হাওড়ার বাসিন্দার সাইবার জালিয়াতি চোখ খুলে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী দফতরের।
রেল বা সেনায় নিয়োগের জন্য ভুয়ো ওয়েবসাইটের খোঁজ আকছারই মেলে। কিন্তু খোদ প্রধানমন্ত্রীর নাম ও ছবি ব্যবহার করে ঋণ দেওয়ার টোপ ফেলেও যে জালিয়াতি সম্ভব, তা দেখে কার্যত থ হয়ে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদীর দফতরের অফিসারেরা। তাঁদের আশঙ্কা, হাওড়ার সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের মতো আরও অনেক চরিত্র গোটা দেশে ছড়িয়ে রয়েছেন। নিজেদের নকল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমজনতাকে প্রলুব্ধ করে জালিয়াতির ব্যবসা করে চলেছেন তাঁরা। তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাইবার অপরাধ দফতরকে একটি বিশেষ দল গঠন করে অবিলম্বে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে ট্রানজিট রিমান্ডে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সুদীপ্তকে। তাঁকে জেরা করে জানার চেষ্টা হচ্ছে, তাঁর সঙ্গে ওই চক্রে আর কে বা কারা জড়িত ছিল। ওই চক্রে জড়িত সন্দেহে স্নেহাংশু জানা নামে হাওড়ার বাসিন্দা এক ব্যক্তিকে গত কাল গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত বছরের শেষে এই জাল ঋণ চক্রটির কথা জানতে পারে পুলিশ। তদন্তে নেমে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট বানিয়ে ‘প্রধানমন্ত্রী আদর্শ যোজনা’ নামের একটি হোম পেজ তৈরি করা হয়েছে। মোদীর ছবি ও অশোক স্তম্ভ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নাম করে সাধারণ মানুষকে ঋণ নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে সেখানে। তবে এই ঋণ পেতে গেলে গ্রাহককেই আগে মোট ঋণের একটি অংশ ‘সিকিওরিটি ডিপোজিট’ হিসেবে জমা রাখতে হবে। দিল্লি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই টাকাই হাতিয়ে নিতেন সুদীপ্ত। শতাধিক মানুষ তাঁর শিকার হয়েছেন।
ভুয়ো ওয়েবসাইটটি দেখে দিল্লি পুলিশই প্রথমে ধোঁকা খেয়ে গিয়েছিল। অফিসারদের বক্তব্য, এমন দক্ষতার সঙ্গে সাইটটি বানানো হয়েছে যে, প্রথম দৃষ্টিতে মনে হবে সেটি সত্যিই সরকারি সাইট। কিন্তু ইংরেজি ও হিন্দিতে লেখাগুলি পড়ে প্রথম সন্দেহ জাগে পুলিশের। প্রধানমন্ত্রী যেখানে রাষ্ট্রভাষা ব্যবহারে জোর দিয়ে থাকেন, সেখানে দেখা যায়, ওই সাইটটিতেই ভুল হিন্দি লেখা রয়েছে। এর পরেই সব দিক আটঘাট বেঁধে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি পুলিশ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ওই সাইটিকে ভুয়ো বলে চিহ্নিত করে। তদন্তে দেখা যায়, ওই সাইটের যে আইপি অ্যাড্রেস রয়েছে, তার সার্ভার রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। শেষ পর্যন্ত সাইটে দেওয়া নম্বরে ফোন করে ফাঁদ পাতে দিল্লি পুলিশ। যে ফাঁদে ধরা পড়ে সুদীপ্ত।
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, কেন্দ্র বর্তমানে বিভিন্ন খাতে ঋণ দিয়ে থাকে। সেই সুযোগটাই নিয়েছিলেন সুদীপ্ত। তাই সন্দেহ করা হচ্ছে, গোটা দেশে এই ধাঁচের একাধিক চক্র সক্রিয় থাকতে পারে। এই ধরনের সাইটগুলিকে চিহ্নিত করা ও সেগুলির পাণ্ডাদের গ্রেফতার করারই ভার দেওয়া হয়েছে সাইবার ক্রাইম শাখার বিশেষ দলটিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy