Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিশুদের যৌন নিগ্রহ ঠেকাতে শিবির পাহারায় সিরীয় যুবারা

শরণার্থী শিবিরে যৌন নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। তবে সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন জনা কয়েক সিরীয় যুবক। প্রত্যেকের বয়স তিরিশের মধ্যে। শরণার্থী শিবিরে থাকা সাত বছরের এক সিরীয় শিশুকন্যাকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে ওই শিবিরেরই এক আফগানের বিরুদ্ধে। হাতেনাতে ধরে তাকে গ্রিক পুলিশের হাতে তুলে দিল ওই যুবকের দল।

সংবাদ সংস্থা
ইদোমেনি শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৬ ০২:৫২
Share: Save:

শরণার্থী শিবিরে যৌন নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। তবে সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন জনা কয়েক সিরীয় যুবক। প্রত্যেকের বয়স তিরিশের মধ্যে। শরণার্থী শিবিরে থাকা সাত বছরের এক সিরীয় শিশুকন্যাকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে ওই শিবিরেরই এক আফগানের বিরুদ্ধে। হাতেনাতে ধরে তাকে গ্রিক পুলিশের হাতে তুলে দিল ওই যুবকের দল।

গ্রিস-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তে ইদোমেনি শরণার্থী শিবির। সেখানে বসবাস প্রায় ১৪ হাজার লোকের। অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোনও রকমে মাথা গুঁজে থাকেন শরণার্থীরা।

ওই শিবিরের লাগোয়া শৌচাগারের পিছনেই শিশুটির কান্না শুনে প্রথমে এগিয়ে আসেন ২৯ বছরের রাঁধুনি বাসার আল-আলি। তিনি সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘‘আমি বাইরে বসে কফি খাচ্ছিলাম। তখন দেখলাম একটা লোক হাত ধরে টানতে টানতে ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে যাচ্ছে।’’ দৌড়ে তিনি লোকটির পিছু নেন। শৌচাগারের পিছনে গিয়ে তিনি দেখেন,‘‘মেয়েটির টি শার্ট ও ট্রাউজার খোলার চেষ্টা করছে লোকটি।’’ এর পরেই লোকটাকে জাপটে ধরে কিল-ঘুষি মারতে থাকে বাসার। ইতিমধ্যে শিশুটির বাবাও চেঁচিয়ে লোক জড়ো করেন। বাসারের সঙ্গে হাত মেলাতে এগিয়ে আসেন আল মুলহেম। অভিযুক্ত ওই আফগানকে জনরোষের হাত থেকে বাঁচান মুলহেম ও সাডো। সাডো ২৪ বছরের এক কুর্দ দর্জি। সাডো বলেন,‘‘এখানে লোকজন মেরে ফেলতেই চেয়েছিল ওকে। তবে আমি বলি এটা আমাদের কাজ নয়। আমরা সভ্য সমাজে বাস করি। এটা পুলিশের দায়িত্ব।’’

সাডো

আল-আহমেদ

আল-মুলহেম

শুধু বাসার বা সাডো নয়। ওঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন সাতাশ বছরের মহম্মদ। পেশায় এক জন ডিস্ক জকি। আসেন ১৯ বছরের সিরীয় যুবক মহম্মদ আল-আহমেদ। তবে এঁরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়েই কাজ করেন।

আলি শেখ নামে এক সিরীয় বাসচালকের নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয়েছে পাঁচ-সদস্যের একটি দল। পুলিশি পাহারা না থাকায় বেশির ভাগ সময় শরণার্থীদের হেনস্থার
বিহিত হয় না। তাই তাদের হিংস্র আক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতেই পুলিশের ভূমিকা পালন করছেন তারা। ২৪ ঘণ্টা অতন্দ্র প্রহরায় সব সময় তৈরি এই দল। শরণার্থী শিবিরের কাছেই একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে থাকেন ওরা। সেই দলেরই এক জন বছর ছাব্বিশের আবদুল মহম্মদ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেখলাম
লোকজন চারদিকে ছোটাছুটি করছে। তাদের দেখে আমরাও দৌড় লাগাই।’’ আবদুলের কথায়, মেয়েটি সমানে কাঁদছিল। কোনও কথা বলছিল না। আর লোকটি বার বার বলছিল সে কিছু করেনি।

অভিযুক্ত আফগানকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য জোর দেন সা়ডো। তাঁর মতে, মেয়েটির বাবার এতে কোনও কু মতলব আছে কি না তা আমরা জানি না। ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে লোকটাকে ফাঁসাতে এই ষড়যন্ত্র কি না তা নিয়ে সন্দেহ ছিল সা়ডোর। তাই বার বার পুলিশের হস্তক্ষেপ চেয়েছিল সিরীয় যুবকের ওই দল। অন্য দিকে ওই আফগানকে বাঁচাতে জড়ো হয়ে যান তার গোষ্ঠীর লোকেরা। তবে তাঁদের পুরো ঘটনা বোঝানো হলে তাঁরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। শিশুকন্যা ও তার বাবা পুলিশের সঙ্গে সব রকম সাহায্য করছেন। তবে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাননি
তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE