দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। ঠিক সেই সময় চুরাশির শিখ-বিরোধী দাঙ্গার তদন্তে সিট গঠন হবে বলে ইঙ্গিত দিল কেন্দ্রীয় সরকার। সূত্রের খবর, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জি পি মাথুরের কমিটির সুপারিশ মেনেই সিট বা বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজনাথ সিংহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এখন নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি বলবৎ রয়েছে বলে ভোটের পরে সরকারি ভাবে এই ঘোষণা হবে।
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে আসলে বিজেপির দিল্লির শিখ ভোট জয়ের চেষ্টা বলে আখ্যা দিয়েছে অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি (আপ)। কেজরীবালের অভিযোগ, তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েই শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় সিট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মোদী সরকার সেই সিদ্ধান্তকে হিমঘরে পাঠিয়ে দেয়। গত নয় মাস ধরে বসে থাকার পর কেন্দ্র এখন ভোটের মুখে এই ঘোষণা করছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, এর সবটাই বিজেপির রাজনৈতিক চাল। দলের মুখপাত্র রণদীপ সূর্যেওয়ালা বলেন, “দিল্লির ভোটারদের মন জিততে এটা আসলে প্রধানমন্ত্রী মোদীর গিমিক।” স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর পাল্টা যুক্তি, “সব কিছুর মধ্যে রাজনীতি খোঁজার কোনও অর্থ নেই।”
রাজনীতিকরা অবশ্য মনে করছেন, ইন্দিরা-হত্যার পর শিখ-বিরোধী দাঙ্গার তদন্তে সিট গড়ার কথা বলে আসলে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে বিজেপি। এক, দিল্লির শিখ ভোট পকেটে পুরে ফেলা। দুই, কংগ্রেসকে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে ফেলা। কারণ সিট গঠন হলে ফের জগদীশ টাইটলার, সজ্জন কুমারের মতো কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। কংগ্রেসের একেবারে অন্দরমহলের দিকেও আঙুল উঠতে পারে।
বিজেপির দিকে শিখ ভোট ঝোঁকার ইঙ্গিত দিয়ে আজই দিল্লি শিখ গুরুদ্বার কমিটির প্রধান তথা অকালি দল নেতা মনজিৎ সিংহ সিট গঠনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। আজ সকালেই তাঁর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহর সঙ্গে দেখা করেন। মাথুর কমিটির সুপারিশ মেনে সিট গঠনের দাবি জানান তাঁরা। সেখানেই রাজনাথ সিট গঠনের ইঙ্গিত দেন। মনজিৎ বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রীকে মাথুর কমিটি গঠনের জন্য ধন্যবাদ জানাই। সিট গঠনের জন্য সরকারের আর সময় নষ্ট করা উচিত নয়। এমনিতেই ৩০ বছর দেরি হয়ে গিয়েছে।” পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদলও এখনই সিট গঠনের দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় থেকেই বিজেপি জোর গলায় শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় নিহতদের পরিবারকে সুবিচার দেওয়ার কথা বলে এসেছে। কিছু দিন আগেই দাঙ্গায় নিহতদের পরিবারের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা করে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণের কথাও ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। নিহতদের পরিবারকে সুবিচার দেওয়ার রাস্তা খুঁজতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মাথুর কমিটি গড়ে। তিন মাস সময় দেওয়া হলেও ৪৫ দিনের মধ্যেই রিপোর্ট জমা দিয়েছে কমিটি। কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, পুলিশের খাতায় শিখ-বিরোধী দাঙ্গার এমন ২২৫টি মামলা রয়েছে, যার ফের তদন্ত প্রয়োজন। কারণ ওই সব মামলায় যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ চার্জশিট পেশ করেনি। ফলে আদালত পর্যন্ত মামলা গড়ানোর আগেই পুলিশ ওই সব তদন্ত বন্ধ করে দেয়। বহু মামলা আবার দুর্বল ভাবে সাজানো হয়েছিল বলে আদালতে খারিজ হয়ে যায়। সেই সব মামলায় কিছু করা না গেলেও যে মামলাগুলি আদালতে পৌঁছয়নি, সেগুলি ফের তদন্ত করে দেখতে পারে সিট।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, এর মধ্যে কংগ্রেস নেতা জগদীশ টাইটলার ও সজ্জন কুমারের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারের বিরুদ্ধে ১৯৯২ সালে চার্জশিট তৈরি করলেও পুলিশ তা কখনও পেশ করেনি। নিহতদের পরিবারের অভিযোগ ছিল, এই সব মামলায় তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক চাপে তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। অভিযোগ, ইন্দিরা-হত্যার পর কংগ্রেস নেতাদের নির্দেশেই দিল্লিতে শিখদের বাড়িতে হামলা হয়েছিল।
সরকারি হিসেবে শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় নিহত ৩৩২৫ জনের মধ্যে ২৭৩৩ জনই দিল্লির। এর আগে বিচারপতি নানাবতী কমিশন সুপারিশ করেছিল, যে ২৪১টি মামলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ৪টি মামলার নতুন করে তদন্ত হতে পারে। সিবিআই ওই মামলার তদন্ত করেছিল। এর মধ্যে দু’টি মামলায় চার্জশিট পেশ হয়েছে। একটিতে কংগ্রেসের এক প্রাক্তন বিধায়ক-সহ পাঁচ জন দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy