দলবীর ভাণ্ডারী। —ফাইল চিত্র।
টানটান লড়াই ওয়াকওভার হয়ে গেল শেষ মুহূর্তে। ব্রিটিশ প্রার্থী সরে দাঁড়ানোয় আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে ফের নির্বাচিত হলেন ভারতীয় বিচারপতি দলবীর ভাণ্ডারী। এই প্রথম আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের বেঞ্চে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ব্রিটেনের কোনও বিচারপতি থাকবেন না।
দ্য হেগের আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা ও নিরাপত্তা পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হয়। ন্যায় আদালতের বিচারপতির পঞ্চম আসনটির জন্য চলতি ভোটাভুটিতে সাধারণ সভায় এগিয়ে ছিলেন ভারতীয় প্রার্থী বিচারপতি দলবীর। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে দু’ভোটে পিছিয়ে ছিলেন তিনি। আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের দুই কক্ষেই দ্বাদশ দফার ভোট হওয়ার কথা ছিল।
কূটনৈতিক সূত্রে খবর, গত কাল পর্যন্ত ব্রিটিশ প্রার্থী বিচারপতি ক্রিস্টোফার গ্রিনউডের পাশেই ছিল নিরাপত্তা পরিষদের বাকি পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশ। কূটনীতিকদের মতে, ভবিষ্যতে তাদের প্রার্থীরাও বিপাকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে আমেরিকা, চিন, রাশিয়া ও ফ্রান্সের। তা নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশগুলির পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন। তবে দলবীর ভাণ্ডারীর পক্ষে জোর দৌত্য চালু রাখে ভারত।
আজ ভোটাভুটির কিছু ক্ষণ আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা ও নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে চিঠি লেখেন ব্রিটিশ স্থায়ী প্রতিনিধি অ্যান্ড্রু রাইক্রফট। তাতে তিনি জানান, আর ভোটাভুটি করে রাষ্ট্রপুঞ্জের সময় নষ্ট করতে রাজি নয় ব্রিটেন। তাই বিচারপতি গ্রীনউড প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াবেন। এর পরে দুই কক্ষের ভোটে সহজেই জিতে যান বিচারপতি ভাণ্ডারী।
কূটনীতিকদের মতে, সন্ত্রাস-সহ বিভিন্ন প্রশ্নে পশ্চিমী দুনিয়ার সঙ্গে দৌত্যে সম্প্রতি বেশ কিছুটা সফল হয়েছে দিল্লি। সেই ঘনিষ্ঠতার ফলেই শেষ পর্যন্ত বিচারপতি ভাণ্ডারীর নির্বাচনের পথ সুগম হয়েছে। এর ফলে পাকিস্তানে ভারতীয় গুপ্তচর সন্দেহে ধৃত কুলভূষণ যাদবকে নিয়ে শুনানির সময়ে ন্যায় আদালতের বেঞ্চে হাজির থাকবেন ভারতীয় বিচারপতিও।
বিচারপতি ভাণ্ডারীর নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত সরকার। এই বিষয়ে সফল দৌত্যের জন্য বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও কূটনীতিকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ব্রিটিশ সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে ভারতের মতো ‘মিত্র দেশ’-এর প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় তারা খুশি। কিন্তু ব্রিটিশ প্রার্থীর সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে টেরেসা মে সরকার। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, এই ঘটনা থেকে প্রমাণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ক্রমশ গুরুত্ব হারাচ্ছে ব্রিটেন। ব্রেক্সিটের ফলে ইতিমধ্যেই ব্রিটেন থেকে সরেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। এ বার আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতেও রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ব্রিটেনের কোনও প্রতিনিধি থাকবেন না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, দৌড় থেকে সরে দাঁড়িয়ে নিজেদের কমে আসা গুরুত্বকেই ‘স্বীকৃতি’ দিল লন্ডন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy