প্রয়োজনের তুলনায় বিচারপতির সংখ্যা কম। তাই তাঁদের উপরে কাজের চাপ বেশি থাকার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর। এ বার সরাসরি জানিয়ে দিলেন, বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে টালবাহানা বন্ধ করুক নরেন্দ্র মোদী সরকার। তা না হলে এ নিয়ে নির্দেশ জারি করবে সুপ্রিম কোর্ট। ফলে মোদী সরকারের সঙ্গে বিচারবিভাগের সংঘাত নয়া মোড় নিল বলেই মনে করা হচ্ছে।
দীর্ঘ দিন ধরেই মোদী সরকারের সঙ্গে বিচারবিভাগের সংঘাত চলছে। বিচারপতি নিয়োগের কলেজিয়াম প্রথা তুলে দিয়ে জাতীয় বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মোদী সরকার। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক বলে খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের যুক্তি ছিল, কমিশনে আইনমন্ত্রীকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। এই পদক্ষেপ বিচারবিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সামিল।
এর পরে স্থির হয় সরকার বিচারবিভাগের সঙ্গে কথা বলে বিচারপতি নিয়োগের নিয়মাবলি (মেমোরান্ডাম অফ প্রসিডিওর) স্থির করবে। কিন্তু সেই নিয়মাবলি নিয়ে টানাপড়েন চলছে। বিচারপতি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাবিত কোনও নাম খারিজ করার ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে চায় সরকার। বর্তমান ব্যবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ শীর্ষ বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত কলেজিয়ামের প্রস্তাবিত কোনও নাম নিয়ে সরকার আপত্তি জানাতে পারে। কিন্তু কলেজিয়াম ফের সেই নাম ফেরত পাঠালে সরকার তা মানতে বাধ্য। কিন্তু নয়া ব্যবস্থায় কেন্দ্র নাম খারিজের ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখতে চায়। তাদের দাবি, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই এই ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকা উচিত। কারণ, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্র কোনও নাম নিয়ে সম্মতি বা আপত্তি জানায়। রবিশঙ্কর প্রসাদ কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রধান বিচারপতির বাড়িতে গিয়ে এ নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু জট কাটেনি। আর এই টালবাহানার ফলে সুপ্রিম কোর্টের পাশাপাশি বিভিন্ন হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগ আটকে রয়েছে।
আজ দেশের ২৪টি হাইকোর্টে ৪৭৮টি বিচারপতির পদ ফাঁকা পড়ে থাকার জন্য সরাসরি কেন্দ্রকে দায়ী করেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ না করে কেন্দ্র বিচারব্যবস্থাকে থমকে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’’ তাঁর যুক্তি, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কেন্দ্রের কাছে ৭৫ জনের নাম বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এক পা-ও কাজ এগোয়নি। ঠাকুরের হুঁশিয়ারি, ‘‘আমরা এই জট সহ্য করব না। জট কাটানোর জন্য আমাদের নির্দেশ জারি করতে বাধ্য করবেন না।’’ তিনি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্র যদি দ্রুত পদক্ষেপ না করে তাহলে কলেজিয়ামের পাঠানো সব ফাইল সুপ্রিম কোর্ট ফেরত চাইবে।
বিচারপতি নিয়োগের নিয়মাবলি নিয়ে টানাপড়েনের ফলে নিজের ক্ষোভের কথা গোপন রাখেননি প্রধান বিচারপতি। তাঁর কথায়, ‘‘এত অবিশ্বাস কেন? কলেজিয়াম ৭৫ জনের নাম সুপারিশ করার পরেও কোনও সাড়া নেই। প্রধান বিচারপতিদের নিয়োগও আটকে। বদলি আটকে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘এতে গোটা বিচারব্যবস্থা ধাক্কা খাচ্ছে।’’
হায়দরাবাদ হাইকোর্টের উদাহরণ দিয়ে বিচারপতি ঠাকুর জানান, সেখানে প্রয়োজনের ৪০ ভাগ বিচারপতি নিয়ে কাজ চলছে।
আইন মন্ত্রকের কাছে এখন ২২৭ জন বিচারপতির নাম হাইকোর্টে নিয়োগ বা বদলির জন্য ঝুলে রয়েছে। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে ১৯ জন, মাদ্রাজে ৩৭ জন, কর্নাটকে ৩৫ জন, হায়দরাবাদে ৩৬ জন বিচারপতির পদ শূন্য রয়েছে। আজ আইন মন্ত্রক নিজেই সংসদে জানিয়েছে, বিচারপতির অভাবে হাইকোর্টগুলিতে ঝুলে রয়েছে প্রায় ৩৯ লক্ষ মামলা।
প্রধান বিচারপতির তিরের মুখে অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি জানান, কলেজিয়ামের সুপারিশ করা ৭৫ জনের নাম নিয়ে কত দূর কাজ এগিয়েছে তা এক মাসের মধ্যে তিনি আদালতকে জানাবেন। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ স্তরে কথাও বলবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy