Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

কাজ কবে হবে জানতে চায় যুব বিহার

কালকের ফল নয়, এক বছর পরের ফলটা কী হয় সেদিকেই তাকিয়ে আছে ওরা। ওরা বয়সে নবীন, তরুণ। কেউ বা যুবাও। ওরা উন্নয়নের নিক্তিতে মেপে নিতে চায় নিজেদের জয়-পরাজয়।

বিজেপির জয় প্রার্থনা করে চলছে যজ্ঞ। ছবি: পিটিআই।

বিজেপির জয় প্রার্থনা করে চলছে যজ্ঞ। ছবি: পিটিআই।

উজ্জ্বল চক্রবর্তী
পটনা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৫ ০৪:২৫
Share: Save:

কালকের ফল নয়, এক বছর পরের ফলটা কী হয় সেদিকেই তাকিয়ে আছে ওরা। ওরা বয়সে নবীন, তরুণ। কেউ বা যুবাও। ওরা উন্নয়নের নিক্তিতে মেপে নিতে চায় নিজেদের জয়-পরাজয়।

ফ্রেজার রোডের এক শপিং মলে দেখা তালাত পরভিনের সঙ্গে। বিহারে কে জিতল, কে হারল তা নিয়ে এই তরুণীর মোটেও উত্সাহ নেই। বললেন, ‘‘যে কেউ জিততে পারে। তার সঙ্গে রাজ্যের উন্নয়ন যেন গুলিয়ে না যায় সেটাই দেখার। সব দিক থেকে আমাদের রাজ্য অন্যদের টেক্কা দিতে পারলেই আসল জয় আসবে। রাজনীতিকরা সেটা দয়া করে বুঝলেই ভাল!’’

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র কিশোর কুমার। তার কাছে কর্মসংস্থানের সুযোগটাই জয়ের মাপকাঠি। আরজেডি, বিজেপি, জেডিইউ—যেই জিতুক, তার মতে, আসল জয় আসবে রাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়লে। আর কিশোর তাই মনে করে, এই নির্বাচন তাদ‌েরই জেতা উচিত, যারা এ ভাবনাটা মাথায় রাখবে।

জাতপাতের নিরিখে বিহারে চিরকাল ভোট হয়ে এসেছে। এ বারও প্রচারে তারই প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে গোটা রাজ্যে। অনেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে ধর্মের জিগিরও তুলেছেন। আর সেখানেই আপত্তি অখিলেশ পাসোয়ানের। সদ্য স্নাতক অখিলেশ পটনারই একটি প্রতিষ্ঠানে সরকারি চাকরির প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কে জিতল, কে হারল তা নিয়ে আমি মোটেই ভাবছি না। শুধু ভাবছি, চাকরিটা কবে পাব। অনেক তো হল ও সব!’’
জাতপাতের হিসেবটা যে তাঁর না পসন্দ বুঝিয়ে দিলেন হাতের অস্থিরতায়।

বিহারের জেন-ওয়াই কি তবে এ ভাবেই ভাবছে? সময় কি তা হলে পাল্টাচ্ছে? জেন-ওয়াই কি আর এই বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস রাখতে পারছে না?

রাজ্য-রাজনীতির পথে অর্থাত্ ‘বীরচন্দ্র পটেল পথ’-এ দেখা হয়ে গেল ধীরজ যাদবের সঙ্গে। তিনি জানাচ্ছেন, বিহার পাল্টাচ্ছে, তবে ধীরে ধীরে। বছর সাতাশের যুবক ধীরজ তার কলেজ জীবনে যে ভাবে নিজের প্রজন্মকে দেখেছেন, এখন যেন তার থেকে একটু আলাদা লাগে পরের প্রজন্মকে। একটু স্পষ্ট ভাবে বলতে চায় নিজের ভাবনার কথা।

নেহা অগ্রবাল এই বিভাজনের রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে চান। এই তরুণীর কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্যে প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু কর্ম সংস্থানের সুযোগ কম। অন্য রাজ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। রাজনীতির কারণে যদি সেই প্রতিভা পড়ে থেকে নষ্ট হয়, তা হলে এই জয়ের কোনও মানেই হয় না।’’

বছর আটেক পটনায় আছেন পশ্চিমবঙ্গের দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়। এ রাজ্যের ভোটার নন। তবুও বদলানো হাওয়াটা টের পান। বললেন, ‘‘প্রথম যখন এসেছিলাম, দেখতাম ছেলেমেয়েদের কেউ না কেউ, কোনও না কোনও রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। আর এখন সেটার প্রবণতা কমছে যে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।’’

ফল বেরোনোর আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। রাত পেরোতে না পেরোতেই জানা যাবে বিহারের মসনদ কার দখলে যাবে। গোটা দেশ যে রাজ্যের দিকে তাকিয়ে, সেই রাজ্যের তরুণ-যুবারা কিন্তু অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। জাতের নয়, ধর্মের নয়, রাজ্যের সামগ্রিক ‘জয়ে’র দিকেই তাদের নজর। রাজনীতির কারবারিরা সেটা টের পেয়েছেন কিনা কে জানে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE