চিনের এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার লিয়াওনিং। —ফাইল চিত্র।
ভারতকে ‘উদ্বিগ্ন’ হতে বললেন মার্কিন নৌসেনার প্যাসিফিক কম্যান্ডের প্রধান অ্যাডমিরাল হ্যারি হ্যারিস জুনিয়র। চিন যে ভাবে ভারত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বিনা বাধায় প্রভাব বাড়াচ্ছে, তাতে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়া জরুরি, মন্তব্য মার্কিন নৌসেনার শীর্ষকর্তার। তবে এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার নিয়ে মহড়ার আয়োজন করে চিন ভারতকে ভয় দেখাতে পারবে না বলেও মনে করছেন অ্যাডমিরাল হ্যারিস। এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার নিয়ে অভিযান চালানোর প্রশ্নে ভারত চিনের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে বলে তিনি মনে করছেন। ভারত এবং আমেরিকা যৌথ ভাবে চিনা নৌসেনার গতিবিধির উপর নজর রাখছে বলেও তিনি জানিয়েছেন
ভাসমান টারম্যাকে মহড়া শুরুর অপেক্ষায় চিনা নৌসেনার জে-১৫ যুদ্ধবিমান। —ফাইল চিত্র।
মার্কিন নৌসেনার প্যাসিফিক কম্যাণ্ড এত সুবিশাল এক জলভাগে মার্কিন অভিযানের নিয়ন্ত্রক যে ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৫২ শতাংশ এলাকাই তার মধ্যে পড়ে। ভারত মহাসাগরে মার্কিন নৌসেনার গতিবিধিও এই প্যাসিফিক কম্যান্ডের অধীনেই। তাই ভারতীয় নৌসেনার সঙ্গে মার্কিন নৌসেনার যৌথ কার্যকলাপও আমেরিকার তরফে অ্যাডমিরাল হ্যারি হ্যারিস জুনিয়রই দেখভাল করেন। ভারত-মার্কিন যৌথ সামরিক কার্যকলাপ আরও বাড়ানোর পক্ষে অনেক দিন ধরেই জোর সওয়াল করছেন মার্কিন নৌসেনার এই শীর্ষকর্তা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি এ বার জানালেন, চিনা নৌসেনা ভারত মহাসাগরে দ্রুত নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করতে চাইছে। চিনের এই প্রভাব বৃদ্ধি রুখতে অবিলম্বে নিজেদের নৌসেনাকে আরও সক্রিয় করে তোসা উচিত ভারতের।
আরব সাগরের বুকে ভারতীয় নৌবহর। নেতৃত্বে দুই এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার আইএনএস বিক্রমাদিত্য এবং আইএনএস বিরাট। ছবি: সংগৃহীত।
অ্যাডমিরাল হ্যারিস জুনিয়রের কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে ভারত মহাসাগরে চিনা নৌবহরের গতিবিধি আটকানোর কোনও উপায় নেই।’’ চিনের এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার লিয়াওনিং-এর নেতৃত্বে একটি চিনা নৌবহর এখন দক্ষিণ চিন সাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের এক বড় এলাকায় টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে মালাক্কা প্রণালী পেরিয়ে বঙ্গোপসাগর, আন্দামান সাগর বা আরব সাগরের দিকে সে চিনা নৌবহর এখনও আসেনি। মার্কিন নৌসেনার শীর্ষকর্তা কিন্তু মনে করছেন, চিনা নৌবহর এ দিকে টহল দিতে এখনও আসেনি বলে ভবিষ্যতেও আসবে না, এ রকম ভাবার কোনও কারণ নেই। চিনা সাবমেরিনগুলি যে ভাবে মাঝেমধ্যেই বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে হানা দিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি চালানোর চেষ্টা করছে, ঠিক সে ভাবেই চিনের এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারও এই অঞ্চলে যখন তখন আসতে পারে বলে তাঁর মত। কিন্তু অ্যাডমিরাল হ্যারিস এও বলেছেন যে, এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার পাঠিয়ে ভারতে চাপে ফেলার ক্ষমতা চিনের নেই। তিনি বলেছেন, ‘‘এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার অপারেশনের ক্ষেত্রে ভারতীয় নৌসেনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা চিনা নৌসেনার চেয়ে অনেক বেশি।’’ আমেরিকার সুবিশাল এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারগুলির সঙ্গেও যে চিনের লিয়াওনিং কোনও ভাবেই যুঝতে পারবে না, সে কথাও অ্যাডমিরাল হ্যারি হ্যারিস জুনিয়র মনে করিয়ে দিয়েছেন।
আইএনএস বিক্রমাদিত্য। ভারতীয় নৌসেনার এই এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারকে ডরায় চিনও। ছবি: সংগৃহীত।
ভারতীয় নৌসেনা সূত্রের খবর, চিনা সাবমেরিনগুলি যে ভাবে লুকিয়ে ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন এলাকায় হানা দিচ্ছে, তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা ভারত এখন করবে না। কারণ চিনের সাবমেরিনগুলি সব সময় যে আন্তর্জাতিক জলসীমা ছেড়ে ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়ছে, এমনটা নয়। তাই তাদের টহলদারিতে আপত্তি করার কিছু নেই বলেই ভারত মনে করছে। তবে দিল্লি এবং ওয়াশিংটন যৌথ ভাবে সতর্কতাও অবলম্বন করেছে। চিনা নৌসেনার কোন রণতরী কখন কোথায় থাকছে, তার উপর সর্বক্ষণ নিবিড় ভাবে নজর রাখা হচ্ছে। আমেরিকার কাছ থেকে কেনা পি৮-১ অ্যান্টি সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার জেটগুলিকেই ভারত এ কাজে ব্যবহার করছে।
আরও পড়ুন: বড়সড় যুদ্ধ করতে হবে, পরমাণু যুদ্ধও হতে পারে: চিনা হুমকি আমেরিকাকে
অ্যাডমিরাল হ্যারি হ্যারিস জুনিয়রের কথায়, ‘‘পি৮ হল পৃথিবীর সেরা অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার ব্যবস্থা।’’ ভারত পি৮-১ এবং আমেরিকা পি৮-এ জেট ব্যবহার করে চিনা ডুবোজাহাজগুলির উপর নজর রাখছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এ বিষয়ে খুব বেশি তথ্য আমি দেব না। তবে এটুকু বলতে পারি যে চিনা নৌসেনার জাহাজগুলির গতিবিধি সারাক্ষণ আমাদের নজরে রয়েছে এবং আমরা পরস্পরকে (ভারত ও আমেরিকা) সর্বক্ষণ সেই তথ্য জানাচ্ছিও।’’
আরও পড়ুন: ভিয়েতনামকে ভারত আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র দিলে চিন হাত গুটিয়ে থাকবে না: বেজিং
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy