দলের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি যে আসলে মানুষ সংখ্যালঘু তোষণ হিসাবে দেখছেন, সে ব্যাপারে ক’দিন আগেই হাইকম্যান্ডকে সতর্ক করেছিলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা এ কে অ্যান্টনি।
কংগ্রেসের সংখ্যালঘু নেতারাও চাইছিলেন না বিপর্যয়ের মরশুমে সনিয়া গাঁধী এ বার ইফতার পার্টির আয়োজন করুন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইফতার পার্টি না দেওয়ায়, রাতারাতি সিদ্ধান্ত বদল করে ফেললেন কংগ্রেস সভানেত্রী। সোমবার ঈদের চাঁদ দেখতে পাওয়ার কথা। তার আগে শেষ মুহূর্তে রবিবার সন্ধ্যায় ইফতার পার্টি আয়োজনের নির্দেশ দিলেন সনিয়া। আর তা নিয়েই এখন নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়েছে কংগ্রেসে।
কংগ্রেস সভানেত্রী যে ইফতার পার্টি দেবেন এটা কোনও নতুন খবর নয়। বরং সনিয়া ও রাহুল গাঁধী যে ইফতার পার্টি এ বার দিচ্ছেন না সেটাই ছিল বিস্ময়ের। ২০০৪ সালে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার আগে ২৪ নম্বর আকবর রোডে সনিয়া ইফতার পার্টির আয়োজন করতেন। গত দশ বছর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ তাঁর বাসভবনে ইফতার পার্টি দিতেন। তাই আলাদা ভাবে আর সেই আয়োজন করত না কংগ্রেস। বরং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে দলমত নির্বিশেষে নেতা, বিশেষত সংখ্যালঘু নেতারা নিমন্ত্রিত থাকতেন।
এখন কংগ্রেস ক্ষমতায় নেই। দলীয় সূত্রে খবর, কংগ্রেস দফতরে বা দশ নম্বর জনপথে ইফতার পার্টি আয়োজনের ব্যাপারে দিন পনেরো আগে থেকে সনিয়া উদ্যোগ নেন। একে একে অহমেদ পটেল, শাকিল আহমেদ, রশিদ অলভির মতো সংখ্যালঘু নেতাদের ডেকে তিনি জানতে চান ইফতার পার্টি কবে দিলে ভাল হয়? কিন্তু সূত্রের খবর, দলের অধিকাংশ সংখ্যালঘু নেতা জানিয়ে দেন ইফতার পার্টি দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। তাঁদের অনেকে সনিয়াকে এও বলেন যে, এ কে অ্যান্টনি ভুল কথা বলছেন না। কংগ্রেস যে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি করছে তাকে মানুষ সংখ্যালঘু তোষণ হিসেবেই দেখছেন। অন্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যখন সর্বভারতীয় কংগ্রেস কোনও আয়োজন করে না, তখন বেছে বেছে ইফতার দেবে কেন? তা ছাড়া বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসের সংখ্যালঘু নেতারা নিজ নিজ এলাকায় ইফতার পার্টি দিচ্ছেন। সেটাই যথেষ্ট।
কংগ্রেস সূত্র বলছে, সংখ্যালঘু নেতাদের সঙ্গে এই আলোচনার পরেই ঠিক হয় যে ইফতার পার্টি এ বার হবে না। কংগ্রেস রাজনীতিতে সেটাই ছিল খবর। দলের রাজনৈতিক কৌশল পরিবর্তন। কিন্তু কেন্দ্রে মোদী সরকারের পাল্টা কৌশলে কংগ্রেস ফের পুরনো পথে ফিরে গেল!
মনমোহন জমানার রীতি ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ বার সরকারের অন্দরে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, সরকার কোনও ইফতার পার্টির আয়োজন করবে না। বরাবর ইফতার পার্টি দেন রামবিলাস পাসোয়ান। কিন্তু মোদী মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ায় তাঁকেও এ বার ইফতার দিতে নিষেধ করেন মোদী। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী নজমা হেপতুল্লাকেও নিষেধ করা হয়। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আয়োজিত ইফতার পার্টিতেও উপস্থিত ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী। তিনি সে দিন মুম্বইতে ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের শীর্ষ সারির কিছু নেতা সনিয়া গাঁধীকে ফের বোঝান। বলেন, সংখ্যালঘুদের বার্তা দেওয়ার এটা একটা সুযোগ। কারণ, মোদী হিন্দুত্বের রাজনীতি করার জন্যই সরকারি ভাবে কোনও ইফতার পার্টি আয়োজন করছেন না। কৌশল করেই তিনি রাষ্ট্রপতির আয়োজিত ইফতার পার্টিতে যাননি। কংগ্রেসের উচিত এই মওকা হাত ছাড়া না করা। কংগ্রেসের এক সাধারণ সম্পাদক জানান, এমন অবস্থায় গতকালই মত বদলান সনিয়া। ঠিক হয়, রবিবার ইফতার পার্টি দেবেন তিনি।
কিন্তু সনিয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দলের এক সংখ্যালঘু নেতার কথায়, “সভানেত্রীকে কারা ভুল পরামর্শ দিচ্ছেন জানি না। কিন্তু ফের মোদীর পাতা ফাঁদে পা দিল কংগ্রেস।” তাঁর মতে, মোদী চাইছেন ধর্মীয় মেরুকরণের পরিবেশ জিইয়ে রাখতে। বিজেপি-র তাতেই লাভ। সনিয়ার ইফতার পার্টি মোদীর সেই রাজনীতিতেই অক্সিজেন যোগাবে! এ ব্যাপারে এ কে অ্যান্টনিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে দলের ওয়ার্কিং কমিটির এক নেতা আক্ষেপ করে বলেন, “কংগ্রেস হয়তো আরও বিপর্যয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। তাই ঠেকেও শিখছে না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy