Advertisement
১১ মে ২০২৪

সন্তানের জন্ম দিয়ে নতুন জীবনে পা অ্যাসিড আক্রান্তের

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকেই অচেনা লেগেছিল তাঁর। অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়া বীভৎস মুখ দেখে আঁতকে উঠেছিলেন ব্রিটেনের কেটি পাইপার। প্রেমিকের থেকে পাওয়া সেই ‘ক্ষত’ কোনও দিন ঠিক হবে কি না, বুঝতে পারেননি তিনি। এ সব অবশ্য ছ’বছর আগের কথা। এখন সে সব মনেও করতে চান না তিনি।

সংবাদ সংস্থা
লন্ডন শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫৮
Share: Save:

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকেই অচেনা লেগেছিল তাঁর। অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়া বীভৎস মুখ দেখে আঁতকে উঠেছিলেন ব্রিটেনের কেটি পাইপার। প্রেমিকের থেকে পাওয়া সেই ‘ক্ষত’ কোনও দিন ঠিক হবে কি না, বুঝতে পারেননি তিনি। এ সব অবশ্য ছ’বছর আগের কথা। এখন সে সব মনেও করতে চান না তিনি। কারণ? যাবতীয় শারীরিক প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি পৃথিবীর আলো দেখাতে পেরেছেন তাঁর সন্তানকে। এ আনন্দের কাছে ম্লান হয়ে গিয়েছে অ্যাসিড-হানার তীব্রতা।

কেটি জানালেন, ২০০৮ সালের সে সময়টায় নিউ হ্যাম্পশায়ারে মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন তিনি। এমনিতে সাদামাটাই ছিল জীবন। হঠাৎই বিপর্যয়। বন্ধুর সঙ্গে মিলে এক দিন কেটির দিকে তীব্র ঘন সালফিউরিক অ্যাসিড ছুঁড়ে মারল তাঁরই প্রাক্তন প্রেমিক ড্যানি লিঙ্ক। সেই রাসায়নিক কিছুটা কেটির গলা দিয়েও চুঁইয়ে পড়ে। তবে অত্যাচারের এখানেই শেষ নয়। অ্যাসিড-হানার দিন তিনেক আগে কেটিকে ধর্ষণ করেছিল ড্যানি। মারধর করে বন্দী করে রেখেছিল তাঁকে। আর নানা ভাবে পুলিশে অভিযোগ জানানো থেকে কেটিকে আটকেছিল সে।

দু’দুটি বড়সড় আঘাত মেনে নিতে পারেননি তরুণী। ক্রমশ নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। তবে আশার কথা, ২০১০-এ নতুন করে বাঁচার তাগিদ খুঁজে পেতে কিছুটা জোর করেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন কেটি। শুরু হয় তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায়। কোনওমতে একটা কাজ জোটান প্রথমে। একটা ঘুপচি বাড়ির অন্ধকূপে শুরু হয় তাঁর নতুন লড়াই। এর কিছু দিনের মধ্যেই তৈরি করেন ‘কেটি পাইপার ফাউন্ডেশন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। মূলত পুড়ে যাওয়া মানুষদের নিয়েই সংস্থাটির কাজ।

অন্যদের জন্য জীবনের মানে খুঁজতে গিয়ে নিজের বাঁচার শখটাও ফিরে পেতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু কোনও ছেলেই তখন তাঁকে মেনে নিতে রাজি হননি। উল্টে অনেকেরই হাসির খোরাক বা করুণার পাত্র হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সে সময় তাঁর জীবনে আসেন রায়ান। অন্ধকার পানশালায় আলাপ হয়েছিল দু’জনের। তখন কেটির ঝলসে যাওয়া চেহারাটা ঠাহর করতে পারেননি রায়ান। কিন্তু কিছু দিন বাদে দিনের আলোয় কেটিকে দেখে চমকে ওঠেন রায়ান। মুখের ক্ষত নতুন আঘাত নিয়ে আসে জীবনে। কেটিকে ছেড়ে চলে যান ওই তরুণ। হতাশা ফের ঘিরে ধরে কেটিকে।

এর কিছু দিনের মধ্যেই জেমসের সন্ধান পান কেটি। ফোনে আলাপ। প্রথম দিন দেখা করতে যাওয়ার সময়ও হাত-পা কাঁপছিল তরুণীর। জেমসও যদি রায়ানের মতো প্রত্যাখ্যান করে?

এ বার অবশ্য সে রকম হয়নি। গল্প, প্রাণখোলা হাসিঠাট্টাক্রমেই কাছাকাছি আসতে শুরু করেন দু’জনে। কেটির বয়ানে, “আমি তখনও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার জীবনেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে?” বদলাতে শুরু করেছিল তরুণীর জীবন। অ্যাসিড-হানার আঘাত পেরিয়ে ধীরে ধীরে আনন্দের খোঁজ পাচ্ছিলেন তিনি। তার পর এল সেই দিন। ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ জন্ম নিল কেটির সন্তান। বাবা হলেন জেমস। অ্যাসিড-ক্ষতের যন্ত্রণায় মলম লাগল সে দিন। তবে চিন্তাও ছিল। কেটি ভাবতেন, যে সমাজ থেকে একের পর এক আঘাত পেয়েছেন তিনি, সে সমাজে কী ভাবে তাঁর সন্তানকে নিরাপদে মানুষ করবেন? কী ভাবেই বা লড়তে শেখাবেন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে? এখন কেটি বুঝছেন, এ ভাবেও ফিরে আসা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ketty pyper acid affected danny link
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE