কানাডার পার্লামেন্টের সামনে চলছে গুলির লড়াই। ছবি: রয়টার্স।
ঘড়ির কাঁটা দশটা ছোঁয়নি তখনও। সকালের কাজকর্ম শুরু হচ্ছিল কানাডার পার্লামেন্টে। হঠাত্ গুলির আওয়াজ। একটা নয়, অন্তত বার তিরিশেক। কেঁপে উঠল রাজধানী ওটাওয়ার পার্লামেন্ট হিল এলাকা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখলেন, গুলি লেগে লুটিয়ে পড়ছেন পার্লামেন্টের বাইরে ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালের সামনে পাহারায় থাকা এক সেনা। দেখলেন, এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে চালাতে গাড়িতে উঠছে একটি লোক।
এর পর সেই গাড়িটাই তীব্র গতিতে নিরাপত্তা ব্যূহ ভেদ করে ঢুকে পড়ল পার্লামেন্ট চত্বরে। প্রাথমিক ঘোর কাটিয়ে উঠে গাড়ির পেছনে তখন ধাওয়া করেছে নিরাপত্তাবাহিনী। খানিক পরে পার্লামেন্ট ভবনের ভেতর থেকেও ভেসে এল পরপর গুলির আওয়াজ। গোটা পার্লামেন্ট চত্বরে নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার তো ভেতরেই রয়েছেন! নিরাপদে রয়েছেন কি তিনি?
ঠিক যেন তেরো বছর আগে নয়াদিল্লির সংসদ ভবনে হামলার ফ্ল্যাশব্যাক। ২০০১-এর ১৩ ডিসেম্বর এ ভাবেই লালবাতি লাগানো অ্যাম্বাসাডরে চড়ে সংসদে হামলা চালিয়েছিল জইশ-ই-মহম্মদ ও লস্কর-ই-তইবার জঙ্গিরা। প্রাণ গিয়েছিল ৬ পুলিশ ও এক মালির।
কানাডার পার্লামেন্টে হামলায় গভীর রাত পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ওয়ার মেমোরিয়ালের সামনে গুলিবিদ্ধ ওই সেনা প্রাথমিক চিকিত্সার পরেই মারা যান। এ ছাড়া, এক বন্দুকবাজ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পার্লামেন্টের ভেতরেও অন্তত এক জন নিরাপত্তারক্ষীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপদে বার করে আনা গিয়েছে বলে সরকারি সূত্র জানাচ্ছে।
সমস্ত আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেলের পর্দায় তখন কানাডার পার্লামেন্ট চত্বর। দেখা যায়, দ্রুত পজিশন নিচ্ছে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত পুলিশবাহিনী। মাইকে চলছে ঘোষণা, “দুষ্কৃতীকে এখনও ধরতে পারিনি আমরা। পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক। সবাই নিরাপদ জায়গা খুঁজে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করুন।”
শুধু পার্লামেন্ট নয়, কাছাকাছির একটি শপিং মলেও হানা দেয় বন্দুকবাজ। বন্ধ করে দেওয়া হয় ওটাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়, মার্কিন দূতাবাস। কোথাওই কেউ মারা গিয়েছেন বলে খবর নেই। তবে পার্লামেন্টের ভেতরে ওই নিরাপত্তারক্ষী-সহ আহতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত তিন।
খুব রহস্যময় ভাবেই জানা যাচ্ছে না, ঠিক কত জন বন্দুকবাজ ছিল। কেউ বলেছেন এক জন, কেউ বলেছেন, একের বেশি। পার্লামেন্টে হানা দেওয়া দলটারই একটা অংশ শপিং মলে চড়াও হয়েছিল কি না, বোঝা যাচ্ছে না তা-ও। এটুকু শোনা যাচ্ছে, যে গাড়িটিতে চড়ে বন্দুকবাজ পার্লামেন্টে ঢোকে, সেটি ওয়ার মেমোরিয়ালের কাছ থেকেই ছিনতাই করা হয়েছিল।
কিন্তু কে বা কারা, কেন এই হামলা চালাল, তা নিয়েও জারি রয়েছে যথেষ্ট ধোঁয়াশা। পরে কানাডা প্রশাসন জানিয়েছে, কোনও গোষ্ঠী দায় স্বীকার না করলেও এই ঘটনায় জঙ্গি-যোগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না তারা। এর আগে আইএস-সহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর কড়া সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী হারপার। জঙ্গি দমনে কড়া আইন প্রণয়নেরও তোড়জোড় করছিলেন তিনি। উপরন্তু আজই শান্তির নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইকে কানাডার সাম্মানিক নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা ছিল। হামলার জেরে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে সেই অনুষ্ঠান।
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক আহত সেনাকে। ছবি: এ এফ পি।
কানাডায় বেড়াতে এসেছেন নেদারল্যান্ডসের বাসিন্দা জ্যান লাচটেনবার্গ। বললেন, “সকাল সকাল পার্লামেন্ট দেখতে পৌঁছে গিয়েছিলাম। হঠাত্ দেখলাম ছোটখাটো চেহারার একটা লোক, মাথায় লম্বা চুল। হাতে একটা বড়সড় রাইফেল নিয়ে পার্লামেন্ট হিলের দিকে দৌড়ে আসছে।” পার্লামেন্টের এক কর্মচারী স্কট ওয়ালশ জানিয়েছেন, বন্দুকবাজের পরনে ছিল নীল জিন্স, নীল জ্যাকেট। মুখে একটা স্কার্ফও বাঁধা ছিল। আর কোনও বন্দুকবাজকে দেখেছেন কি? স্পষ্ট উত্তর নেই।
তবে আশঙ্কার প্রহর গোনা শুরু করে দিয়েছে কানাডা প্রশাসন। চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকেই গাড়ি চাপা পড়ে মারা গিয়েছিলেন এক সেনা। সন্দেহ করা হচ্ছে, সেটা ছিল পরিকল্পিত খুন। তার পরেই পার্লামেন্টে জঙ্গি হানা। স্বভাবতই চূড়ান্ত সতর্ক নিরাপত্তাবাহিনী।
প্রধানমন্ত্রী হারপার টুইটারে মোটামুটি সক্রিয়। পার্লামেন্টে হানা নিয়ে তাঁর কোনও টুইট অবশ্য গভীর রাত পর্যন্ত দেখা যায়নি।
তবে হোয়াইট হাউস সূত্রে জানানো হয়েছে, কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শীঘ্রই ফোনে কথা বলবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy