নীরদকুমার রায়
পশ্চিমবঙ্গে পারলে ছত্তীসগঢ় পারবে না কেন, কেন বারবার সেখানে মাওবাদীদের হাতে খুন হতে হবে জওয়ানদেরএই প্রশ্নই তুলল নিহত সিআরপি ইনস্পেক্টর নীরদকুমার রায়ের পরিবার।
শনিবার ছত্তীসগঢ়ের বিজাপুরে ভোটকর্মীদের বাসে হামলা চালায় মাওবাদীরা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ১০০ কিলোমিটার দূরের দরভায় অ্যাম্বুল্যান্সে বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা। ওই অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে জগদলপুরে যাচ্ছিলেন সিআরপি-র ৮০ নম্বর ব্যাটেলিয়নের ১০ জন জওয়ান। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ইনস্পেক্টর নীরদকুমার রায় (৫২)-সহ পাঁচ জনের। ঘটনার ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যেই দুঃসংবাদ পৌঁছয় নদিয়া জেলার বীরনগরে, নীরদবাবুর বাড়িতে। বীরনগর স্টেশন থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে বীরনগর পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ‘বি’-ব্লকে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে নিহতের সংসার। বড় মেয়ে লিজা রায় দিগনগরে বেসরকারি কলেজে বিএড করছেন। ছোট মেয়ে পূজা যোগেশচন্দ্র কলেজে এমএসসি পড়ছেন। রবিবার দুপুরে বাড়িতে পৌঁছনোর আগেই কান্নার রোল শোনা যাচ্ছিল। বাড়ির সামনে ভিড় করে ছিলেন আত্মীয়-পরিজনেরা। দোতলা বাড়ির একতলায় চৌকির উপর কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন নীরদবাবুর স্ত্রী মনিকাদেবী ও দুই মেয়ে। দুঃসংবাদ পাওয়ার পর থেকেই নাওয়া-খাওয়া হয়নি তাঁদের। ছোট মেয়ে পূজা বলেন, “শনিবার সকালেই বাবা ফোন করে আমাদের সঙ্গে কথা বললেন। সবার খোঁজখবর নিলেন। কে জানত, সেটাই শেষ কথা!” রাতে নীরদবাবুর কফিনবন্দি দেহ এসে পৌঁছয় বীরনগরে। ‘গান স্যালুট’ হয় বীরনগর স্টেডিয়ামে। রানাঘাটের মহকুমাশাসক সুপর্ণকুমার রায় চৌধুরী বলেন, “যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অন্ত্যেষ্টি হয়েছে।” ছয় ভাই-দুই বোনের মধ্যে নীরদবাবু তৃতীয়। ছোটবেলায় খুব কষ্টে দিন কেটেছে তাঁদের। তবে ১৯৮১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পড়তে পড়তে নীরদবাবু সিআরপি-তে চাকরি পেলে সংসারের হাল ফেরে। এর পর পঞ্জাব, ত্রিপুরা, অসম-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কেটেছে ৩৩ বছরের কর্মজীবন। ছত্তীসগঢ়ে বদলিও বেশি দিনের নয়। ওখানে ৮০ নম্বর ব্যাটেলিয়নে ইনস্পেক্টর পদে ছিলেন নীরদবাবু।
বুধবারই বস্তার লোকসভা কেন্দ্রের বুরকাপাল এলাকায় ভোটকর্মীদের পৌঁছিয়ে ফেরার পথে মাওবাদীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান পাশের জেলা মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানার রঘুনাথপুর-পলিশার বাসিন্দা, কোবরা জওয়ান চন্দ্রকান্ত ঘোষ (২৫)। বারবার এমন ঘটনা ঘটায় ছত্তীসগঢ় সরকারকে দুষছে নীরদবাবুর পরিবার। তাঁদের কথায়, মাওবাদী-দমনে ছত্তীসগঢ় সরকারের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট ছিলেন নীরদবাবু। ওখানে রাজ্য পুলিশ তাঁদের সহায়তা করছে না বলে বেশ কয়েকবার ঘরোয়া আলোচনায় অভিযোগও করেছেন।
নিহতের দাদা প্রদ্যোৎকুমার রায় বলেন, “আমাদের রাজ্যের জঙ্গলমহলে মাওবাদী মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে রাজ্য সরকার। ছত্তীসগঢ়ের সরকারও যদি সদর্থক ভূমিকা নিত, তা হলে এ ভাবে মাওবাদীরা একের পর এক জওয়ানকে খুন করতে পারত না।” কথার মাঝেই এক আত্মীয় মিনতি সূত্রধর বলেন, “কাগজ খুললে, টিভি দেখলেই শুনছি, মাওবাদীরা লোকজনদের মারছে। ওদের কি শেষ করে দেওয়া যায় না? ওখানে প্রশাসন কী করছে, বুঝতে পারছি না!” কান্নার রোলে ঢাকা পড়ে যায় ক্ষোভের গলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy