Advertisement
০২ জুন ২০২৪

‘আপনারা কি বিচার ব্যবস্থাটা তুলে দিতে চান?’

বিচারপতিদের কাজের চাপের কথা বোঝাতে গিয়ে গত এপ্রিলে তিনি প্রকাশ্য মঞ্চে কেঁদে ফেলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সামনে। বিচারপতি নিয়োগ ঝুলে থাকা নিয়ে অগস্টে তুলোধোনা করেছেন কেন্দ্রকে। আজ তিনি সরাসরি প্রশ্ন করে বসলেন সরকারকে, ‘‘আপনারা কি গোটা বিচার ব্যবস্থাটাই তুলে দিতে চান?’’

প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর

প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩২
Share: Save:

বিচারপতিদের কাজের চাপের কথা বোঝাতে গিয়ে গত এপ্রিলে তিনি প্রকাশ্য মঞ্চে কেঁদে ফেলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সামনে। বিচারপতি নিয়োগ ঝুলে থাকা নিয়ে অগস্টে তুলোধোনা করেছেন কেন্দ্রকে। আজ তিনি সরাসরি প্রশ্ন করে বসলেন সরকারকে, ‘‘আপনারা কি গোটা বিচার ব্যবস্থাটাই তুলে দিতে চান?’’

প্রশ্নকর্তা প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর। গত অগস্ট মাসে যে জনস্বার্থ মামলায় কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন, তারই শুনানিতে আজ ফের তোপ দাগলেন তিনি। হুঁশিয়ারি দিলেন যে, দরকারে ৫ সদস্যের বেঞ্চ গড়ে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেবে, বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি সরকার আর ঝুলিয়ে রাখতে পারে না।

বিচারপতির ঘাটতি আগেও ছিল দেশে। কিন্তু তাঁদের নিয়োগ নিয়ে সরকার ও বিচারবিভাগের টানাপড়েন নতুন মাত্রা নিয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। বিচারপতি নিয়োগের কলেজিয়াম প্রথা তুলে দিতে জাতীয় বিচার বিভাগীয় কমিশন গড়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তা বাতিল করে দিলেও কলেজিয়াম ব্যবস্থায় কিছু বদল আনতে সম্মত হয়। ফলে শীর্ষ আদালতের ৫ প্রবীণতম বিচারপতিকে নিয়ে তৈরি কলেজিয়ামের মাধ্যমেই এখন নিয়োগ হওয়ার কথা। কিন্তু কলেজিয়াম ব্যবস্থায় নিয়োগের ক্ষেত্রে শেষ কথা কে বলবে— তা নিয়ে সরকার ও বিচারবিভাগ একমত হতে পারছে না।

কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মতে, ‘‘নিয়োগবিধির নামে নিয়োগের বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে সরকারই আসলে বিচারবিভাগকে ব্ল্যাকমেল করছে।’’ জাতীয় বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠনের আইন পাশের সময়ে কিন্তু সরকারকেই সমর্থন করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু এখন বিচারপতি নিয়োগ প্রশ্নে সরকারকে চাপে ফেলতে চাইছে তারা।

এ দিন শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি আমরা চাই না। এটা ব্যক্তিগত রেষারেষির বিষয় নয়।’’ কিন্তু তার পরেই কেন্দ্রকে তুলোধোনা করতে শুরু করেন বিচারপতি ঠাকুর। বলেন, ‘‘কর্নাটক হাইকোর্টে বিচারপতির অভাবে আদালত বন্ধ হয়ে রয়েছে। ইলাহাবাদ হাইকোর্টের জন্য ১৮ জনের নাম সুপারিশ করেছিল কলেজিয়াম। তার মধ্যে কেন্দ্র এ পর্যন্ত কেবল ২ জনের নিয়োগে সম্মতি দিয়েছে।’’ এরই সঙ্গে বিচারপতি উল্লেখ করেন, ‘‘নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা নামগুলি ৯ মাস ধরে কেন্দ্রের কাছে পড়ে রয়েছে। বিচার ব্যবস্থাটাই তুলে দিয়ে সরকার কি প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটাতে চায়?’’

কেন্দ্রের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি জানান, কলেজিয়ামের সুপারিশ করা নামগুলি সরকারের বিবেচনাধীন। কিন্তু নিয়োগবিধি চূড়ান্ত হওয়ার আগে বিচারপতি নিয়োগ সম্ভব নয়। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতির মন্তব্য করেন, ‘‘বার বার আমাদের জানানো হয়েছিল নিয়োগবিধি চূড়ান্ত হওয়ার জন্য নিয়োগ আটকে থাকবে না। এখন বলছেন সমস্যাটা নিয়োগবিধি নিয়ে!’’ রোহতগি বলেন, ‘‘যদি নিয়োগবিধি ছাড়াই সব কাজ হয়, তবে তা চূড়ান্ত করার প্রয়োজনটা কী?’’ প্রধান বিচারপতির উত্তর, ‘‘কে বলেছে এখন কোনও নিয়োগবিধি নেই? এখনও পুরনো ব্যবস্থায় নিয়োগ হচ্ছে।’’ এর পর হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সহনশীলতায় কাজ হচ্ছে বলে মনে হয় না। এমন চললে ফের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ তৈরি হবে। সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হবে, এ ভাবে বিচারবিভাগীয় নিয়োগ আটকে রাখা যায় না।’’

নিয়োগের প্রক্রিয়া যে পুরোপুরি আটকে নেই, এ দিন তার খতিয়ানও দেয় কেন্দ্র। যদিও বিচারপতি ঠাকুর তাতে সন্তুষ্ট হননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TS Thakur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE