ভারতকে চাপে রাখতেই পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির পথে এগোচ্ছে চিন, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ছবি: সংগৃহীত।
ভারত সুদীর্ঘ পাল্লার অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করায়, বেজায় চটেছিল চিন। দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য নষ্ট করছে নয়াদিল্লি, এর ফল ভাল হবে না— তীব্র উষ্মা প্রকাশ করে এমনই জানিয়েছিল বেজিং। সেই বেজিং-ই এ বার অস্ত্র প্রতিযোগিতা আরও উস্কে দিয়ে জানাল, চিন এবং পাকিস্তান যৌথ ভাবে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করবে। চিনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র গ্লোবাল টাইমসের একটি প্রতিবেদন এই খবর জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে চিনের মিত্রতা দীর্ঘ দিনের। বর্তমান আন্তর্জাতিক সমীকরণ সেই বন্ধুত্বকে আরও নিবিড় করেছে। এক দিকে ভারত যত শক্তিশালী হয়েছে, চিন তত বেশি করে পাকিস্তানকে কাছে টানার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে। অন্য দিকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে পাক সরকার যত প্রশ্রয় দিয়েছে, ততই পাকিস্তানকে দূরে ঠেলে দিয়েছে আমেরিকা। আর অবলম্বন খুঁজতে আরও বেশি করেছে চিনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে পাকিস্তান। ৪৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে চিনের কাশগড় থেকে পাকিস্তানে গোয়াদর পর্যন্ত অর্থনৈতিক করিডর বানিয়েছে চিন। এই চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডরের সুবাদে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত গোয়াদর বন্দরকে কাজে লাগিয়ে সরাসরি আরব সাগরে পৌঁছতে পারছে চিন, মধ্য এশিয়ার সঙ্গে আরও সহজ হচ্ছে চিনের যোগাযোগ। আর সেই বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা অক্সিজেন পাচ্ছে পাকিস্তানের ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি।
যৌখ উদ্যোগে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির নামে আসলে পাকিস্তানকে দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিতে চায় চিন, বলছে ওয়াকিবহাল মহল। ছবি: সংগৃহীত।
এ বার আর শুধু ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক আর অর্থনৈতিক সম্পর্কে সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছে না চিন-পাকিস্তান। সামরিক সম্পর্ককেও এই দুই দেশ আরও নিবিড় করতে চাইছে। গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, চিন এ বার পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ব্যালিস্টিক মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল, অ্যান্টি-এয়ারক্র্যাফ্ট মিসাইল এবং অ্যান্টি-শিপ মিসাইল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এফসি১-শাওলং নামের একটি হালকা ওজনের মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্টও এই দুই দেশ যৌথ উদ্যোগে বিপুল সংখ্যায় তৈরি করবে বলে গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে। চিনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্রে আরও জানানো হয়েছে, চিন এবং পাকিস্তানে সক্রিয় বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধেও এ বার যৌথ ভাবে লড়াই করবে দু’দেশ।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে গিয়ে নিখোঁজ নিজামুদ্দিন দরগার প্রধান সহ দুই সুফি ধর্মগুরু
বৃহস্পতিবার পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া চিনের অন্যতম শীর্ষ সেনাকর্তা ফ্যাং ফেংগুইয়ের সঙ্গে বেজিং-এ একটি বৈঠক করেছেন। বেজিং সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে জেনারেল বাজওয়াই চিন-পাকিস্তান সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। চিনা সেনাকর্তারাও সে দাবি মেনে নিয়েছেন। সেই বৈঠকের পর দিনই যৌথ উদ্যোগে ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম তৈরির কথা জানিয়েছে চিনা সংবাদমাধ্যম।
চিন-পাক অর্থনৈতিক করিডরের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দু’দেশের সেনা এমনিতেই পরস্পরের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে কাজ করে। পাক সেনা ওই করিডরে ১৫ হাজারের বাহিনী মোতায়েন করেছে। আর পাক নৌবাহিনী গোয়াদর বন্দরকে নিরাপদ রাখতে বিশেষ বাহিনী গড়ে তুলেছে। পাকিস্তানের যে সব এলাকা দিয়ে এই করিডর গিয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলিই জঙ্গি উপদ্রুত। নাশকতার হাত থেকে করিডরকে রক্ষা করতেই এই বিপুল সামরিক তৎপরতা পাকিস্তানের। তবে শুধু অর্থনৈতিক করিডরকে নিরাপদে রাখা নয়, অন্যান্য অঞ্চল থেকে সন্ত্রাসবাদীদের উৎখাত করতেও চিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে পাকিস্তান প্রস্তুত, বাজওয়া নাকি চিনকে এমনই জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy