Advertisement
১৮ মে ২০২৪
sheikh hasina

ভোট নিয়ে দিল্লির জবাবে ঢাকা খুশি, হতাশ বিএনপি

বৈঠকের পরে ভারতের বিদেশসচিব বিনয় কোয়াত্রা সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, নির্বাচনের বিষয়টি একান্ত ভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

Sheikh Hasina.

শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৪৭
Share: Save:

আমেরিকার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দিল্লি যে ভাবে ঢাকার পাশে দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশের শাসক দল আওয়ামী লীগ তাতে খুশি। দলের এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, “আমেরিকাকে যে ভাবে জবাব দিয়েছে ভারত, তার একটা প্রভাব এ বার ওয়াশিংটনের আচরণে পড়বে বলে আমরা মনে করি।”

আবার ভারতের এই অনড় অবস্থানে হতাশ বিএনপি এবং অন্য সরকার-বিরোধী দলগুলি। এই বৈঠকের আগে ভারতীয় কূটনীতিকদের কাছে নিজেদের বক্তব্য পৌঁছে দিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা দিল্লি সফর করেছিলেন। কিন্তু তাতে যে কাজ হয়নি, ভারতের বিদেশসচিবের সোজাসাপ্টা বক্তব্যই প্রমাণ। গ্রেফতার এড়াতে গা-ঢাকা দিয়ে থাকা বিএনপির এক নেতা ফোনে বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে এই আচরণ কাম্য ছিল না। অবৈধ সরকারের পাশে দাঁড়ানোয় তারা বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে আরও দূরে সরে যাবেন।”

বৈঠকের পরে ভারতের বিদেশসচিব বিনয় কোয়াত্রা সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, নির্বাচনের বিষয়টি একান্ত ভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমেরিকা যে ভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অতিসক্রিয়তা দেখাচ্ছে, নির্বাচনকে জড়িয়ে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, তাতে সে দেশে ভীতির আবহ সৃষ্টি হয়েছে, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থী। নতুন পরিস্থিতিতে ফের মৌলবাদী শক্তি বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করতে পারে। কোয়াত্রা বলেন, “বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে হোক, ভারতও চায়। কিন্তু সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে যে আমরা, সে কথা আমেরিকাকে জানানো হয়েছে।” বৈঠকের পরে আমেরিকার বিদেশ দফতর একটি লম্বা প্রেস বিবৃতি জারি করেছে। তাতে যে সব আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে ভারতের সঙ্গে কথা হয়েছে, তার সবিস্তার উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একটি কথাও বলা হয়নি আর।

আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্যের কথায়, “আমাদের আশা, বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী দেশ ভারতের এই মনোভাবকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে আমেরিকা। বাংলাদেশে আমেরিকার নাক গলানো বন্ধ না হলেও কমবে তাতে। প্রকৃত বন্ধুর মতো আবার পাশে দাঁড়াল দিল্লি।”

তবে সমাজমাধ্যমে ভারতের অবস্থানের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। অনেকের দাবি, আমেরিকার চাপে এ বার বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার আশা দেখা যাচ্ছিল। ভারতের কথা শুনে তারা হাল ছেড়ে দিলে ফের ‘বিরোধীদের জেলে পুরে ভোটচুরি করে নির্বাচনে’ জেতার চেষ্টা হবে। আবার এক দল বলছেন, আমেরিকা যে ভাবে ঘরোয়া রাজনীতিতে নাক গলিয়ে চলেছিল, তার জবাব দেওয়া দরকার ছিল। দিল্লি ঢাকার পাশে দাঁড়িয়ে সেই কাজটাই করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইস্তফা চেয়েবিএনপি নেতৃত্ব হরতাল-অবরোধ ডাকার পরে বহু জায়গায় বাস ও যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেই সব নাশকতার মামলায় বিএনপির বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ নেতা ফের জেলে। কয়েক জন আত্মগোপন করে রয়েছেন। আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার আগে বিএনপির দেশান্তরী নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দিল্লি গিয়ে ভারতের কূটনীতিকদের কাছে দরবার করেছিলেন। কিন্তু স্থায়ী কমিটির এই নেতার সফরে কাজ হয়নি বুঝে বিএনপি যথেষ্ট হতাশ। উল্টে এই নেতা দিল্লিতে সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রাক্তন শরিক জামাতে ইসলামি সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, শনিবার বিবৃতি দিয়ে বিএনপি নেতৃত্ব তা থেকে দূরত্ব তৈরি করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sheikh hasina Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE