Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বরফ রাজ্যে তাজা ১০৬ বছরের কেক

কিন্তু ফ্রুটকেকটা ছিল কার? নিউজিল্যান্ডের সংস্থা ‘আন্টার্কটিক হেরিটেজ ট্রাস্ট’ জেনেছে, এই কেক সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছিলেন ব্রিটিশ অভিযাত্রী রবার্ট ফ্যালকন স্কট। ‘স্কট অব দি আন্টার্কটিক’ বলেই যিনি প্রসিদ্ধ।

টাটকা: স্কটের সেই কেক।

টাটকা: স্কটের সেই কেক।

সংবাদ সংস্থা
ওয়েলিংটন শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৫৮
Share: Save:

বয়স নয় নয় করে ১০৬ বছর। তাতে কী! শরীরে ছাপ পড়েনি। যে যত্নে তাকে তৈরি করা হয়েছিল, তার সব চিহ্নই প্রায় অটুট। রূপ আছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, তার ‘সুবাস’ জানান দিচ্ছে, তাকে অক্লেশে খাওয়াও যেতে পারে! তাকে যে ভাবে কাগজে মুড়ে টিনের কৌটোয় ভরা হয়েছিল, তেমনই রয়েছে। সৌজন্যে দক্ষিণ মেরুর সব চেয়ে পুরনো কুঁড়েঘর। সেখানেই মিলেছে ১০৬ বছরের পুরনো এক ফ্রুটকেক। যাকে নিয়ে এখন জোরদার চর্চা চলছে অভিযাত্রী বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

কিন্তু ফ্রুটকেকটা ছিল কার? নিউজিল্যান্ডের সংস্থা ‘আন্টার্কটিক হেরিটেজ ট্রাস্ট’ জেনেছে, এই কেক সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছিলেন ব্রিটিশ অভিযাত্রী রবার্ট ফ্যালকন স্কট। ‘স্কট অব দি আন্টার্কটিক’ বলেই যিনি প্রসিদ্ধ। দক্ষিণ মেরুর যে বাড়িতে কেকটা পাওয়া গিয়েছে, ১৮৯৯ সালে সেটি তৈরি করেছিল নরওয়ের এক অভিযাত্রী দল। আর অভিযানের পথে সেই কুঁড়েঘরে ক্যাপ্টেন স্কটের দল আশ্রয় নিয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুরও তিন বছর আগে।

কেকটি খুঁটিয়ে দেখে এক বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, ‘দারুণ রয়েছে! সন্দেহ নেই, দক্ষিণ মেরুর তীব্র ঠান্ডাই এর কারণ।’ প্রোগাম ম্যানেজার লিজি মিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, অসম্ভব দক্ষতার সঙ্গে সংরক্ষণও করা ছিল কেকটি। এক গন্ধ বিশারদের মতে, ওটা ‘প্রায়’ খাওয়ার অবস্থাতেই আছে বলা যায়। খাবার জিনিস পুরনো হয়ে গেলে যে গন্ধ তৈরি হয়, কেক-এ ব্যবহৃত মাখন থেকে তেমন হাল্কা একটা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া আর কিছু নয়।

দক্ষিণ মেরুর পূর্ব ভিক্টোরিয়া ল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব ঘেঁষা উপদ্বীপ ‘কেপ আডার’-এর দলবল নিয়ে টেরা নোভা অভিযানে বেরিয়েছিলেন স্কট। সঙ্গে ছিল এই কেক। ব্রিটিশ বিস্কুট প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘হান্টলে অ্যান্ড পামার্স’ কেকটি বানিয়েছিল। উদ্ধারকারী দলের দাবি, কৌটোয় নাকি লেখা ছিল, সারা বিশ্বে ‘হান্টলে অ্যান্ড পামার্স’ বিস্কুট রফতানি করে। আর এই কৌটো অদ্ভুত সব জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায়!

দক্ষিণ মেরুর ওই অংশে ২০১৬ সালের মে মাস থেকে উদ্ধারের কাজ চালাচ্ছে দলটি। বরফের সাম্রাজ্যে দু’টি কুঁড়েঘর থেকে ১৫০০ ‘প্রত্নসামগ্রী’ পেয়েছে তারা। যার মধ্যে আছে, টুল, জামাকাপড়, জ্যাম, পচা মাছ-মাংস! কিন্তু কৌটোর মধ্যে ফ্রুটকেক পেয়ে চক্ষু চড়কগাছ তাদের! কেক টেনে টেনে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া কেন? লিজি মিকের বক্তব্য, ‘‘ব্রিটিশ সমাজে ফ্রুটকেক এখনও জনপ্রিয় খাবার। দক্ষিণ মেরুর মতো জায়গায় কাজকম্ম করতে হলে ফ্যাট আর মিষ্টিজাতীয় খাবার লাগে। ফ্রুটকেক তাই আদর্শ! এক কাপ চায়ের সঙ্গে হলে তো কথাই নেই।’’ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ক্যান্টারবেরি মিউজিয়ামে আপাতত ঠাঁই হচ্ছে এই সব সামগ্রীর।

দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশে দ্বিতীয় বারও যাত্রা করেছিলেন স্কট। ১৯১২ সালে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত থেকে হতোদ্যম হয়ে ফিরতে হয় তাঁদের। নরওয়ের অন্য এক দল ৩৩ দিন আগে সেখানে পৌঁছয়। ফেরার পথে ভয়ঙ্কর আবহাওয়া, খাদ্যাভাব আর ফ্রস্টবাইটে স্কটের অভিযাত্রী দলের কেউ বেঁচে ফেরেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fruitcake Antarctica
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE