বাস্তবের সিনেমাওয়ালা জগজীবন মারু।ছবি: সংগৃহীত।
আসলে তিনি বাস্তবের সিনেমাওয়ালা। তবে তাঁর নাতি-নাতনিরা দাদুকে বলে থাকে ‘বড়ে টিভিওয়ালা’। কেননা ১৯৯৫ এর অক্টোবরে ‘দিলওয়ালে দুলহেনিয়া লে জায়েঙ্গে’ মুক্তির পর থেকে মুম্বইয়ের মরাঠা মন্দিরে বড় পরদায় এই ছবিটিই দেখিয়ে আসছেন জগজীবন মারু।
৪৫ বছর ধরে এই মরাঠা মন্দির পেক্ষাগৃহে সিনেমা প্রোজেকশনের কাজ করে আসছেন জগজীবন মারু। আর তার মধ্যে ২২ বছর কেটে গেল মানুষকে শুধু ‘দিলওয়ালে দুলহেনিয়া লে জায়েঙ্গে’ দেখাতে দেখাতেই। ছবিটি তাঁর চরম পছন্দের তো বটেই। তার সঙ্গে এতগুলো বছর মানুষকে ‘ডিডিএলজে’ দেখাতে দেখাতে একটা মায়াও তৈরি হয়ে গিয়েছে ছবিটির উপর। জগজীবনবাবু বলছেন, ‘‘আপনার বাচ্চাদের সঙ্গে হোক বা মা-বাবার সঙ্গে, বা প্রেমিক-প্রেমিকার সঙ্গে—সকলের সঙ্গে বসেই এই ছবিটা দেখা যায়। আর এই ছবির প্রতিটা গানও আমার খুব পছন্দের।’’
২২ বছর ধরে এই ভাবেই মানুষ দেখে আসছেন ‘দিলওয়ালে দুলহেনিয়া লে জায়েঙ্গে’। ছবি: সংগৃহীত।
গুজরাতের জুনাগড় থেকে এক বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে মুম্বই পাড়ি দেন জগজীবন মারু। তাঁর মতে, ডিজিটাল ফর্ম্যাটে মানুষকে ‘দিলওয়ালে দুলহেনিয়া লে জায়েঙ্গে’ দেখাতে অনেক সুবিধা হচ্ছে। কেন না, আগে প্রত্যেকবার ছবিটি দেখানোর জন্য রিল পরিবর্তন করাটা সমস্যার হয়ে দাঁড়াত। এই বিষয়ে মারুর বক্তব্য ‘‘ডিজিটাল ফর্ম্যাট আসার ফলে আমাদের সুবিধাই হয়েছে। আগে রিলে ছোট্ট একটি দাগ হয়ে গেলেই আবার নতুন রিল দোকান থেকে নিয়ে আসতে হতো। এক দিন পেক্ষাগৃহে আমি ছিলাম না। আর সেই দিন অন্য একজন রিল পরিবর্তন করছিলেন। দর্শক সেদিন অনেক দৃশ্যই দেখতে পাননি।’’
আরও পড়ুন: দেশের প্রথম ডিজিটাল গ্রাম, অথচ ইন্টারনেটই নেই ঠিকমতো!
মারু আরও বলছেন, যে মরাঠা মন্দির সিনেমা হলে শাহরুখ খানের সমস্ত ছবিই রমরমিয়ে ব্যবসা করে। একসময় এক ব্যক্তি এই সিনেমা হলের ১১০০টি সিট বুক করে রেখেছিলেন। ব্যালকনিতে বান্ধবীর সঙ্গে বসে ছবিটি উপভোগও করছিলেন তিনি। ছবি শেষে নিজের বান্ধবীকে প্রেমের প্রস্তাবই দিয়ে বসেন ওই ব্যক্তি।
আরও পড়ুন: দুরন্ত এখন বেজায় শান্ত! দেরি সাড়ে সাত ঘণ্টা
জগজীবন মারুকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও নির্মিত হয়েছে। ছবিটির নাম ‘বড়ে টিভিওয়ালা।’ আর ছবিটির এহেন নামের জন্য সুপারিশ করেছিলেন মারু নিজেই। তাঁর নাতি-নাতনিরা তাঁর কাছে বায়না জুড়ে দেয় তাঁর বড় টিভিটি বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য।
মুম্বইয়ের পেক্ষাগৃহ মরাঠা মন্দিরেই ২২বছর ধরে চলছে ‘দিলওয়ালে দুলহেনিয়া লে জায়েঙ্গে’। ছবি: সংগৃহীত।
৬৭ বছরের জগজীবন মারু মনে করেন ৪৫ বছর ধরে এই একই ধরনের কাজ করতে করতে মাঝে মধ্যেই বিরক্তি চলে আসে। পরবর্তী প্রজন্ম এই ধরনের কাজে কিছুতেই আগ্রহ দেখাবে না। মারু বলছেন, ‘‘আমি এই কাজটি ছেড়ে দুবাই পাড়ি দিচ্ছিলাম। কিন্তু মানুষকে সিনেমা দেখানোই আমার ভাগ্যে লেখা আছে।’’
তবে শাহরুখ খান ও কাজল অভিনীত ‘‘দিলওয়ালে দুলহেনিয়া লে জায়েঙ্গে’’-কে এখন জগজীবন মারু নিজের মেয়ে মনে করেন। ‘‘প্রত্যেক বাবাই চায় তাঁর মেয়ে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে ঘর করুক। ডিডিএলজেও আমার কাছে মেয়েরই মতো। ছবিটা এসে আমার সঙ্গে থেকে গিয়েছে। আর আমি এই ছবিটাকে সারাজীবন এখানেই রেখে যেতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy