অঞ্জন দত্তের ছবিতে মালা দিচ্ছেন কংগ্রেস অনুগামীরা। বৃহস্পতিবার হাইলাকান্দিতে। ছবি: অমিত দাস।
ভোটের পর সপরিবার দক্ষিণ আফ্রিকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন অসম প্রদেশ কংগ্রেসের ‘সেনাপতি’। সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দেশে ফিরিয়ে এনে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল দিল্লির হাসপাতালে। সেখানেই আজ সকাল সওয়া ৭টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত। বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নিউমোনিয়া নিয়ে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। গত কাল তিন বার তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়।
১৯৫২ সালের ১৩ এপ্রিল শিবসাগরে অঞ্জনবাবুর জন্ম। থানেশ্বর দত্ত ও অঞ্জলীদেবীর ছেলে অঞ্জন বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রথমে পারিবারিক ব্যবসায় নামেন, পরে নাম লেখান যুব কংগ্রেসে। থানেশ্বরবাবু ছিলেন শিবসাগর পুর বোর্ডের চেয়ারম্যান। তাঁকে আধুনিক শিবসাগর শহরের রূপকারও বলা হয়।
যুব কংগ্রেস সভাপতি হওয়া অঞ্জনবাবু ১৯৯১ সালে আমগুড়ি থেকে প্রথম বার বিধায়ক নির্বাচিত হন। ২০০১ ও ২০১১ সালে একই কেন্দ্র থেকে ফের জেতেন। শুধু রাজনীতি নয়, তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল সাহিত্য, সাংবাদিকতা, ক্রীড়াক্ষেত্রেও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি তিনি অসম অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপ-সভাপতি, শিবসাগর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি, অসম ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন। মাহেকিয়া অনুভূতির সম্পাদক ছিলেন তিনি। ছিলেন একটি অসমীয়া সংবাদপত্রের ম্যানেজিং এডিটর। (সেই সংবাদপত্র সুদীপ্ত সেনকে বিক্রি করার সুত্রেই সারদা তদন্তে তাঁর নাম জড়ায়।) শিবসাগরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অঞ্জনবাবুর অনেক অবদান ছিল। ১৯৮৬ সালে অনন্যা দত্তর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের তিন কন্যা। বিধানসভা ভোটে অসমের বিভিন্ন প্রান্তে দলীয় প্রচারের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। নিজের আসন ছেড়ে দিয়েছিলেন বড় মেয়ে অঙ্কিতাকে।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, ‘‘দলের ভাল দিনেই নয়, খারাপ দিনেও অঞ্জনবাবু ছিলেন একনিষ্ঠ কর্মী ও বড় ভরসা।’’
গগৈ জানান, পরিবহণমন্ত্রী থাকাকালীন মুমূর্ষু রাজ্য পরিবহণ দফতরের চেহারাই বদলে দিয়েছিলেন অঞ্জনবাবু। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী থাকার সময়ই রাজ্য চা নিগমকে নতুন জীবন দেন। গগৈ বলেন, ‘‘এ বারের ভোটে গোটা রাজ্য ঘুরলেন অঞ্জন। কত কিলোমিটার পদযাত্রা করেছেন। শরীর বেশ ভাল ছিল। এ ভাবে নিউমোনিয়ায় তাঁর মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। তাঁর মৃত্যু শুধু কংগ্রেসের ক্ষতি নয়, গোটা রাজ্যের রাজনীতির পক্ষে ইন্দ্রপতন।’’
২০১৪ সাল থেকে প্রদেশ কংগ্রেসে একাংশ বিধায়কের বিদ্রোহ যে ভাবে সামলেছিলেন অঞ্জনবাবু, রাজীব ভবনের স্মৃতিচারণে সেই কথা উল্লেখ করেন প্রাক্তন মন্ত্রী প্রদ্যোৎ বরদলৈ। তিনি জানান, তাঁর দুরদর্শিতা ও দলের প্রতি আনুগত্যই কংগ্রেসকে বিপদের দিনে টিঁকিয়ে রেখেছিল। ভূমিধর বর্মনের পৌরোহিত্যে হওয়া স্মরণসভায় গগৈ, বরদলৈ ছাড়াও রকিবুল হুসেন, শৈলেন বরা, আবদুল খালেক অঞ্জনবাবুর স্মৃতিচারণ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেন, ‘‘সারা জীবন একান্ত নিষ্ঠার সঙ্গে রাজনীতি করা দত্তকে অসমবাসী চিরকাল মনে রাখবে। বিধায়ক ও মন্ত্রী হিসেবে তিনি মানুষের উন্নয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। রাজ্য এক অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্বকে হারাল।’’
গত ১২ মে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরার পরই দিল্লির হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল অঞ্জনবাবুকে। বুকে ব্যথা অনুভব করায় তাঁকে আইসিইউয়ে ভর্তি করা হয়। আজ অঞ্জনবাবুর মৃত্যুর খবর পেয়ে সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী, তরুণ গগৈয়ের পুত্র তথা কলিয়াবরের সাংসদ গৌরব গগৈ, প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায়রা হাসপাতালে হাজির হন।
নিউমোনিয়া থেকে মৃত্যু মানতে পারছেন না অঞ্জনবাবুর পরিবার। তাঁদের সঙ্গে এ দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তর্কাতর্কিও হয়।
আজ সন্ধেয় দিল্লি থেকে বিশেষ বিমান অঞ্জনবাবুর দেহ গুয়াহাটি আনা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় অনুভূতি প্রেস, রুক্মিণীগাঁওয়ের বাড়ি হয়ে রাজীব ভবনে। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামে। রসিক, পরোপকারী, বন্ধুবৎসল ও পরিবারপ্রেমী অঞ্জনবাবু সকলের প্রিয়পাত্র ছিলেন। রাজনৈতিক বিরোধ সরিয়ে এ দিন সব দলের নেতারাই দত্তকে শ্রদ্ধা জানান।
বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া জানান, আগামী কাল শিবসাগরের গৌরীসাগরে অঞ্জনবাবুর অন্ত্যেষ্টি হবে। আমগুড়ি, শিবসাগরে সাধারণ মানুষের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কিছুক্ষণ দেহ রাখা হবে। ১৫ দিন অর্ধনমিত থাকবে দলের পতাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy