রুহান সাদিক। ছবি: পিটিআই।
লড়েও হারল রুহান।
বহু ঝক্কি পেরিয়ে মাস খানেক আগে পাকিস্তান থেকে ভারতে এসেছিল চার মাসের খুদেটা। সফল অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে দেশে ফিরেও গিয়েছিল সে। তবু শেষ রক্ষা হল না। ক’দিন ডায়েরিয়ায় ভুগে শরীরে জলশূন্যতা। আর তাতেই সোমবার সন্ধেয় থেমে গেল ছোট্ট রুহান সাদিকের জীবন। টুইটারে এই খবর জানিয়ে রুহানের বাবা লিখেছেন, ‘‘এত বড় অস্ত্রোপচারের ধকল সামলে নিয়েছিল ছেলেটা। কিন্তু জলশূন্যতায় ভুগে চলে গেল আমার রুহান।’’
জন্ম থেকেই হৃদ্যন্ত্র আর মহাধমনীতে ফুটো ছিল শিশুটির। আরও কিছু গঠনগত জটিলতা ছিল দেহের কলকব্জায়। রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে থাকায় ছোট্ট শরীরটা ধীরে ধীরে নীল হয়ে যাচ্ছিল। পাকিস্তানের ওই পরিবারকে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, দ্রুত অস্ত্রোপচার না করলে বাঁচানো যাবে না রুহানকে। নয়ডার এক হাসপাতালে ছেলের চিকিৎসা করাতে চেয়ে ভিসার আবেদন করেছিলেন রুহানের বাবা, বছর বত্রিশের কানওয়াল সাদিক। কিন্তু তখন যে দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা আরও বেড়েছে। ভিসার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে ঘুরতে শেষে ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে টুইটটা করেই বসলেন কানওয়াল। লিখলেন, ‘‘রুহান তো জানে না ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কী চলছে। তার জন্য ও কেন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে? ’’ আর তাতেই কাজও হয়েছিল ম্যাজিকের মতো।
যুবকের ওই আবেদনে সাড়া দিয়ে বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ‘‘ওকে আর ভুগতে হবে না। ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করুন। আমরা ভিসা দেব।’’ এর পরেই শুরু হয়ে যায় ভারতে আসার তোড়জোড়। ১৪ জুলাই নয়ডায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল পাঁচ ঘণ্টা ধরে রুহানের জটিল অস্ত্রোপচার করেন। সুস্থ রুহানকে নিয়ে এর পরেই দেশে ফিরে যায় তার পরিবার। রুহানের দ্রুত আরোগ্য কামনায় ভারত-পাক দুই দেশের মানুষের শুভেচ্ছা-প্রার্থনায় অভিভূত শিশুর বাবা সুষমাকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি। পাকিস্তানে ফিরে তিনি টুইটারে লিখেছিলেন, ‘‘সুষমাজির জন্যই আমার ছেলের হৃদ্যন্ত্র এখনও ধুকপুক করছে।’’ পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য ভারতে আসতে চান যে সব পাকিস্তানি, তাঁদের জন্যও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন জানান তিনি।
রুহানের ঘটনায় আশার আলো দেখতে পেয়ে বহু পাকিস্তানি এরপর ভারতে চিকিৎসার জন্য ভিসার আবেদন জানিয়েছেন। তবে, সোমবার তাঁদের ‘আলোর দিশারী’ রুহানের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ দুই দেশের মানুষই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy