Advertisement
০২ মে ২০২৪
China

ক্রাইম থ্রিলার লেখক নিজেই খুনি! পুলিশি জালে ২২ বছর পর

চিনের পূর্ব ঝেজিয়াং প্রদেশের একটি গেস্ট হাউসে খুন হয়েছিলেন চার জন। তাঁর মধ্যে ছিলেন ওই গেস্ট হাউসের মালিক-দম্পতি এবং তাঁদের ১৩ বছরের নাতি। অন্য জন ওই রাতে গেস্ট হাউসের অতিথি হিসেবে ছিলেন।

লিউ ইয়ংবিয়াও এবং ওয়াং। ছবি: সংগৃহীত।

লিউ ইয়ংবিয়াও এবং ওয়াং। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
বেজিং শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ১৫:০৭
Share: Save:

উপন্যাসের প্রতি ছত্রে শব্দ দিয়ে তিনি বুনতেন গা ছমছমে রহস্য। আর সেই উপন্যাসগুলিই লিউ ইয়ংবিয়াওকে লেখক হিসেবে খ্যাতি এনে দিয়েছিল। কিন্তু কে জানত, বাইশ বছর আগে চার জনকে খুনের ঘটনায় সেই লেখককেই গ্রেফতার করবে পুলিশ! এবং জেরায় নিজেই সেই ভয়াবহ খুনের কথা স্বীকার করে নেবেন স্বয়ং লেখক!

কিন্তু, লিউ এই খুনের ইঙ্গিত তাঁর একটি উপন্যাসের মুখবন্ধেই দিয়েছিলেন বলে অনেকের ধারণা। বইটির নাম ছিল ‘গিল্‌টি সিক্রেট’। ২০১০-এ প্রকাশিত হয়। তারই মুখবন্ধে লিউ লিখেছিলেন, ‘এর পর আমি আর একটি উপন্যাস লিখছি। সেখানে রহস্য উপন্যাস লেখেন এমন এক জন সুন্দরী লেখিকাকে শেষমেশ পুলিশ সিরিয়াল খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করে। এবং তিনি তা স্বীকারও করে নেন। সেই বইয়ের নাম হবে, দ্য বিউটিফুল রাইটার হু কিল্‌ড।’ কিন্তু, আজ পর্যন্ত সেই বই প্রকাশিত হয়নি। তবে, এই মুখবন্ধের উপর নির্ভর করে কিন্তু পুলিশ বাইশ বছর আগের রহস্য উদ্ধার করেনি।

আরও পড়ুন: প্রশ্ন তুলেছিল দেশ, সামনে এল এলিজাবেথের চিঠি

১৯৯৫-এর ২৯ নভেম্বর। চিনের পূর্ব ঝেজিয়াং প্রদেশের একটি গেস্ট হাউসে খুন হয়েছিলেন চার জন। তাঁর মধ্যে ছিলেন ওই গেস্ট হাউসের মালিক-দম্পতি এবং তাঁদের ১৩ বছরের নাতি। অন্য জন ওই রাতে গেস্ট হাউসের অতিথি হিসেবে ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে সেই সময় পুলিশ জানতে পারে, প্রতিবেশী আনহুই প্রদেশ থেকে দুই অতিথি ওই রাতে গেস্ট হাউসে এসেছিল। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল আনহুইয়ের আঞ্চলিক ভাষায়। মূলত, গেস্ট হাউসের অতিথিদের জিনিসপত্র ডাকাতির উদ্দেশ্যেই তারা এসেছিল বলে তদন্তে পুলিশ জানতে পারে। রাতে তারা প্রথমে এক অতিথির ঘরে ঢোকে। কিন্তু, তাঁর ঘুম ভেঙে যাওয়ায় তিনি দুষ্কৃতীদের জাপটে ধরে ফেলেন। তখনই তারা দু’জনে মিলে খুন করে ‘ইউ’ পদবীর ওই ব্যক্তিকে। গোটা ঘটনার মোড় ঘোরানোর জন্য এর পর একে একে মালিক দম্পতি এবং তাঁদের কিশোর নাতিকেও খুন করা হয়।

ব্যস! এর পর গোটাটাই গাঢ় অন্ধকার। কে বা কারা তাঁদের খুন করেছিল, সে সম্পর্কে গত প্রায় ২২ বছর ধরে এক বারের জন্যও বুঝতে পারেনি পুলিশ। খুনি এবং তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে দিস্তার পর দিস্তা নোট জমা হতে থাকে। তদন্ত এগনোর মধ্যেই প্রতি ক্ষেত্রে সম্ভাব্য নামগুলো খারিজও হয়ে যায়। কোনও ‘ক্লু’ই খুঁজে পাওয়া যায়নি। শেষমেশ মামলাটা ঠান্ডাঘরে চলে যায়। কিন্তু, চলতি বছরের জুন মাসে ফের সেই মামলা খুঁচিয়ে সামনে আনে ঝেজিয়াং পুলিশ। সৌজন্যে ডিএনএ-পরীক্ষা। চিনা সংবাদ মাধ্যমকে উল্লেখ করে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, প্রায় ৬০ হাজার ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়। আর সেই সুবাদেই শেষে ৫৩ বছরের লিউ ইয়ংবিয়াও-র কাছে পৌঁছয় পুলিশ। তাঁর সঙ্গেই ওই খুনের ঘটনায় বছর চৌষট্টির ওয়াং নামে আরও এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: যোগীর জবাব চায় আদালত

দীর্ঘ জেরার পর দু’জনেই বাইশ বছর আগের সেই খুনের কথা স্বীকার করে নেন। পুলিশ যখন লিউ-র বাড়িতে পৌঁছয়, তখন তিনি নাকি তদন্তকারীদের বলেন, ‘‘আমি আপনাদের অপেক্ষাতেই ছিলাম।’’ গ্রেফতারের পরে তদন্তকারীদের হাতে তিনি তাঁর স্ত্রীকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি খোলা চিঠিও দিয়েছেন। চিনা সংবাদ মাধ্যমকে উল্লেখ করে ‘দ্য গার্ডিয়ন’ জানিয়েছে, ওই চিঠিতে লেখা রয়েছে, ‘‘এই দিনটার জন্য গত ২০ বছর ধরে অপেক্ষা করছিলাম। শেষ পর্যন্ত শেষের সেই দিন এসেই গেল। দীর্ঘ দু’দশক ধরে নিজের মনের সঙ্গে লড়াই করে আর পারছিলাম না।’’

লেখক হিসেবে লিউয়ের খ্যাতি চিন-জো়ড়া। তাঁর একাধিক রহস্য উপন্যাস তো রয়েইছে, পাশাপাশি তাঁর লেখা নিয়ে ৫২ পর্বের এক রহস্য সিরিয়ালও সে দেশের টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়। উপন্যাসের মতো সেই রহস্য সিরিয়ালও ভীষণ জনপ্রিয় ছিল। ২০১৩-য় লিউ আনুষ্ঠানিক ভাবে চিনের লেখক সংগঠনের সদস্য হন। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কারও।

কিন্তু কেন খুন করেছিলেন? কেন ডাকাতির মতো কাজে নিজেকে জড়িয়েছিলেন, সে বিষয়ে কিছুই জানতে পারেননি তদন্তকারীরা। লিউ শুধু তাঁদের বলেছেন, ‘‘ঘটনার বছর চারেক পর থেকে আত্মদংশনে ভুগতাম। নাওয়া-খাওয়া-ঘুম ছুটে গিয়েছিল। সেই ভাবেই এতগুলো বছর কেটেছে। এ বার স্বস্তি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE