এনডিএ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব তিনি পালন করবেন কি না তার ঠিক নেই। সত্যি বলতে কী, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় কী হবে তাঁর ভূমিকা, সেটাই এখনও জানেন না লালকৃষ্ণ আডবাণী। লোকসভার স্পিকার পদের জন্যও ভাবা হচ্ছে না এই প্রবীণ নেতার নাম। এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই অধিবেশনের প্রথম দিনে আজ সংসদে এলেন গাঁধীনগরের সাংসদ। কিন্তু এত দিন যে ঘরে তিনি বসতেন, সেখানে পা-ই রাখলেন না। এমনকী, নিজের আপ্ত সহায়ককেও তিনি বারণ করে দিলেন, ওই ঘরের ধারেকাছে না ঘেঁষতে।
প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় অটলবিহারী বাজপেয়ীই এনডিএ-র চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ার পর অস্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব সামলান আডবাণী। লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদটি যখন সুষমা স্বরাজকে দেওয়া হয়, সেই সময় বাজপেয়ীর এই ঘরটিতেই বসতেন আডবাণী। এনডিএ-র অস্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে। গত দশ বছর বিজেপি ছিল বিরোধী পক্ষে। এখন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই পদের রাশ নিজের হাতেই রাখতে পারেন মোদী। আডবাণী তাঁর পুরনো ভূমিকায় থাকবেন কি না, সেই বিষয়েও কিছু জানাননি মোদী। তাই আজ সংসদে নিজের পুরনো ঘরে গিয়ে বসেননি তিনি।
আডবাণী-ঘনিষ্ঠ এক নেতার মতে, যিনি প্রধানমন্ত্রী হন, তিনিই এনডিএ-র চেয়ারম্যান হন। ফলে আডবাণীর আর কোনও ঘর পাওয়ার এক্তিয়ারও নেই। আডবাণী যে মাপের নেতা, তাতে তাঁর পক্ষে মোদীর অধীনে থেকে কাজ করা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় লোকসভার স্পিকারই এমন একটি পদ ছিল, যেটা আডবাণীর উপযুক্ত হতে পারত। কিন্তু মোদী সেই পদে সুমিত্রা মহাজনের মতো নেত্রীকে বসাতে বেশি আগ্রহী।
দলের আর এক প্রবীণ নেতা মুরলীমনোহর জোশীকেও কোনও দায়িত্ব এখনও দেওয়া হয়নি। কিন্তু কোনও কমিশনের প্রধান বা রাজ্যপালের মতো পদ পেলেই জোশী রাজি হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু আডবাণীর পক্ষে তা সম্ভব নয়। ঘর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সে কারণেও। আডবাণী তাঁর দফতরের কর্মীদেরও ওই ঘরটি ব্যবহার না করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর আপ্ত-সহায়ক দীপক চোপড়া এ দিন বলেন, “আডবাণীজি নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদের কেউ যেন ওই ঘর ব্যবহার না করি। স্থির হয়েছে, আডবাণীজি সংসদে এসে সোজা লোকসভায় যাবেন। সেখান থেকেই সোজা বাড়ি ফিরবেন।”
মোদী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা অবশ্য সংসদ ভবনে নিজেদের ঘর পেয়ে গিয়েছেন। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ লোকসভার বিরোধী দলনেতার ঘরটি ছেড়ে দিয়েছেন মল্লিকার্জুন খার্গের জন্য। তার বদলে শরদ পওয়ারের ঘরটি নিয়েছেন সুষমা। অরুণ জেটলিও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতার ঘর ছেড়ে দিয়েছেন।
যদিও আডবাণীর এখনই ঘর ছেড়ে দেওয়ার কোনও অর্থ হয় না বলেই মনে করছেন দলের অনেক। এই নেতাদের যুক্তি, মোদী যে দিন সংসদের সেন্ট্রাল হলে দলের নেতা নির্বাচিত হলেন, সে দিনও আডবাণীই এনডিএ চেয়ারম্যানের ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁকে কিন্তু এখনও কেউ বারণ করেননি। ফলে যত ক্ষণ না কেউ মানা করছেন, তত ক্ষণ তো তিনিই এনডিএ চেয়ারম্যান। তবে ১৬তম লোকসভায় বিজেপি যে বিপুল সংখ্যক সাংসদ নিয়ে এসেছে, তার পরে এনডিএ-তে সমন্বয় রাখার ভূমিকাই বা কতটুকু? জয়ললিতা বা নবীন পট্টনায়কদের সঙ্গেও তো মোদী নিজেই কথা বলছেন। ডেপুটি স্পিকার পদের জন্য জয়ললিতার দলের নেতা থাম্বিদুরাইয়ের নাম নিয়ে আলোচনাও চলছে সরাসরিই।
অস্থায়ী চেয়ারম্যানের পদটি সাংবিধানিক কোনও পদও নয়। মোদী নিজে কিছু বলেননি এ নিয়ে। দলের তরফেও আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা না হওয়ায় বর্ষীয়ান নেতাটির অবস্থা কার্যত এখন ত্রিশঙ্কু। তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের বক্তব্য, কবে মোদী জানাবেন, তার জন্য অপেক্ষা করা সম্ভব নয় আডবাণীর মতো উঁচু মাপের নেতার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy