একসময়ে তিনি ব্রাত্য ছিলেন মার্কিন মুলুকে। কিন্তু এ বছর সেই নরেন্দ্র মোদীরই আমন্ত্রণে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। দুই রাষ্ট্রনায়কের সেই সাক্ষাৎ যে নিছক সৌজন্য বিনিময়েই আটকে থাকবে না, সে কথা সোমবার গাঁধীনগরে এক সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়ে দিলেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন, কথা এগোতে পারে অসামরিক পরমাণু সহযোগিতার মতো বিষয়েও।
ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি সই হয়েছিল ২০০৮ সালে। তার জেরে ভারতের অসামরিক পরমাণু ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুযোগ পায় মার্কিন সংস্থাগুলি। কিন্তু ২০১০ সালে পাশ হওয়া পরমাণু দায়বদ্ধতা আইনের জটে বিনিয়োগের গোটা প্রক্রিয়াই থমকে যায়। কারণ সেখানে বলা হয়েছিল, কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে ইউরেনিয়াম সরবরাহকারী মার্কিন সংস্থাগুলিকেই ক্ষতিপূরণের বিশাল অঙ্ক দিতে হবে। এই শর্ত মেনে নিলে মুনাফা বলতে হাতে কিছুই থাকবে না এই যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল আমেরিকা। তার পরেও আইন বদলাতে রাজি হয়নি তৎকালীন ইউপিএ সরকার।
কিন্তু মোদী ক্ষমতার আসার পর যে ভাবে বিদেশি বিনিয়োগকে বারবার আহ্বান জানিয়েছেন, তাতে নতুন করে ভরসা পেয়েছে মার্কিন প্রশাসন। বিশেষত এই জট কাটানোর জন্য চলতি মাসের গোড়ার দিকে যে ভাবে আইন বিষয়ক পরামর্শদাতা সংস্থা ‘বিধি সেন্টারের’ সুপারিশ পেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, তাতে আরও আশ্বস্ত হয় আমেরিকা। তখন থেকেই কানাঘুষো চলছিল, এ বারের ওবামা-মোদী বৈঠকের পর হয়তো অসামরিক পরমাণু চুক্তির জট কাটতে পারে। কেরির এ দিনের মন্তব্য সেই বিষয়েই ইঙ্গিত মিলেছে।
তবে শুধু অসামরিক পরমাণু সহযোগিতা নয়, আর্থিক সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ-সহ বিভিন্ন বিষয়েও মোদী-ওবামা বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে জানান কেরি। এর পাশাপাশি, ভারতের ঘরে ঘরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের যে আশ্বাস মোদী দিচ্ছেন, তা বাস্তবায়িত করতে সাহায্যের আশ্বাস দিলেন কেরি। মোদীর সঙ্গে তাঁর জলবায়ু পরিবর্তন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির গুরুত্ব নিয়েও কথা হয়। অর্থাৎ, দু’সপ্তাহ পর মোদী-ওবামা বৈঠকে যে যে বিষয় নিয়ে কথা হতে চলেছে, তারই একটা সূচিপত্র এ দিন দিয়ে গেলেন কেরি।
মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করার চেষ্টা শুরু করেছে আমেরিকা। প্রথম আমেরিকা-সফরেই ব্যাপক অভ্যর্থনা পেয়েছেন মোদী। কখনও আবার তাঁর কর্মক্ষমতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ওবামা। কেরি এ দিন জানান, ক্ষমতায় থাকাকালীন এই প্রথম কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট দু’বার ভারত-সফরে আসছেন। কেরির দাবি, ভারতকে আমেরিকা ঠিক কতটা গুরুত্ব দেয়, সেটা এ থেকেই স্পষ্ট।
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকের পর হঠাৎই পাকিস্তান চলে যান কেরি। তবে এ নিয়ে জল্পনা শুরুর আগেই মার্কিন প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, সন্ত্রাস-বিরোধী লড়াইয়ে পাকিস্তানের পাশে থাকতেই কেরির এই সফর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy