Advertisement
০২ মে ২০২৪

৭৫ বছর পরে মিলল দুই দেহ

ওই দেহ দু’টি ৭৫ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া তাঁর মা-বাবার বলে দাবি করেন ৭৯ বছর বয়সি এক বৃদ্ধা। মার্সিলিন অড্রি ডুমুলিন নামে ওই বৃদ্ধা নিজেকে ওই দম্পতির ছোট মেয়ে বলে পরিচয় দেন। ওই দেহ দু’টির ডিএনএ পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধার দাবিই ঠিক।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
বার্ন শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৭ ১১:২০
Share: Save:

বরফের মধ্যে থেকে উঁকি দিচ্ছে এক পাটি জুতো। নকশাটা দেখে মালুম হয়, সেটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের। বরফের মধ্যেই ইতস্তত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ব্যাকপ্যাক, টিনের বাটি, কাঁচের বোতল, হাতঘড়ি ও বই। আর তার পাশেই বরফের গর্তের মধ্যে এক পুরুষ ও এক মহিলার বরফে জমাট বাঁধা দেহ!

গত সপ্তাহেই একটি স্কি লিফট সংস্থার এক কর্মী আল্পস পর্বতে ওই দেহ দু’টি দেখতে পান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৬০০ মিটার উঁচুতে কয়েকটি স্কি রিসর্টের কাছে সানফ্লিউরন হিমবাহ থেকে ওই দেহ দু’টি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় দেহ দু’টি।

ওই দেহ দু’টি ৭৫ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া তাঁর মা-বাবার বলে দাবি করেন ৭৯ বছর বয়সি এক বৃদ্ধা। মার্সিলিন অড্রি ডুমুলিন নামে ওই বৃদ্ধা নিজেকে ওই দম্পতির ছোট মেয়ে বলে পরিচয় দেন। ওই দেহ দু’টির ডিএনএ পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধার দাবিই ঠিক।

এর পর অড্রিই শোনান পঁচাত্তর বছর আগের সেই গল্পটা!

সালটা ১৯৪২। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। সাত সন্তান নিয়ে সুখের সংসার ছিল শিক্ষিকা মার্সিলিন এবং জুতো প্রস্তুতকারক ফ্র্যাঙ্কিন ডুমুলিনের। ১৫ অগস্ট ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বাড়িতে রেখে একটু দূরের মাঠ থেকে গরুর দুধ আনতে বেরিয়েছিলেন ওঁরা। তার পর আর ফিরে আসেননি। তখন মার্সিলিনের বয়স ৩৭, আর ফ্র্যাঙ্কিনের ৪০।

এর পরে ঘোর দুর্যোগ নেমে আসে ডুমুলিন দম্পতির সাত সন্তানের জীবনে। মা-বাবা নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরে আলাদা হয়ে যেতে হয়েছিল সাত ভাইবোনকে। বিভিন্ন আত্মীয়ের পরিবারে বড় হতে থাকেন তাঁরা। তবে কয়েকটা প্রশ্ন সকলের মনেই ঘুরপাক খেতে থাকে। কী ভাবে উধাও হয়ে গেলেন মা-বাবা? কোথায়ই বা গেলেন তাঁরা? ধোঁয়াশাটা থেকেই গিয়েছিল। তবে এ দিন ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরে স্পষ্ট হয়ে গেল, দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন ওই দম্পতি। পুলিশের দাবি, দূরের মাঠে যাওয়ার শর্টকাট হিসেবে ডুমুলিন দম্পতি বেছে নিয়েছিলেন পাহাড়ি পথ। তখনই কোনও ভাবে তাঁরা পড়ে যান পাহাড়ের খাদে। বরফে চাপা পড়ে যায় দেহ। গত ৭৫ বছরে এলাকার হিমবাহ অনেকটা গলে গিয়েছে। ফলে হঠাৎ জনসমক্ষে চলে এসেছে দেহ দু’টি।

দীর্ঘ ৭৫ বছরে পাল্টে গিয়েছে অনেক কিছুই। ডুমুলিন দম্পতির সাত সন্তানের মধ্যে এখন বেঁচে শুধু দুই মেয়ে। ওই দম্পতির আর এক মেয়ে মনিক গতসি ডুমুলিনের মনে সে দিনের স্মৃতি এখনও তাজা। শেষ যে দিন বাবা-মাকে দেখেছিলেন! স্মৃতি হাতড়ে বললেন, ‘‘খুব সুন্দর আবহাওয়া ছিল সে দিন। বাবা গান গাইছিলেন। সেই শেষ! তার পর আর কোনও দিন দেখতে পাইনি ওঁদের।’’ ছোট মেয়ে অড্রি বললেন, ‘‘বাবা-মাকে খুঁজতেই আমাদের জীবন কেটে গিয়েছে। এক দিনের জন্যও কিন্তু আমরা খোঁজ বন্ধ করিনি। আশায় ছিলাম, কোনও না কোনও দিন ওঁদের অন্ত্যেষ্টিটা অন্তত ঠিক মতো করতে পারব।’’ অড্রি জানিয়েছেন, অন্ত্যেষ্টিতে কালো পরাটাই রীতি। কিন্তু মা-বাবার শেষকৃত্যে সাদা পোশাক পরবেন তিনি। কারণ, ‘‘সাদা রং আশার আলো দেখায়। আর এই আশাটাই আমি কোনও দিন ছাড়িনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE