Advertisement
২৪ মে ২০২৪

রাজ্যপাল নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে নিষেধ মোদীর

রাজ্যপালদের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে ধীরে চলার পরামর্শ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোদীর মত খুব স্পষ্ট। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যপালরা নিজে থেকে পদ না ছাড়লে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া তাঁদের সরানো যায় না। সুপ্রিম কোর্টের রায়ও তাই বলে। সুতরাং এ নিয়ে অহেতুক তাড়াহুড়ো করে বিতর্ক ডেকে আনা অর্থহীন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৪ ০২:৪২
Share: Save:

রাজ্যপালদের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে ধীরে চলার পরামর্শ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

মোদীর মত খুব স্পষ্ট। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যপালরা নিজে থেকে পদ না ছাড়লে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া তাঁদের সরানো যায় না। সুপ্রিম কোর্টের রায়ও তাই বলে। সুতরাং এ নিয়ে অহেতুক তাড়াহুড়ো করে বিতর্ক ডেকে আনা অর্থহীন।

গত কয়েক দিনে বেশ কয়েক জন কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ রাজ্যপালের কাছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামীর ফোন যাওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছে খোদ রাজনাথ সিংহের মন্তব্য, যেখানে তিনি বলেছেন, “আমি এই অবস্থায় থাকলে পদত্যাগ করতাম।” উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল বি এল জোশী এবং ছত্তীসগঢ়ের শেখর দত্ত ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করলেও অন্য কয়েক জন কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ রাজ্যপাল বেঁকে বসেছেন। মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল কে শঙ্করনারায়ণ সরাসরি বলেছেন, “স্বরাষ্ট্রসচিব দু’দু’বার ফোন করেছিলেন। কিন্তু মুখে বললে হবে না, সাংবিধানিক পদে আসীন রাজ্যপালকে সরাতে হলে লিখিত আকারে জানাক কেন্দ্র।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, সরকার আসলে মাত্র চার-পাঁচ জন রাজ্যপালকে সরাতে চাইছে। কিন্তু ইচ্ছা করে অনেক বেশি রাজ্যপালকে ফোন করানো হয়েছে, যাতে সেই ব্যক্তিরা আলাদা করে চিহ্নিত না হন। সরকারের এক শীর্ষ কর্তার মতে, এর মধ্যে অবশ্যই শীলা দীক্ষিতের মতো রাজ্যপাল রয়েছেন, যাঁকে কমনওয়েলথ গেমস দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বাঁচাতেই রাজ্যপাল করা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি রাজ্যের এক রাজ্যপালের বিরুদ্ধেও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আছে। মোদী সরকার কংগ্রেস আমলের দুর্নীতিতে যুক্ত কাউকে রেয়াত করতে চায় না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানলেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই এই রাজ্যপালদের সরানো যায়।

কিন্তু এ ক’দিনে বিষয়টি সরাসরি রাজনৈতিক রং নিয়ে নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তিতে আঁচ পড়ছে। বিজেপি সূত্রের মতে, মোদী নিজে বড়সড় রদবদলের পক্ষপাতী ছিলেন না কখনওই। কিন্তু দল ও সঙ্ঘের মধ্যে চাপ আছে কংগ্রেস আমলের নিয়োগ বাতিলের জন্য। এ ক্ষেত্রে রাজনাথ অনেক বেশি করে সঙ্ঘের অবস্থান মেনে কাজ করতে চাইছেন। সেই কারণে রাজ্যপালদের সরানোর বিষয়ে মোদীর থেকে অনেক বেশি উৎসাহ দেখিয়েছেন রাজনাথ।

কেন? প্রথমত রাজনাথ নিজে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি নিয়ে সক্রিয়। সে কারণে প্রথমেই তিনি উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপালের অপসারণ সুনিশ্চিত করেছেন। এখন উত্তরপ্রদেশের প্রবীণ নেতাদের বিভিন্ন রাজ্যের রাজভবনে পাঠিয়ে দিলে গোবলয়ের জমি রাজনাথের জন্য নিষ্কণ্টক হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত মোদী জমানায় রাজনাথ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে সরকারের দু’ নম্বর মুখ হয়েছেন বটে। কিন্তু আসল গুরুত্ব পেয়েছেন অরুণ জেটলিই। তা নিয়ে উষ্মা রয়েছে রাজনাথের। সে কারণেও তিনি বেশি করে সঙ্ঘের কথা মানতে চাইছেন। সঙ্ঘের নির্দেশেই দলের প্রবীণ নেতারা গত লোকসভা নির্বাচনে লড়েননি। এ বারে তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়ার তাগিদ রয়েছে। তা ছাড়া দলের অনেকেই মনে করেন, কেন্দ্রে সরকার বদলের পরে কংগ্রেসের নেতারা বিভিন্ন পদ আগলে বসে থাকবেনই বা কেন? রাজনাথ সুকৌশলে এই সুরটিকেই কাজে পরিণত করার চেষ্টা করছেন।

আজ জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান, জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস-এর (আইসিসিআর) প্রধানকে সরে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু রাজ্যপালদের সরানোর বিষয়টি যে রকম প্রত্যক্ষ ভাবে কংগ্রেস বনাম বিজেপি লড়াইয়ের আকার নিয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে একটু ধীরে চলাই বাঞ্ছনীয় বলে মনে করা হচ্ছে। আজ অরুণ জেটলির সঙ্গে বৈঠকের পর বিজেপি মুখপাত্র শাহনওয়াজ হোসেন বলেন, “আমরা তো কোনও রাজ্যপালকে সরে যেতে বলিনি। আমরা তাঁদের অন্তরাত্মার উপরেই বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছি।”

অতীতে বিজেপি যথেচ্ছ ভাবে রাজ্যপাল অপসারণের প্রবণতার বিরোধিতাই করে এসেছে। কেন্দ্রে ইউপিএ আসার পরে যখন চার রাজ্যের রাজ্যপালকে সরানো হয়, সেই সময় লালকৃষ্ণ আডবাণী লোকসভায় বলেছিলেন, এটি গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক প্রবণতা। এ ভাবে শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধিতার কারণে কোনও রাজ্যপালকে সরানো উচিত নয়। এমনকী চার বছর আগে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, সেটিও বিজেপি সাংসদ বি পি সিঙ্ঘলের আবেদনের ভিত্তিতেই।

কংগ্রেস নেতারা এখন বিজেপির সেই অবস্থানকেই পুঁজি করে আক্রমণে নামছেন। কংগ্রেস নেত্রী অম্বিকা সোনি আজ বলেন, “এ ভাবে স্বরাষ্ট্রসচিবকে দিয়ে ফোন করে রাজ্যপালদের উপরে চাপ বাড়ানোর কৌশল কেন নিচ্ছে মোদী সরকার? আসলে তারা নিজেদের লোকদের পদে বসাতে চায় বলেই এই খেলায় নেমেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

governors narendra modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE