Advertisement
১৮ জুন ২০২৪

তথ্য ফাঁসের পরিধি নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র

তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই পরিধি বাড়ছে সরকারি তথ্য ফাঁস কেলেঙ্কারির। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের তথ্য ফাঁসে এখনও পর্যন্ত মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কয়েকটি কর্পোরেট সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মীও। গোয়েন্দারা বুঝতে পারছেন তথ্য ফাঁস চক্রের জাল ছড়িয়ে পড়েছে কার্যত গোটা প্রশাসনেই। আবার এই কেলেঙ্কারিতে ধৃত প্রাক্তন সাংবাদিক শান্তনু শইকিয়া আজ দাবি করেছেন, আসলে তিনিই ১০ হাজার কোটি টাকার এক কেলেঙ্কারির তদন্ত করছিলেন। তা চাপা দিতেই তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের তথ্য ফাঁস কাণ্ডে ধৃত পাঁচ কর্পোরেট কর্মী।  ছবি:পিটিআই

পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের তথ্য ফাঁস কাণ্ডে ধৃত পাঁচ কর্পোরেট কর্মী। ছবি:পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫০
Share: Save:

তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই পরিধি বাড়ছে সরকারি তথ্য ফাঁস কেলেঙ্কারির।

পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের তথ্য ফাঁসে এখনও পর্যন্ত মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কয়েকটি কর্পোরেট সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মীও। গোয়েন্দারা বুঝতে পারছেন তথ্য ফাঁস চক্রের জাল ছড়িয়ে পড়েছে কার্যত গোটা প্রশাসনেই। আবার এই কেলেঙ্কারিতে ধৃত প্রাক্তন সাংবাদিক শান্তনু শইকিয়া আজ দাবি করেছেন, আসলে তিনিই ১০ হাজার কোটি টাকার এক কেলেঙ্কারির তদন্ত করছিলেন। তা চাপা দিতেই তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক থেকে চুরি যাওয়া তথ্য শান্তনু শইকিয়ার ওয়েব পোর্টাল মারফত কর্পোরেট সংস্থাগুলি হাতে পেত বলে অভিযোগ পুলিশের। কিছু তথ্য সরাসরি বিক্রি করা হতো বলেও দাবি করেছে তারা। কিন্তু আজ ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসে নিয়ে যাওয়ার সময়ে শইকিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “আমি নির্দোষ। আমার কাছে গোপন নথি ছিল না। ১০ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারির তদন্ত করছিলাম। তা চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।” শইকিয়ার দাবি উড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, “নিজের দোষ চাপতে এ কথা বলছেন শইকিয়া। যা বলার তিনি পুলিশকে বলুন।”

তথ্য ফাঁস কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন শৈলেশ সাক্সেনা, বিনয় কুমার, কে কে নাইক, সুভাষ চন্দ্র ও ঋষি আনন্দ নামে পাঁচ কর্পোরেট কর্মী। আজ ওই পাঁচ জনকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। তবে নথি ফাঁস কাণ্ডে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের একাধিক যুগ্ম সচিবেরও ভূমিকা থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কথায়, “কাউকে ছেড়ে কথা বলা হবে না। এই তথ্য ফাঁসের পিছনে সরকার-বিরোধী ষড়যন্ত্রও থাকতে পারে।” ধৃত সরকারি অস্থায়ী কর্মীদের কাছ থেকে দু’বস্তা সরকারি কাগজ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। বিশেষত প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সংক্রান্ত তথ্য কার হাতে গিয়েছে তা খুঁজে পেতে মরিয়া কেন্দ্র। পুলিশ জানিয়েছে, ফাঁস হওয়া নথি জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তাই ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি গোপনীয়তা আইনে মামলা হতে পারে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের মতে, যে ভাবে এই চক্র জাল ছড়িয়েছে তা এক দিনের কাজ নয়। তথ্য ফাঁসের বিষয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে প্রথম তথ্য আসে গত অক্টোবর মাসে। জানা যায়, অর্থের বিনিময়ে সরকারের নীতি ও গোপন তথ্য বিক্রি হয়ে যাচ্ছে কর্পোরেট সংস্থাগুলির কাছে। বিষয়টি জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। সূত্রের খবর, বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে তদন্তের নির্দেশ দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। সরকারের কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরেই ফাঁদ পাতার সিদ্ধান্ত নেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরোর অফিসাররা।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছিল, শাস্ত্রী ভবনে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের অস্থায়ী কর্মীরা গভীর রাতে নকল চাবি দিয়ে মন্ত্রকের আমলাদের দরজা খুলে গোপন কাগজপত্র ও দস্তাবেজ চুরি বা ফোটোকপি করে নেয়। ওই কাজে অস্থায়ী কর্মীদের সঙ্গে নৈশরক্ষীদের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে সন্দেহ করেন গোয়েন্দারা। তাই প্রথমেই গোয়েন্দারা পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের আশপাশে কর্মরত নৈশরক্ষীদের সরিয়ে নিজেরা পাহারার ভার নেন।

এর পর শুরু হয় তথ্য সংগ্রহ। জোগাড় করা হয় ভিডিও ফুটেজ। অবশেষে পাকড়াও হয় পাঁচ অস্থায়ী ও প্রাক্তন সরকারি কর্মী। তাদের জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

accused 5 employee petroleum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE