Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Ayodhya Ram Mandir

ভক্তির চেয়েও বেশি স্নেহ পাচ্ছেন ‘বালক’ রামলালা, উপচে পড়ছে অযোধ্যার রামমন্দিরে রাখা দানপাত্র

ভিড় রয়েছে। তবে ঠেলাঠেলি নেই। উদ্বোধনের পরে দ্বিতীয় দিনে অনেকটাই চাপমুক্ত অযোধ্যা প্রশাসন। কোন পথ মিশেছে মন্দিরে। কেমন সেই রামলালা। গর্ভগৃহে গিয়ে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।

Uttar Pradesh police ultimately makes smooth visit of Ramlala of Ram Mandir in Ayodhya.

সূর্যবংশীয় রামলালাকে দেখতে আগ্রহের শেষ নেই। ছবি: পিটিআই।

পিনাকপাণি ঘোষ
অযোধ্যা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:০৪
Share: Save:

বুধবার সকাল থেকেই অযোধ্যার আকাশ কুয়াশায় ঢাকা। সূর্যের দেখা নেই। তবে সূর্যবংশীয় রামলালাকে দেখতে আগ্রহের শেষ নেই। ভোর ৩টে থেকেই লাইন পড়ে গিয়েছিল ‘ভক্তিপথে’। তবে বেলা গড়াতে লাখ লাখের ভিড়টা কমে হাজার হাজারে এসে গেল। দুপুর নাগাদ হনুমানগড়ির রাস্তায় পাশাপাশি দুটো লাইন। সে লাইন যাতে বেঁকে না যায়, তা কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করছে প্রশাসন।

একেবারে প্রথম শ্রেণির নেতা এবং সাধু-সন্তদের ঢোকার জন্য অবশ্য লাইন নেই। সেই অন্য গেট সংবাদমাধ্যমের জন্যেও খোলা। কিন্তু সাধারণের এই ভক্তিযাত্রার অভিজ্ঞতা সেই লাইনে বা গেটে মিলবে না! তাই সাধারণের লাইন ধরেই এগোনো।

লাইনটা এগোতে এগোতে আচমকাই থমকে গেল। নিরাপত্তারক্ষীরা প্রত্যেককে আলাদা আলাদা করে পরীক্ষা করছেন। মোট ১৫টি গেট। তার মধ্যে বাঁ দিকের পাঁচটি মহিলাদের জন্য। মোবাইল ফোন-সহ কিছুই নিয়ে যাওয়া যাবে না। তবে মানিব্যাগ নিতে দেওয়া হচ্ছে। আগে কোমরের বেল্ট থেকে মানিব্যাগ সব রেখে আসতে হয়েছিল। অম্বলের ওষুধও নিয়ে নিয়েছিলেন আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা। এ বার ততটা নয়।

১৯৯২ সালে ৬ ডিসেম্বরের পর একটা ছাউনিতে রাখা হয়েছিল রামলালার মূর্তি। সেখানেই ২০০৫ সালে জঙ্গিহানা হয়। এর পরে খুব কড়াকড়ি হয়ে গিয়েছিল ‘রাজনৈতিক’ রামলালার দর্শন। কিন্তু নতুন রামমন্দিরে নিরাপত্তার গেট টপকে গেলেই পাশাপাশি, দল বেঁধে হাঁটার প্রশস্ত পথ।

মিনিট ১৫ হাঁটার পরে আবার এক দফা পরীক্ষা। এখানে কিছু সঙ্গে থাকলে তা লকারে রাখা যাবে। সেই ব্যবস্থা রামমন্দির তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টই করে রেখেছে। হাজার হাজার লকার। সেই পর্ব টপকানোর সময়েই দেখা গেল গোলযোগ। অযোধ্যাবাসী এক মহিলা কোলে করে নিয়ে এসেছেন তাঁর ‘লাড্ডু গোপাল’-কে। সপরিবারে এসেছেন। তাই বাড়ির আদরের গোপাল ঠাকুরও সিংহাসনে বসেই কোলে উঠেছেন। ছোট্ট মূর্তির গায়েও রঙিন সোয়েটার। অনেক চেঁচামেচির পর অবশ্য মহিলাই জিতে গেলেন। তাঁর একটাই কথা, ‘‘আমার লাড্ডু গোপাল কেন রামলালাকে দেখবে না? ওকে আমি একা রেখে যাব না।’’ মেনে নিলেন অযোধ্যা পুলিশের কর্তা।

এর পরে জুতো খোলার পালা। সে-ও সাজিয়ে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। অনেকটা আলনার মতো দেখতে। তাতে ধাপে ধাপে রয়েছে আংটা। নম্বর দেওয়া রয়েছে। নিজেকেই নিজের জুতো ঝুলিয়ে নম্বর মনে রাখতে হবে। ফের হাঁটা। মূল গেট থেকে আধ ঘণ্টা হাঁটার পরে মন্দিরের সিঁড়ি। তারও তিনটি ধাপ। প্রতিটি ধাপে পা রাখার আগে ভক্তরা প্রণাম করছেন। উদ্বোধনের দিন সাজানো ফুল এখনও শুকিয়ে যায়নি। তবে সেই ফুলসজ্জার জন্য মন্দিরের স্তম্ভের কারুকার্য ঠিক করে দেখা যাচ্ছে না। মন্দিরের ভিতরেও রাস্তার মতোই ব্যারিকেড। গোটা পথটা মানবশৃঙ্খলের মতো পুলিশকর্মীরা হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে।

তবে রামলালার দর্শনের জন্য খুব বেশি সময় পাওয়া যাবে না। মেরেকেটে ৩০ সেকেন্ড। ‘চলিয়ে-চলিয়ে’ বলেই চলেছেন পুলিশকর্মীরা। যেখান থেকে দেখতে হচ্ছে, তার থেকে কম করেও ১০ মিটার দূরে রত্নখচিত গয়নায় ঢাকা রামলালা। নীচে পুরনো মূর্তি। রামলালার সামনে দাঁড়িয়ে প্রণাম করছেন সকলে। তবে ফুল বা অন্য কিছু দেওয়ার সুযোগ নেই। যাঁরা প্রণামে ব্যস্ত, তাঁদের কথায় ভক্তির চেয়ে বেশি স্নেহ। পাঁচ বছরের শিশুর মতো দেখতে রামলালার চেহারা সত্যিই আদুরে। ‘মেরে লাডলা’ বলেই প্রণাম সারছেন অনেকে। তবে বেশির ভাগের গলাতেই ‘জয় শ্রীরাম’, ‘জয় সিয়ারাম’ ধ্বনি।

Uttar Pradesh police ultimately makes smooth visit of Ramlala of Ram Mandir in Ayodhya.

পাঁচ বছরের শিশুর মতো দেখতে রামলালার চেহারা সত্যিই আদুরে। ছবি: পিটিআই।

দর্শন শেষ করে গর্ভগৃহ থেকে বার হতেই দু’পাশে দানপাত্র। উপচে পড়ছে সে পাত্র। পুজো দেওয়ার সুযোগ না থাকলেও দক্ষিণা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রসাদও মিলছে বিনামূল্যে। প্যাঁড়া প্রসাদের প্যাকেটে লেখা ‘শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দির, অযোধ্যাজি’। পুজো তো শুধু ‘রামলালা’কে নয়, ‘অযোধ্যাজি’কেও। ধর্মকে ধারণ করা এই নগরীও দেবতা হয়ে গিয়েছেন!

উদ্বোধনের দিন যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ অন্যান্যরা ছিলেন, যেখানে অতিথি-অভ্যাগতেরা বসেছিলেন, সেই জায়গাটা একেবারে একই রকম রয়েছে। ছড়ানো-ছেটানো চেয়ার, ফুল। মন্দিরে যাওয়ার পথটা যতটা মসৃণ ততটাই বন্ধুর ফেরার পথ। সে রাস্তা এখনও তৈরি হয়নি। ছোট ছোট নুড়িপাথরের উপর বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে পাতলা কার্পেট। খালি পায়ে সেই অল্প পথও পার হওয়া কষ্টের।

সেটুকু সেরে একটাই কাজ। নিজের জুতো জোড়া খুঁজে পাওয়া। সেটা যে কঠিন, তা বেশ মালুম হল। পাথরের টাইল্‌স খুব ঠান্ডা। সেখানে দাঁড়িয়েই জুতোর সন্ধান। রামমন্দির পিছনে ফেলে আবার পিচের রাস্তায় আসতে আসতে মনে হল, এটাই তো সেই পথ, যে পথে রাজনীতির অনেক রথ এগিয়েছে। অনেক রক্তের দাগও রয়েছে এই মসৃণ পথের নীচে। ভক্তিপথ ছেড়ে কালো পিচের পথে নামলাম। হনুমানগড়ির দিক থেকে গান ভেসে আসছিল, ‘সব মে রাম, রাম মে হ্যায় সব...।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE