লোকসভার বিরোধী দলনেতার পদ নিয়ে শুক্রবার বিতর্ক উস্কে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু এই পদ কারওকে না দিতে তাঁর সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, স্পষ্ট ভাবে তা জানিয়ে দিলেন লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্পিকার সুমিত্রা মহাজন শনিবার বলেন, “সর্বোচ্চ আদালত আমার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন করেনি। সরকারের কাছে নোটিস পাঠিয়েছে। সরকারই জবাব দেবে।” লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে কাউকে মর্যাদা না দিয়ে কোনও ভুল করেননি বলেই দাবি করেন তিনি। তাঁর যুক্তি, “এ ব্যাপারে পূর্ব প্রথা খতিয়ে দেখেছি, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলেছি। যেহেতু বিরোধী দলগুলির কারও কাছে লোকসভার মোট সদস্য সংখ্যার ১০ শতাংশ, অর্থাৎ ৫৫ জন নেই, তাই কাউকে বিরোধী দলনেতার মর্যাদা দেওয়া যায়নি।”
স্পিকার তাঁর সিদ্ধান্ত গত সপ্তাহেই সরকারি ভাবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু গত কাল লোকপাল নিয়োগ সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট এই প্রসঙ্গ টেনে আনে। প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢার নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ বলে, বিরোধী দলনেতার পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার পক্ষের থেকে ভিন্ন মত রাখেন তিনি। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে যখন কোনও বিরোধী দলনেতা নেই, তখন এটা খতিয়ে দেখা দরকার। সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখে ফের এই মামলার শুনানি হবে। তার আগে সরকারকে এই বিষয়ে তাদের অবস্থান জানাতে হবে। পাশাপাশি আদালত প্রশ্ন তুলেছে, লোকপাল আইনের জন্য বিরোধীদের সব থেকে বড় দলের নেতাকে বিরোধী দলনেতার মর্যাদা দেওয়া হবে কি না। কোনও বিরোধী দলনেতা না থাকলে কী ভাবে লোকপাল নিয়োগ করা যায়, তা দেখার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগিকে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
সর্বোচ্চ আদালত বিরোধী দলনেতার পদ নিয়ে বিতর্ক উস্কে দেওয়ায় উজ্জীবিত কংগ্রেস। সলমন খুরশিদের মতো নেতারা যুক্তি দিচ্ছেন, অতীতে কী ভাবে বিরোধী দলনেতা নিয়োগ হয়েছে, তার সঙ্গে বর্তমানের পরিস্থিতিকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। লোকপাল, কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের মতো কিছু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান পদে নিয়োগের জন্য কমিটিতে লোকসভার বিরোধী দলনেতা থাকা আইনত আবশ্যিক। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার এই বিবর্তনের প্রেক্ষিতেই বিষয়টিকে দেখতে হবে।
তবে পাল্টা যুক্তি দিয়ে স্পিকার সুমিত্রা মহাজন আজ বলেছেন, “১৯৮০ সালে এবং ১৯৮৪ সালে লোকসভার বিরোধী দলনেতা পদে কেউ ছিল না। কারণ, বিরোধীদের তখন শক্তি ছিল না। এখনও বিরোধীদের নিয়ে লোকসভার কাজ ঠিক ভাবেই চলছে। বিরোধী দলনেতা না থাকায় কাজের কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।”
যদিও এ ব্যাপারে সহমত নন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সম্প্রতি তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “লোকসভার বিরোধী দলনেতা নিয়োগের বিষয়টা স্পিকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু আমি মনে করি, কোনও নিয়ম মেনে যদি নিয়োগ করা না যায়, তা হলেও স্পিকার বিরোধী দলগুলি থেকে কোনও নেতাকে সেই মর্যাদা দিতে পারেন।”
যদিও বিজেপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যে নোটিস পাঠিয়েছে, সরকার তার জবাব দেবে। লোকপাল নিয়োগের জন্য কমিটি গঠনের ব্যাপারে কী বিকল্প সূত্র বের করা যায়, তা নিয়ে বিবেচনা চলছে। তবে তাঁর যুক্তি, ভোটে মানুষের সমর্থন মেলেনি বলেই বর্তমান লোকসভায় কংগ্রেস ওই পদ পায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy