Advertisement
০৪ মে ২০২৪
যুদ্ধের তাস ট্রাম্পের

থামতে বলছে আদালত, ট্রাম্প তবু অনড়

কুড়ি কোটি মানুষের আমেরিকায় ঢোকার উপরে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে টলমল সারা পৃথিবী। শশব্যস্ত ব্রিটেন, জার্মানি-সহ বিভিন্ন অভিবাসী-বান্ধব দেশ।

ট্রাম্প-বিরোধীদের বিক্ষোভ। রবিবার সান-ফ্রান্সিসকোয়।

ট্রাম্প-বিরোধীদের বিক্ষোভ। রবিবার সান-ফ্রান্সিসকোয়।

সংবাদ সংস্থা
নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৯
Share: Save:

কুড়ি কোটি মানুষের আমেরিকায় ঢোকার উপরে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে টলমল সারা পৃথিবী। শশব্যস্ত ব্রিটেন, জার্মানি-সহ বিভিন্ন অভিবাসী-বান্ধব দেশ। প্রেসিডেন্টের নির্দেশ আর আদালতের রায়ের মাঝখানে পড়ে ঠিক কী করা উচিত, বুঝতে পারছেন না হোমল্যান্ড সিকিউরিটি-সহ বিভিন্ন মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীরা। ফলে চূড়ান্ত অরাজকতা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে। শুক্রবার বিকেলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর কুখ্যাত ‘বিদেশি সন্ত্রাসবাদীদের দেশে ঢোকা থেকে আমেরিকাকে রক্ষা করা’ নামক এই প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করার ৪৮ ঘণ্টা পরে এই ছবিই দেখছে দুনিয়া।

শনিবার গভীর রাতে প্রেসিডেন্টের নির্দেশের উপর সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করেছে নিউ ইয়র্কের এক আদালত। কালই নিউ ইয়র্কের এই আদালতে বিমানবন্দরে আটক দুই ইরাকি অভিবাসীর হয়ে মামলা করেছিল ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন’ নামে এক মানবাধিকার সংগঠন। শনিবার রাতে এক বিশেষ অধিবেশন ডেকে তাদের কথা শোনেন বিচারক অ্যান ডনেলি। তারপর রায় দেন, যাঁরা ইতিমধ্যেই আমেরিকায় পৌঁছে গিয়েছেন বা ভ্রমণের মাঝপথে রয়েছেন, তাঁদের কাছে যদি বৈধ ভিসা থাকে, তাঁদের আমেরিকা থেকে ফেরত পাঠাতে পারবে না মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। এই রায়ে উপকৃত হবেন আমেরিকা-সহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে আটকে থাকা প্রায় ২০০ জন শরণার্থী ও অভিবাসী।

বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে উঠতে দেওয়া হল না আমেরিকাগামী বিমানে। রবিবার ইরাকের এরবিল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সে দেশের এক নাগরিক।

অর্থাৎ, অন্তত কুড়ি কোটি মানুষের মধ্যে আপাতত স্বস্তি পাচ্ছেন শ’দুয়েক! আদালতের এই রায়কে তাই পাত্তাই দিতে চায় না প্রেসিডেন্ট শিবির। আজও প্রেসিডেন্ট টুইট করে বলেছেন, ‘‘সীমান্ত পোক্ত করতেই হবে। চাই আরও কড়া যাচাই-পরীক্ষা। ইউরোপ জুড়ে কী চলছে দেখুন! গোটা বিশ্বেই তো চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা।’’ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যে আরও দেশের নাম জুড়তে পারে, তার ইঙ্গিত মিলেছে আজ হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে। হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ রেইন্স প্রিবাস আজ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘যে সব দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছিল, সেগুলো সম্পর্কে ওবামা প্রশাসনই যথেষ্ট সতর্ক ছিল। আমরা এখন পাকিস্তানের মতো দেশকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা যায় কি না, ভাবছি।’’ পাকিস্তান এ ব্যাপারে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া না জানালেও ট্রাম্প-নিন্দায় সরব হয়েছে ইরান। তাদের উপর এই নিষেধাজ্ঞা ‘অপমানজনক’ বলে, উপযুক্ত আইনি ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ করার হুমকি দিয়েছে তারা। শুক্রবারই ফোনে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা হয়েছিল জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলের। শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনা কুড়িয়েছিলেন যিনি! আজ ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করে মের্কেল বলেন, ‘‘ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতির সূত্র ধরে এই নিষেধাজ্ঞা কোনও ভাবেই যুক্তিসম্মত নয়।’’ তিন দিন আগেই হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করে গেলেন ব্রিটিশ প্রধামনন্ত্রী টেরেসা মে। আজ তিনি তাঁর বিদেশমন্ত্রী বরিস জনসনকে ট্রাম্প প্রশাসনের দুই কর্তার সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের প্রধান মন্ত্রণাদাতা স্টিভ ব্যানন ও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে কথা বলে জনসনকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিতে হবে, ট্রাম্পের এই নীতির আওতায় যেন কোনও ভাবেই ব্রিটেনের মুসলিমদের আনা না হয়।

প্রেসিডেন্টের নির্দেশের উপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও এই নির্দেশ অসাংবিধানিক কি না, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি নিউ ইয়র্কের আদালত। তাঁদের ফেরত পাঠানো যাবে না বললেও এই সব অভিবাসী বা শরণার্থীদের ছেড়ে দেওয়া হবে, নাকি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এখনও তাঁদের আটক করে রাখবে, সে বিষয়টিও স্পষ্ট হয়নি আদালতের রায়ে। তবে হোয়াইট হাউস আজ এক বিবৃতি দিয়ে স্পষ্ট জানিয়েছে যে, সাতটি দেশের বংশোদ্ভূত যে সব মানুষ ইতিমধ্যেই মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়ে গিয়েছেন, আমেরিকায় প্রবেশে তাঁদের উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা বহাল হবে না।

ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই, ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকেরবার্গের পর এ বার মুখ খুললেন অ্যাপলের সিইও টিম কুক-ও। সহকর্মীদের এক ই-মেল বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘এই নীতি আমরা কোনও ভাবেই সমর্থন করি না। অভিবাসন ছাড়া অ্যাপল চলতে পারবে না। অ্যাপল দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করে— দেশের ভবিষ্যতের প্রশ্নেও অভিবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’ ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা ভাবাচ্ছে মাইক্রোসফটকেও। সংস্থার প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথের দাবি, এর প্রভাব পড়বে অন্তত ৭৬ জন কর্মী ও তাঁদের পরিবারের উপর। তিনিও মেল করেছেন তাঁর সহকর্মীদের। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা মনে করি, অভিবাসন আইনে মানুষের মত প্রকাশ ও ধর্মাচরণের স্বাধীনতা রক্ষা করা কর্তব্য এবং সেটাই হওয়া উচিত।’’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই নিষেধাজ্ঞার মানবিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ভয়ানক ও হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন টুইটারের সিইও জ্যাক ডরসি-ও।

তবু আদালতের স্থগিতাদেশে স্বস্তি ফিরেছে একাংশের। মামলায় জেতার পর আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন টুইট করে— ‘‘প্রথম সপ্তাহেই আদালতের কাছে গো-হারা হারলেন ট্রাম্প।’’ অভিবাসীদের পক্ষ নিয়ে আদালতে সওয়াল করছিলেন আমেরিকার অভিবাসী প্রকল্পের অন্যতম কর্তা লি গের্লান্ট। রায়ের পরে আদালত চত্বরে উপস্থিত জনতাকে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এর মধ্যেই যাঁরা আটকে পড়েছেন, আদালত তাঁদের নামের তালিকা দিয়ে বলেছে সরকারকে।’’

যাঁরা গ্রিন কার্ড নিয়ে আমেরিকায় আসতে চান, তাঁরাও প্রেসিডেন্টের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকছেন বলে শুক্রবার জানিয়েছিল হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। এর বিরুদ্ধেও একটি মামলা দায়ের হয় ভার্জিনিয়ার এক আদালতে। তাতেও আপাতত এক সপ্তাহের স্থগিতাদেশ মিলেছে। ডালাস বিমানবন্দরে আটকে থাকা গ্রিন কার্ডধারীদের অবিলম্বে ছেড়ে দিতে বলেছেন বিচারক।

সহ-প্রতিবেদন: লন্ডন থেকে শ্রাবণী বসু।

ছবি: রয়টার্স।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Donald Trump US Court Stay order Immigration ban
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE