কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী চাইলেও দুর্নীতি মোকাবিলার চারটি আইন বলবৎ করতে অর্ডিন্যান্স জারির সিদ্ধান্ত নিল না মনমোহন সিংহের সরকার। অথচ রাহুলের দাবি মেনেই এই সব অর্ডিন্যান্স নিয়ে আলোচনা করতে আজ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে প্রায় আড়াই ঘণ্টা আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত হল, দুর্নীতি মোকাবিলার আইন চালু করতে গিয়ে সংসদকে এড়িয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করা হবে না। আর মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের অন্দরের মতপার্থক্যকে প্রকাশ্যে এনে দিল বলেই অনেকের মত।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ যখন তুঙ্গে, তখন এই অর্ডিন্যান্সগুলিকে হাতিয়ার করে লোকসভার ভোট যুদ্ধে দুর্নীতি বিরোধী ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চাইছিলেন রাহুল। এই বিলগুলো যে সংসদে পাশ করা গেল না, সে জন্য বিরোধী বিজেপি-কেই দুষছিলেন তিনি। রাহুল-ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, বিরোধীরা সংসদ অচল করে রেখেছিল বলেই এই সব বিল পাশ করা যায়নি। যদিও বিজেপি-র পাল্টা অভিযোগ, তেলঙ্গানা প্রশ্নে সভার কাজ চলতে দেননি শাসক দলের সাংসদরাই।
এই পরিস্থিতিতে অর্ডিন্যান্স পাশ করে বিরোধী প্রচার ঠেকানোর যে পরিকল্পনা রাহুল করেছিলেন, দলের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের জন্য তা মাঠে মারা গেল। চলতি সপ্তাহেই লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাবে। চালু হয়ে যাবে আচরণবিধি। ফলে আজকের পরে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে অর্ডিন্যান্স পাশ করার সম্ভাবনা আর কার্যত নেই।
অর্ডিন্যান্স নিয়ে শাসক দলে মতবিরোধের উৎসটা কোথায়? কংগ্রেস সূত্রেই বলা হচ্ছে, খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ গোড়া থেকেই অর্ডিন্যান্স জারির পক্ষপাতী ছিলেন না। কারণ, তিনি মনে করেন, যে জরুরি পরিস্থিতি সামাল দিতে অর্ডিন্যান্স জারি করতে হয়, দুর্নীতিকে ঘিরে তেমন কোনও পরিস্থিতি আদৌ তৈরি হয়নি।
শুধু প্রধানমন্ত্রীর আপত্তি নয়, অর্ডিন্যান্স নিয়ে ইউপিএ তথা কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যেই যে মতবিরোধ রয়েছে, তা শুক্রবারই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ওই দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বল অর্ডিন্যান্স নিয়ে আপত্তি তোলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, রাজনৈতিক যৌক্তিকতা থাকলেও এই বিলগুলি তড়িঘড়ি পাশ করানোর কোনও প্রয়োজন নেই। তেমন কোনও জরুরি পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি। তাঁকে সমর্থন করেন কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার।
অর্ডিন্যান্স নিয়ে আপত্তি রয়েছে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়েরও। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বরাবরই সাংবিধানিক রীতিনীতি মেনে চলার পক্ষপাতী। ফলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা শেষ পর্যন্ত অর্ডিন্যান্সে ছাড়পত্র দিলেও প্রণববাবু তাতে সই করবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন ইউপিএ নেতৃত্ব।
অডিন্যান্স নিয়ে আপত্তি থাকায় এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলতে যেতে রাজি হননি মনমোহন। বিষয়টি আইন সংক্রান্ত, এই যুক্তিতে আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে সিব্বল এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দেকে রাষ্ট্রপতি ভবনে পাঠান তিনি। প্রণববাবুর সঙ্গে কথা বলে তাঁরা বুঝতে পারেন, রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক রীতিনীতি মেনে চলার পক্ষে। অর্ডিন্যান্স জারির মতো জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে চান তিনি। এর আগে দাগি সাংসদদের রক্ষা করতে তৈরি অর্ডিন্যান্স নিয়েও প্রণবের আপত্তি ছিল। সিপিএম সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটও আজ রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখে অর্ডিন্যান্সে সই না-করতে অনুরোধ করেছিলেন।
ইউপিএ-র বর্ষীয়ান নেতাদেরও যুক্তি ছিল, এমন নয় যে আজ অর্ডিন্যান্স জারি করলেই কাল থেকে সব দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে। নতুন সরকার এসেই অর্ডিন্যান্সকে আইনের চেহারা দেবে। কাজেই এ নিয়ে তাড়াহুড়ো করে কোনও লাভ নেই। আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকেও তাঁরা সেই যুক্তিতেই অনড় ছিলেন। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অনুকূল নয় বলেই আটকে গেল দুর্নীতি বিরোধী অর্ডিন্যান্স।
লোকসভা ভোটের আগে দুর্নীতি মোকাবিলার আইন পাশ করিয়ে রাহুল যাতে প্রচারের হাতিয়ার না-পেয়ে যান, তার জন্য সংসদে সক্রিয় ছিল বিজেপি। তার পর কংগ্রেস সহ-সভাপতি অর্ডিন্যান্স জারি করার জন্য জোরাজুরি শুরু করায় চিন্তায় ছিলেন তাঁরা। কিন্তু রাহুলের পরিকল্পনা আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় থমকে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই উৎফুল্ল বিজেপি শিবির।
বিরোধী দলগুলি এখন ইউপিএ সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে নতুন উদ্যমে মাঠে নামার পরিকল্পনা নিচ্ছে। উল্টো দিকে সরকারের তরফে প্রধান বিরোধী দলের উপরেই এর দায় চাপানো হচ্ছে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মনীশ তিওয়ারি বলেন, “প্রধান বিরোধী দলের বিরোধিতার জেরেই এই বিলগুলি নিয়ে সংসদে আলোচনা করা যায়নি। আমরা মনে করছি, এত গুরুত্বপূর্ণ বিল সংসদে আলোচনা ও বিতর্কের পরই পাশ করা উচিত। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে দুর্নীতির মোকাবিলায় ইউপিএ বা কংগ্রেস নেতৃত্বের দায়বদ্ধতা কমছে। এই বিলগুলি যাতে আইনে পরিণত হয়, তা আমরাই নিশ্চিত করব।”
নির্বাচন ঘোষণার আগে আজ মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে জাঠদের জন্য সংরক্ষণের কথা ঘোষণা হয়েছে। তেলঙ্গানা গঠনের পর অন্ধ্রপ্রদেশের পিছিয়ে পড়া এলাকার জন্য বিশেষ প্যাকেজের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুসলিম সংগঠনগুলির দাবি মেনে দিল্লির ১২৩টি সম্পত্তি ওয়াকফ বোর্ডের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy