নয়াদিল্লিকে কাছে টানতে বিরাট পদক্ষেপ নিল ওয়াশিংটন। ভারতকে ন্যাটো সদস্যসদের সমান মর্যাদা দেওয়ার জন্য বিল পাশ হল মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে। একই বিল পেশ হল মার্কিন সেনেটেও। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশগুলির সঙ্গে যে সব অস্ত্রশস্ত্র এবং সামরিক প্রযুক্তির ব্যবসা আমেরিকা অবাধে করে, ন্যাটোর বাইরের কোনও দেশকে আমেরিকা সে সব দিতে পারে না। আইনে সংশোধন এনে এ বার তাই ভারতকে ন্যাটো সদস্যদের সমান মর্যাদা দেওয়ার তোড়জোড় শুরু।
বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বজায় রাখতে আমেরিকার সামনে এক সময় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সোভিয়েত রাশিয়া। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর থেকে রাশিয়া যত দুর্বল হয়েছে, মার্কিন নেতৃত্ব তত বেশি করে আন্তর্জাতিক মহলের স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে এখন চিন নিজের কর্তৃত্ব কায়েম করতে চায়। চিনা আগ্রাসন এত দূর পৌঁছেছে যে সমুদ্রের মাঝে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে তারা নিজেদের জলসীমা বাড়িয়ে নিচ্ছে। এই আগ্রাসন মানতে নারাজ আমেরিকা। সেই টানাপড়েনেই চিনের সঙ্গে আমেরিকা তথা ন্যাটোভুক্ত সব দেশগুলির সম্পর্ক এখন তলানিতে।
চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কও মোটেই মধুর নয়। ১৯৬২-র যুদ্ধের পর থেকেই ভারত-চিন সম্পর্কে তিক্ততা রয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তানকে সামরিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ভাবে চিন ঢালাও সাহায্য দেওয়া শুরু করায়, ভারত-চিনের পারস্পরিক তিক্ততা আরও বেড়েছে। জৈশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার চেষ্টা চিন আটকে দিয়েছে। ভারতের এএসজি-তে ঢোকার চেষ্টাতেও চিন বাধা দিচ্ছিল। পরে সরাসরি বাধা দেওয়ার পথ থেকে পিছু হঠেছে। কিন্তু ভারত এনএসজি-তে ঢুকলে যাতে পাকিস্তানও ঢুকতে পারে, সেই চেষ্টা শুরু করেছে চিন।
সব মিলিয়ে ভারত এবং আমেরিকার অভিন্ন প্রতিপক্ষ এখন চিন। সে কথা মাথায় রেখেই খুব দ্রুত কাছে আসা শুরু করেছে ভারত ও আমেরিকা। পাকিস্তানের জন্য ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ করেও তা আটকে দিয়েছে আমেরিকা। ফলে মার্কিন যুদ্ধবিমান এফ-১৬ কিনতে পারেনি পাকিস্তান। কিন্তু ভারত যাতে আমেরিকার কাছ থেকে সব রকমের অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র এবং প্রযুক্তি সহজেই পেতে পারে তার জন্য ভারতকে ন্যাটো সদস্যদের সমান মর্যাদা দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিতে।
মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে বিলটি সহজেই পাশ হয়ে গিয়েছে। এই বিল পেশ ও পাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল মার্কিন কংগ্রেসের ভারতপন্থী সদস্যদের মঞ্চ ইন্ডিয়া ককাস। তবে মার্কিন কংগ্রেসের বিদেশনীতি সংক্রান্ত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও পদাধিকারীরাও এই বিল পাশ করাতে কোমর বেঁধে আসরে নেমেছিলেন। এ বার কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেটেও বিলটি পেশ করা হয়েছে। সেখানে পাশ হয়ে গেলে প্রেসিডেন্ট ওবামার কাছে সেটি পাঠানো হবে স্বাক্ষরের জন্য। ওবামা সই করলেই মার্কিন প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারত ন্যাটোভুক্ত দেশগুলির সমগোত্রীয় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক মিত্র হয়ে উঠবে।
যে বিল পাশ হয়েছে মার্কিন কংগ্রেসেন নিম্ন কক্ষে, তাতে শুধু ভারত-আমেরিকার মধ্যে অবাধ সামরিক আদানপ্রদানের কথা নেই। রয়েছে আরও অনেক কিছু। শুধু ভারত-মার্কিন সহযোগিতার বিষয়টি দেখভালের জন্যই মার্কিন প্রশাসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে বিলটিতে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সদর দফতর পেন্টাগনে ভারত-মার্কিন সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি অফিস খোলার সুপারিশও করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
এনএসজি: হঠাৎ ভোল বদলে ভারতের পাশে থাকার বার্তা চিনের
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত-আমেরিকার ঘনিষ্ঠতা এত দ্রুত এতটা বেড়ে যাবে, সে কথা দুঃসপ্নেও ভাবেনি ইসলামাবাদ এবং বেজিং। ভারতকে চাপে রাখতে চিন সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ালেও, শুধুমাত্র পাকিস্তানের উপর ভরসা করে যে ভারতকে খুব বেশি জব্দ করা সম্ভব নয়, তা চিন ভালই জানে। তা সত্ত্বেও চাপের খেলা চলছিল। কিন্তু তার প্রতিক্রিয়ায় যে ভারতের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ন্যাটোর গাঁটছড়া আচমকা এমন মজবুত হয়ে যাবে, সে কথা বেজিং সম্ভবত আঁচ করতে পারেনি। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাচ্ছে দেখে কৌশল বদলেছে চিন। এখন বিভিন্ন ভাবে নয়াদিল্লির উপর থেকে চাপ কমিয়ে সম্পর্কের তিক্ততা কাটানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে বেজিং-এর তরফে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy