তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে ওই রিপোর্টকে ‘মনগড়া’ বলা হয়েছে। ফাইল ছবি
জনতার কাছে ভাল দেখায় এমন নয়, জনতার যাতে প্রকৃত ভাল হয়, এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ ‘সুশাসন দিবস’ উপলক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনই দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মোদী মন্ত্রিসভার দু’নম্বর ব্যক্তি অমিত শাহ। একই সঙ্গে আজ সুশাসনের প্রশ্নে রাজ্যগুলি কে কোথায় আছে সেই রিপোর্ট (২০২০-২১) প্রকাশ করেন শাহ। তালিকায় সুশাসনের প্রশ্নে প্রথম হয়েছে গুজরাত। আর সবথেকে নীচে পশ্চিমবঙ্গ। সুশাসনের প্রশ্নে বিহার, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যও পশ্চিমবঙ্গের থেকে ভাল ফল করেছে বলে ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে ওই রিপোর্টকে ‘মনগড়া’ বলা হয়েছে।
সদ্য প্রত্যাহার হয়েছে কৃষি আইন। প্রশ্নের মুখে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার থেকে শুরু করে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন— কৃষি আইনের মতোই যে সিদ্ধান্তগুলির যৌক্তিকতা নিয়ে এক সময়ে বিরোধী দলগুলি ও নাগরিক সমাজের একাংশ প্রতিবাদে পথে নেমেছিল। শেষ পর্যন্ত সেগুলি প্রত্যাহার না হলেও এ নিয়ে সাধারণ মানুষের বিরোধিতা অস্বস্তিতে রেখেছে শাসক শিবিরকে। সরকারের ওই সিদ্ধান্তগুলি নেওয়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য বোঝাতে গিয়ে আজ সুশাসন দিবসের অনুষ্ঠানে অমিত শাহ দাবি করেন, জনতার কাছে ভাল দেখায়, এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষপাতী নয় তাঁদের সরকার। বরং শত বিরোধ সত্ত্বেও যে সিদ্ধান্তে জনতার প্রকৃত ভাল হওয়া সম্ভব, সেই সিদ্ধান্তই নিয়ে থাকে মোদী সরকার। শাহের কথায়, ‘‘নরেন্দ্র মোদী ও তার সরকার এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি, যা জনতার চোখে ভাল ‘দেখায়’। বরং যা জনগণের জন্য ভাল, সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।’’ তা করতে গিয়ে প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক ক্ষতি থাকার সম্ভাবনা সত্ত্বেও কঠোর পদক্ষেপ করতে কেন্দ্র পিছপা হয়নি বলেও দাবি তাঁর।
ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে দলের পরিস্থিতি বিশেষ সুবিধের নয় বুঝেই সদ্য সমাপ্ত শীতকালীন অধিবেশনে কৃষি সংস্কার আইন প্রত্যাহার করে নিয়েছে কেন্দ্র। এক বছর ধরে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়ে জয়ী হয়েছেন কৃষকেরা। ঘরোয়া ভাবে বিজেপি নেতারা স্বীকার করে নিচ্ছেন, কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল মোদী-অমিত শাহদের। এ ক্ষেত্রে ভোটের আগে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার আসলে দল যে ভাল অবস্থায় নেই, সেই সত্যকে সামনে এনে ফেলেছে। আরও কয়েক মাস আগে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হলে তাকে ভাঙিয়ে ভোট প্রচারে যেতে পারত বিজেপি। উল্টে অমিত শাহকে এখন বলতে হচ্ছে, রাজনৈতিক ক্ষতির ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও জনমুখী সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে হেঁটেছে মোদী সরকার। বিজেপি সূত্রের মতে, সেই কারণে আগামী দিনে ওই আইন প্রত্যাহারকে কেন্দ্র করে দলীয় প্রচারের অভিমুখ কী হবে, তা আজ কার্যত ঠিক করে দিলেন অমিত শাহ। যদিও গত কালই নাগপুরে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে মোদী সরকারের কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর কৃষি আইন ফেরানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিজেপিকে তোপ দেগেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী।
আজ বিজ্ঞান ভবনে সুশাসনের প্রশ্নে রাজ্যগুলির যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে, তাতে কংগ্রেস-শিবসেনা-এনসিপি জোট শাসিত মহারাষ্ট্রকে টপকে এ বার প্রথম হয়েছে বিজেপি-শাসিত গুজরাত। মূলত কৃষি, শিল্প-বাণিজ্য, শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, পরিকাঠামো, আর্থিক পরিচালন ব্যবস্থা, সামাজিক ন্যায় ও উন্নয়ন, আইনব্যবস্থা ও জননিরাপত্তা, পরিবেশ এবং জনমুখী শাসন— এই দশটি বিষয়ে রাজ্যগুলির ফলের ভিত্তিতে ওই রিপোর্ট পেশ করা হয়। অতীতের উন্নয়নের ভিত্তিতে রাজ্যগুলিকে ভাগ করা হয়েছিল দু’টি শ্রেণিতে। তুলনার ক্ষেত্রে সমতা আনতে গুজরাত, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুর মতো দশটি রাজ্যকে রাখা হয়েছিল উন্নত শ্রেণিতে। আর বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের মতো আটটি রাজ্যকে রাখা হয়েছিল অনুন্নত শ্রেণিতে। উন্নত রাজ্যগুলির মধ্যে গত বারের চেয়ে এ বারে সূচকের নিরিখে ২৪.৭ শতাংশ এগিয়েছে গোয়া। মূলত কৃষি, শিল্প, জনস্বাস্থ্য, জনপরিকাঠামো, আর্থিক পরিচালনব্যবস্থায় ভাল ফল করায় দশম স্থান থেকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি-শাসিত গোয়া। গুজরাত শিক্ষা, আইনব্যবস্থা, সামাজিক ন্যায়, জনপরিকাঠামো ক্ষেত্রে ভাল ফল করায় ১২.৩ শতাংশ সূচকের বৃদ্ধিতে প্রথম স্থান পেয়েছে। অন্য দিক পিছিয়ে থাকা রাজ্যের মধ্যে আরও ৬.৬ শতাংশ পিছিয়ে একেবারে শেষে স্থান পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্য একমাত্র পরিকাঠামো ও জনপরিষেবা ক্ষেত্রে ভাল ফল করেছে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। ওই রিপোর্ট প্রসঙ্গে আজ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘এ হল সরকারের মনগড়া রিপোর্ট। সামনে নির্বাচন, তাই বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির ভাল ফলকে তুলে ধরার কৌশল নেওয়া হয়েছে। মনে রাখতে হবে ক’দিন আগেই শিক্ষাক্ষেত্রে দেশে প্রথম হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy