শান্তিকামনায়। মঙ্গলবার সিডনির লিন্ড কাফের সামনে। ছবি: রয়টার্স
বিনিদ্র রাতের শেষে ভোরের আলো ফুটল অস্ট্রেলিয়ায়। জঙ্গি আক্রমণ প্রতিরোধে দু’টি নিরপরাধ প্রাণ খুইয়েছে দেশ। সেই শহিদদের মনে রেখে সকাল থেকেই ফুলের তোড়ায় ঢাকা পড়েছে সিডনির মার্টিন প্লেস।
লিন্ড চকোলেট কাফের নাম এত ক্ষণে জেনে ফেলেছে তামাম বিশ্ববাসী। এখানেই কাল প্রায় সাড়ে ষোলো ঘণ্টা জঙ্গিদের হাতে আটকে থেকেছেন ২১ জন। তার পর নাটকীয় ভাবে কাফের দখল নিয়েছে পুলিশ। গুলিযুদ্ধে নিহত হয় অপরাধী মান হারুন মনিস। প্রাণ হারান আরও দুই পণবন্দি, ক্যাথরিন ডসন (৩৮) ও কাফের ম্যানেজার টরি জনসন (৩৪)। এক জন তাঁর সন্তানসম্ভবা সহকর্মীকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন। অন্য জন কাফের ম্যানেজার, জঙ্গির থেকে বন্দুক কাড়তে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। আজ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন গির্জায় প্রার্থনারও আয়োজনও করা হয়। ক্যাথরিন এবং টরির কথা বলতে গিয়ে আর্চবিশপ অ্যান্টনি ফিশার বলেন, “সন্ত্রাস যে বন্ধুত্ব আর জীবনবোধ কেড়ে নিতে পারেনি, তা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছেন এঁঁরা।”
পুলিশ সূত্রের খবর, গত কাল বন্ধু ও সহকর্মী জুলি টেলরের সঙ্গে ওই কফিশপে গিয়েছিলেন ক্যাথরিন। তিনি পেশায় আইনজীবী। তাঁর তিন সন্তানের প্রত্যেকেরই বয়স দশের কম। গোলাগুলি চলার সময়ে সন্তানসম্ভবা জুলিকে বাঁচাতে যান ক্যাথরিন। তখনই গুরুতর জখম হন। গুলিতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে ক্যাথরিন যে বান্ধবীকে আড়াল করতে গিয়েই বন্দুকের সামনে এসে পড়েন তা নিয়ে কোনও ধোঁয়াশা নেই।
গুলিবিদ্ধ টরিকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তবে টরি যে জঙ্গির হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নিতে গিয়েছিলেন, পণবন্দিরাই সে কথা জানিয়েছেন। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, বন্দুকধারী জঙ্গি কাফের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ার সুযোগে পাঁচ জন বন্দি দৌড়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন। তাতে বেজায় চটে গিয়েছিল হারুন। প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার দাবিও জানিয়েছিল ওই জঙ্গি।
লিন্ড কাফের ঘটনার পরে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে পুলিশের গাফিলতি নিয়ে। ইরান থেকে ১৯৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়া হারুনের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে হত্যা এবং চল্লিশেরও বেশি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে পুলিশ কেন ব্যবস্থা নেয়নি, সেই প্রশ্নে সরব হয়েছেন সাধারণ মানুষ। যদিও গত কালের পরে আজও পুলিশ জানিয়েছে, হারুনের জঙ্গিযোগের কোনও খবর পুলিশের কাছে ছিল না।
তবে ২০১৩ সালে হারুনের স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় তার সঙ্গেই অপরাধীর তালিকায় উঠেছিল তার এক বান্ধবীর নাম। যিনি খুনের অভিযোগে জামিন পাওয়ার শর্তে পুলিশকে সাহায্য করার আশ্বাসও দিয়েছেন। হারুনের মৃত্যুর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তার বান্ধবী আমিরা ড্রোডিস টুইটারে একটি ভিডিও আপলোড করেন। তাঁর দাবি, ৯/১১-এর মতো ঘটনায় জড়িত ছিলেন তিনি। তবে কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা অবস্থায় তাঁর ভিডিও বার্তা, “নিজেকে জঙ্গি বলতে অনুতাপ হচ্ছে। বহু দিন ধরে একাধিক সন্ত্রাসের ঘটনায় জড়িত থাকলেও এখন আর সে সবে নেই।” তবে আগে বেশ ক’বার সন্ত্রাসের পক্ষ নিয়ে ভিডিও পোস্ট ও স্টেটাস আপটেড করেছেন আমিরা। আমিরার খোঁজ পাওয়ার পরে আজ, পশ্চিম সিডনির বেলমোরে হারুনের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। শোনা যাচ্ছে, সেখানে আমিরার সঙ্গেই থাকত হারুন।
আজ, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লিন্ড কাফের ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অ্যাবটের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy