বাসার টান বড় টান! বিশেষ করে, তা যদি হয় ল্যুটিয়ান দিল্লির চোখ ধাঁধানো সরকারি বাংলো।
খাঁড়া ঝুলছে মাথার উপরে। আর ছ’দিন বাদেই ফল বেরোবে লোকসভা ভোটের। কে জিতবেন, জিতলেও মন্ত্রিত্বের শিকে কার ভাগ্যে ছিঁড়বে, সে সব প্রশ্ন বহু দূরের। এমন একটা সময়ে বিভিন্ন দলের ২২ নেতাকে বিতর্কে টেনে আনল তথ্যের অধিকার আইন (আরটিআই)-এ সরকারি নথি। তাতে দেখা যাচ্ছে, বছর দু’য়েক আগেই ওই ২২ জন মন্ত্রিত্ব থেকে সরে গিয়েছেন। কিন্তু ছাড়েননি মন্ত্রী হিসেবে পাওয়া বাংলো। এই প্রাক্তন মন্ত্রীদের মধ্যে ৭ জনই তৃণমূলের!
তালিকায় রয়েছেন লালুপ্রসাদ ও বুটা সিংহও, যাঁরা এখন আর সাংসদও নন। আরটিআই-এ আবেদনকারী সুভাষচন্দ্র অগ্রবালকে লেখা উত্তরে কেন্দ্র জানিয়েছে, সাংসদ না হওয়া সত্ত্বেও ওই দু’জন মন্ত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট বাংলোতে থাকতে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁরা আগের বাংলোয় থাকছেন। সেই নির্দেশ সংবলিত চিঠির একটি কপিও সুভাষচন্দ্রকে দেওয়া হয়েছে। এই ‘ঘরকুনো’ প্রাক্তন মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এ রাজা, দয়ানিধি মারান, পবন কুমার বনশলরাও।
কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের দেওয়া নথিতে বলা হচ্ছে গত বছর জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল। তবু কেন এঁরা বাংলো ছাড়েননি? তৃণমূলের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা অবশ্য এর জন্য পাল্টা দুষছেন কেন্দ্রকেই।
লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজধানীর আস্তানা ১-বি মৌলানা আজাদ রোড। বাংলোটি তাঁর প্রাক্তন অফিস নির্মাণ ভবনের ঠিক উল্টো দিকে, এবং আগে অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন এই বাড়িটিতে থাকতেন। সরকার থেকে তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরেও, অর্থাৎ সুদীপবাবু পদত্যাগ করার পরেও বাড়িটি সুদীপবাবুর নামেই রয়েছে। সুদীপবাবু অবশ্য বলছেন, “তিন বারের সাংসদ হিসেবে এমনিতেই টাইপ-এইট বাংলো আমার পাওয়ার কথা। তা ছাড়া তৃণমূলের সংসদীয় দলনেতা হিসেবে রেওয়াজ অনুযায়ী একটি বিশেষ সংসদীয় মর্যাদা আমার রয়েছে। ফলে মন্ত্রী থাকি বা না থাকি এটি বা এই ধরনের কোনও বাংলোই আমার প্রাপ্য।” মন্ত্রী হওয়ার আগে সাংসদ হিসেবে তিনি থাকতেন ৫ নম্বর তালকাটোরা রোডে, তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পাশেই। তাঁর কথায়, “সেই বাংলোটিও যথেষ্ট বড় এবং সুন্দর ছিল। এমনকী আমি এবং আমার স্ত্রী তো সেই বাংলোটি ছাড়ার আগে অনেক বার ভেবেছিলাম।”
তালিকায় রয়েছে লোধি এস্টেটে প্রাসাদোপম বাংলোর অধিকারী প্রাক্তন পর্যটন মন্ত্রী সুলতান আহমেদের নাম। তিনি অবশ্য ‘তিন বারের সাংসদ’ নন। কিন্তু এই অভিযোগের জবাবে তিনি দায় চাপালেন সরকারের উপরেই। বললেন, “আমি মন্ত্রী নেই বলে তো আর ফুটপাথে থাকতে পারি না! সাংসদ হিসেবে যখন রয়েছি তখন দিল্লি গিয়ে কাজ তো করতে হবেই। থাকব কোথায়! না আমাকে কোনও অন্য বাসা দেখে দেওয়া হয়েছে, না কোনও নোটিস দিয়ে বলা হয়েছে উঠে যেতে হবে। সাংসদ হিসেবে একটি বাসস্থান তো আমার এমনিতেই প্রাপ্য। সেটা স্পিকার এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রক স্থির করে আমাকে জানালেই তো পারতেন। এখন এই সব কাদা ছোড়াছুড়ির অর্থ কী?”
রয়েছে মুকুল রায়, শিশির অধিকারী, সৌগত রায়দের নাম। প্রত্যেকেই এই মুহূর্তে রাজ্যের ভোট প্রচারে ব্যস্ত। তারই মধ্যে সৌগত রায় জানাচ্ছেন, “তিন বছর আগে যখন মন্ত্রিত্ব ছেড়েছি, তার পরেও তো সাংসদ ছিলাম। সাংসদ পদ তো আর যায়নি। সুতরাং বিষয়টি বেআইনি বা অন্যায় কিছু নয়। সাংসদ হিসেবে একটি বাংলো আমরা পাই এবং সেখানে ভাড়া দিয়েই থাকছি।” ইন্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার (আইআইসি)-এর কাছেই লোধি এস্টেটে প্রাক্তন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী সৌগত রায়ের সুবিশাল টাইপ সেভেন বাংলো। তাঁর দাবি, “আমাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যে, বাংলোটি আমি সাংসদ হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।”
লালুপ্রসাদের বিষয়টি যথেষ্ট অভিনব। মন্ত্রক থেকে যে নথিপত্র দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, তাঁর সাংসদপদ খারিজ হওয়ার পর ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁর ২৫ নম্বর তুঘলক রোডের বাসস্থানটির ‘অ্যালটমেন্ট’ বাতিল করে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক তাঁকে বাড়ি খালি করার জন্য নোটিসও দেয়।
কিন্তু লালু তা করেননি। বরং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে লেখা চিঠিতে তিনি জানান যে তাঁর হৃদ্যন্ত্র এবং ডায়াবেটিস সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। তাই এই বাড়িটিতে থাকা তাঁর জন্য জরুরি! তাঁর নাতনিও নিকটবর্তী সংস্কৃতি স্কুলে পড়ে। ফলে তার পক্ষে অন্যত্র যাওয়া সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর অনুরোধ মেনে কিছুটা কম ভাড়ায় বাড়িটিতে লালুকে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy