা মনোভাব দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৩
Share: Save:

নাগরিকত্ব নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত ঘিরে চর্চা চলছে দক্ষিণ অসমে। অধিকাংশের গলায় ক্ষোভের সুর। অভিযোগ করছেন, প্রতিশ্রুতি দিয়েও এই অঞ্চলের বাঙালিদের নিয়ে দায়সারা মনোভাব দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গেরুয়াবাহিনী অবশ্য জটিলতর সমস্যার সমাধানে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে বলছেন। তাঁদের দাবি, নরেন্দ্র মোদী শরণার্থীদের পাকাপোক্ত ভাবে নাগরিকত্ব দিতে চাইছেন বলেই সময় লাগছে।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে নির্যাতিত হয়ে যাঁরা দীর্ঘমেয়াদী ভিসা নিয়ে ভারতে বসবাস করছেন, ১৩ জুলাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৭ রাজ্যের ১৬ জেলায় তাঁরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। সাধারণত, বিভিন্ন বিভাগের নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য ৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি লাগে। সে দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এ ক্ষেত্রে শুধু ১০০ টাকা করে আদায় করা হবে। তবে নাগরিকত্ব প্রদানের প্রক্রিয়া চলাকালীন যেন কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্যও একগুচ্ছ সুবিধার কথা ঘোষণা করে মোদী সরকার। তার মধ্যে রয়েছে— ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, বসবাস বা স্বনিয়োজন প্রকল্পের জন্য সম্পত্তি কেনা, ড্রাইভিং লাইসেন্স, প্যান কার্ড, আধার নম্বর সংগ্রহে তাঁদের অসুবিধা হবে না। যে রাজ্যে রয়েছেন তাঁরা, সেখানে নির্বিবাদে ঘোরাফেরা করতে পারবেন। অন্য রাজ্যের জন্যও সেই ভিসা পরিবর্তিত হতে পারে। নির্ধারিত সময়ে ভিসার মেয়াদ না বাড়ানোর জন্য যে জরিমানা করা হয়, তা থেকেও ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিনা অনুমতিতে ভিসায় উল্লিখিত ঠিকানা ছেড়ে অন্যত্র বসবাসের জন্যও তাঁদের রেহাই মিলবে।

যে ১৬ জেলায় তাঁরা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন, সে গুলি হল ছত্তীসগঢ়ের রায়পুর, গুজরাতের আহমেদাবাদ, গাঁধীনগর ও কচ্ছ, মধ্যপ্রদেশের ভোপাল ও ইনদওর, মহারাষ্ট্রের নাগপুর, মুম্বই, পুনে ও থানে, দিল্লির পশ্চিম দিল্লি ও দক্ষিণ দিল্লি জেলা, রাজস্থানের যোধপুর, জয়সলমীর ও জয়পুর এবং উত্তর প্রদেশের লখনউ।

এই নিয়েই যত বিতর্ক দক্ষিণ অসমে। একে তো যে ৭ রাজ্যের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে অসম, ত্রিপুরা বা পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখ নেই। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘকালীন ভিসা নিয়ে যাঁরা এসেছিলেন শুধু তাঁদেরই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে বলা হয়েছে। কিন্তু এই অঞ্চলে যাঁরা প্রাণভয়ে পালিয়ে এসেছেন, তাঁদের কারও পক্ষে পাসপোর্ট, ভিসা করে সীমান্ত পেরনো সম্ভব হয়নি। ফলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে উদ্বাস্তু বা ডি ভোটারদের বিন্দুমাত্র লাভ হয়নি। অথচ বিজেপি বারবার নির্যাতিত হয়ে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতির সভাপতি নৃপেন্দ্রচন্দ্র সাহা, প্রধান সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থ ও সাধারণ সম্পাদক বিধায়ক দাসপুরকায়স্থ বলেন— ‘‘বাঙালি হিন্দুরা দেশভাগের নামে বলির পাঠা হয়েছেন। আজও তাঁদের নানা রকমের ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে।’’ গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বরের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তির উল্লেখ করে তাঁরা জানতে চান, তাতে কার কী লাভ হয়েছে। তাই শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে তাঁরা কেন্দ্রকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানাতে বলেন। যাঁরা নির্যাতনের মুখে ভিসা করে ঢোকার সুযোগ পায়নি, তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তাঁর নিজের ও দলের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত করার অনুরোধ জানান।

ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার উত্তর-পূর্ব চাপ্টারের সভাপতি অরুণ দত্তমজুমদার বলেন, ‘‘বাঙালি হিন্দুদের বার বারই শোনানো হয়েছে নাগরিকত্ব নিয়ে আশার কথা। কিন্তু বাস্তবে তাঁদেরই বিপাকে ফেলা হচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে যাঁরা এ দেশে দশকের পর দশক ধরে বসবাস করছেন, তাঁদের সমস্যার সমাধান আইনি পথে হতে পারে না। রাজনৈতিক ভাবেই এর উপায় বের করা প্রয়োজন।’’ এ ক্ষেত্রে অসমের বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গা-ছাড়া মনোভাবের অভিযোগ আনেন তাঁরা।

বরাকভ্যালি হিউম্যান রাইটস প্রোটেকশন সোসাইটি অবশ্য সংসদের বাদল অধিবেশনের দিকে তাকিয়ে। সাধারণ সম্পাদক নীলাদ্রি রায় বলেন, ‘‘সরকার পক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সংসদে বিল এনে এই সমস্যার সমাধান করা হবে। তাই লক্ষ্য রাখছি, এই অধিবেশনে বিল আসে কি-না।’’

তবে নিখিল ভারত অধিবক্তা পরিষদের উত্তর-পূর্ব সম্পাদক শান্তনু নায়েকের দাবি, হিন্দু বাঙালি শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের লক্ষ্যে ধাপে ধাপে এগোচ্ছে কেন্দ্রের
বিজেপি সরকার। তাঁর আশা, এ বার দীর্ঘকালীন ভিসার সমস্যা মেটানো
হল। এর পরই হবে এই অঞ্চলের সমস্যা সমাধান।

সাধারণ মানুষ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেও রাজনৈতিক দলগুলি পুরোপুরি নীরব। যেমন প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস, তেমনি শাসক দল বিজেপি।

কংগ্রেস কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে প্রদেশ মুখপাত্র দীপন দেওয়ানজি বলেন, ‘‘সকল শরণার্থীকে নাগরিকত্ব প্রদানের ইচ্ছা থাকলে এক আইনকে সবাইকে আনার সুযোগ ছিল। হঠাৎ দীর্ঘমেয়াদী ভিসা যাঁদের রয়েছে, তাদের ৭ রাজ্যের ১৬ জেলায় আবেদনের কথা বলার প্রয়োজন ছিল না। তাই মোদী সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে সংশয় বাড়ছে।’’ বিজেপি রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায় প্রশ্নোত্তরে বলেন, ‘‘আমাদের এই অঞ্চলের সমস্যা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পর্কীত নয়। এখানে কেউ ভিসা নিয়ে আসেননি। ফলে তাঁদের নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।’’ সে জন্য কেন্দ্র প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

citizenship center
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE