গাঁধী পরিবারের বাইরের কেউ একদিন কংগ্রেস সভাপতি হবেন বলে মন্তব্য করলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। এ-ও বললেন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে রাহুল গাঁধীর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে ঠিকই। তবে তার মানে এই নয় যে, ভবিষ্যতে আর কোনও নেতার উত্থান ঘটবে না। একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন একাধিক বিস্ফোরক মন্তব্য করে দলের ভিতরে-বাইরে যথেষ্ট বিতর্ক উস্কে দিলেন বর্ষীয়ান দক্ষিণী নেতা।
কংগ্রেস সভানেত্রী পদে সনিয়া গাঁধীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছর। তার আগে দলের সাংগঠনিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। আনুষ্ঠানিক ভাবে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হবেন আগামী জুলাইয়ে। এমনই এক সন্ধিক্ষণে চিদম্বরম বললেন যে, দলের মনোবল তলানিতে। তাই কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব নিশ্চয়ই সক্রিয় হওয়ার জন্য কোনও ‘টাইম টেবল’ ঠিক করে রেখেছেন। কিন্তু সেই টাইম টেবলটাই একটু সংক্ষিপ্ত হওয়া দরকার। নইলে দলকে ঘুরে দাঁড় করানো যাবে না।
আর কী বলেছেন চিদম্বরম?
বলেছেন, “সভাপতি ও সহ-সভাপতির কাছে আমার আর্জি, আও বেশি কথা বলুন। মানুষের সঙ্গে যোগস্থাপন, সভা সমাবেশ করুন। কথা বলুন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও।” প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অবশ্য এ-ও বলেছেন, তাঁদের প্রজন্মে সনিয়াই সব থেকে গ্রহণযোগ্য নেত্রী। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, নতুন প্রজন্মের কথা বলতে গিয়ে প্রিয়ঙ্কা বঢরার প্রসঙ্গ যেমন তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন, তেমনই রাহুলের সম্ভাবনার দিকটিতেও তেমন কোনও গুরুত্ব দেননি।
চিদম্বরমকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, গাঁধী পরিবারের নন, এমন কেউ কি কংগ্রেস সভাপতি হতে পারেন? চিদম্বরম বলেন, “আমি তা-ই মনে করি। এক দিন না একদিন হতেই পারেন।” কবে? চিদম্বরম বলেন, “কবে তা বলতে পারব না।”
আপাত দৃষ্টিতে চিদম্বরম অযৌক্তিক কিছু বলেননি। কংগ্রেস সংবিধানেও কোথাও লেখা নেই যে নেহরু-গাঁধী পরিবার থেকেই সর্বদা কংগ্রেস সভাপতি মনোনীত হবেন। কিন্তু রাজধানীতে সম্প্রতি এই ধারণা জোরালো হচ্ছিল যে, আগামী বছর সভানেত্রী পদে মেয়াদ শেষ হলে সনিয়া আর পুনর্নির্বাচিত বা মনোনীত হতে চাইবেন না। তাঁর শরীরও ভাল নয়। কাজেই তিনি চাইবেন, সভাপতি পদে আনুষ্ঠানিক অভিষেক হোক তাঁর পুত্রের।
এই পরিস্থিতিতে একটি নির্দিষ্ট পরিবারের উপর কংগ্রেসের নির্ভরতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে সাক্ষাৎকারে। উত্তরে চিদম্বরম বলেন, “রাহুল একটি পরিবারের সদস্য। তাই তাঁকে ঘিরে আগ্রহ বেশি রয়েছে। কিন্তু সচিন পায়লটের মতো যোগ্য তরুণ নেতাও রয়েছেন কংগ্রেসে।” অবশ্য দু’বছর আগে জয়পুরে কংগ্রেসের মহা-অধিবেশনে রাহুলকে সহ-সভাপতি করা ‘সম্ভবত’ সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল বলেই মন্তব্য করেন চিদম্বরম। তাঁর কথায়, কংগ্রেসের ভিতরে ও বাইরে তখন তেমনই দাবি ছিল।
তবে অনেকেই মনে করছেন, সে দিনের জয়পুর আর বর্তমান দিল্লির মধ্যে বিস্তর ফারাক। রাহুলকে নিয়ে তখন কংগ্রেসে আশা ছিল। এখন কংগ্রেস নেতাদের একটা বড় অংশই তাঁর ভূমিকায় হতাশ। চিদম্বরমের কথায় তারই রেশ ধরা পড়ছে। চিদম্বরম নিজে হয়তো জানেন, কংগ্রেস সভাপতি হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ শীর্ষ স্তরে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা তেমন নেই। কিন্তু দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে রাহুল ছাড়াও অন্যান্য যোগ্য নেতা রয়েছেন বলে তিনি মনে করছেন। বস্তুত, চিদম্বরমের কথার সূত্র ধরে কংগ্রেসের এক অশীতিপর নেতাও আজ বলেন, “মোগল সাম্রাজ্যেও দেখা গিয়েছে পাঁচটি প্রজন্মের পর আর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা তাঁদের ছিল না। নেহরু-গাঁধী পরিবারের সদস্যদেরও তা বোঝা উচিত।”
কেউ কেউ অবশ্য মনে করছেন, গাঁধী পরিবারের বাইরের কোনও নেতাকে সভাপতি করার ভাবনা হাইকম্যান্ডের মাথাতেও আসতে পারে। কারণ, সনিয়া-রাহুলও বুঝতে পারছেন, প্রথমে মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থান সহ চার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন, তার পর লোকসভা ভোট, আর সম্প্রতি মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের ব্যর্থতার জন্য বারবার গাঁধী পরিবারই সমালোচনার মুখে পড়ছে। অথচ দায় যে শুধু তাঁদের, তা তো নয়। তা ছাড়া, কংগ্রেসে পরিবারতন্ত্র নিয়ে একটা নেতিবাচক মনোভাবও দেশের রাজনৈতিক ভাবনায় জোরালো হচ্ছে। এই অবস্থায় পরিবারের বাইরে থেকে কোনও নেতাকে সভাপতি করে দল পরিচালনা করা বুদ্ধিমত্তার কাজ হতে পারে।
তবে চিদম্বরমের মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র অজয় মাকেন বলেন, “উনি ভুল কিছু বলেননি। সনিয়া গাঁধীই এখন সর্বময় নেত্রী। রাহুল ভবিষ্যৎ নেতা। কিন্তু চিদম্বরমের মন্তব্যের অযথা ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy