আতঙ্কের ৩৮ মিনিট! শনিবার সকাল ৮টা ৭ মিনিট নাগাদ হঠাৎই বেজে উঠেছিল সকলের মোবাইল ফোন। ইনবক্সে ভেসে উঠেছিল ক’লাইনের বার্তা— ‘‘ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হানা। এখনই নিরাপদ আশ্রয় খুঁজুন। সেনা-মহড়া নয় কিন্তু।’’
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের দিকে ধেয়ে আসছে ক্ষেপণাস্ত্র! এমনিতেই ঘনঘন হুমকি দিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। কিছু দিন আগেই সে দেশের শাসক কিম জং উন বলেছিলেন, তাঁদের কাছে দারুণ শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা পিয়ংইয়ংয়ে বসেই গোটা আমেরিকা উড়িয়ে দিতে পারে। ফলে ক্ষেপণাস্ত্র-হানার খবরটা অবিশ্বাস করতে পারেননি কেউই। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে নিমেষে। আত্মীয়-বন্ধুদের সাহায্য চেয়ে ফোন করতে শুরু করেন বাসিন্দারা। ধোঁয়াশা কাটতে প্রায় ৩৮ মিনিট লেগে যায়। হাওয়াইয়ের গভর্নর ডেভিড ইগে জানান, কোনও এক সরকারি কর্মী ভুল করে একটা বোতাম টিপে দিয়েছিল। তাতেই ওই বিপত্তি। কী ভাবে সেটা ঘটল, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
হাওয়াইয়ের ওয়াহু দ্বীপের বাসিন্দা অ্যাডাম কুর্ৎজের ঘুম ভেঙেছিল মোবাইলে খবর আসার মিনিট চারেক পরে। হিসেব করতে শুরু করেছিলেন পালানোর জন্য হাতে কতটুকু সময় রয়েছে। কোত্থেকে আবার শুনেছিলেন, ১৫ মিনিটের মধ্যে সব শেষ হয়ে যাবে। ওইটুকু সময়ে কোথায় পালাবেন বুঝে পাননি কুর্ৎজ। বললেন, ‘‘পোষ্যদের নিয়ে আমি আর স্ত্রী জানলা-দরজা বন্ধ করে বাথরুমে আশ্রয় নিই।’’ যদিও পরে এক বন্ধুর ফোনে জানতে পারেন, সরকারি ভুলে ওই কাণ্ড।
ইগে জানান, কর্মীদের শিফ্ট বদলের সময়ে এক কর্মী ভুল করে ওই বোতামটি টিপে দিয়েছিলেন। পরে সংবাদিক বৈঠকে ইগে ও হাওয়াই বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্তা বার্ন মিয়াগি জানান, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ভুল না হয়, লক্ষ রাখা হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই নতুন নিয়ম জারি করা হয়েছে। সেনা মহড়া বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা— যে কোনও ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ভাবে ওই বোতামের কাছে দু’জন কর্মী রাখা হবে। ভুল করে যদি মেসেজ চলেও যায়, সেটা বাতিল করার মেসেজের টেমপ্লেটও তৈরি রাখতে হবে।
মার্কিন সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, ওই সতর্কবার্তা চলে যাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে আদৌ এমন কিছু ঘটেছে কি না, কম্পিউটার সিস্টেম পরীক্ষা করে তা দেখা হয়। ‘নর্থ আমেরিকান এয়ারোস্পেস ডিফেন্স কম্যান্ড’ও তড়িঘড়ি আকাশসীমা খতিয়ে দেখে জানায়, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চিহ্ন নেই। দ্রুত সেই খবর সরকারি দফতরগুলোকে জানানো হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সবাই টের পান, পুরোটা ভুল। কিন্তু কী ভাবে ভুল বোঝাবুঝি মেটানো হবে, সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলেন না কেউ। ১২ মিনিটের মধ্যে ‘ক্ষেপণাস্ত্র হানা নয়’, সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেটা শুধু বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের টুইটার অ্যাকাউন্টে পৌঁছয়। সকলের মোবাইল ফোন, টেলিভিশনে খবর পৌঁছতে ৮টা ৪৫ বেজে যায়।
হাওয়াইয়ের সেনেটর ব্রায়ান শাৎজ বলেন, ‘‘আজ যা হল, তা ক্ষমার অযোগ্য। গোটা দেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিল।’’ হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি লিন্ডসে ওয়াল্টার অবশ্য বলেন, ‘‘পুরোপুরি প্রাদেশিক সরকারি কর্মীদের ভুল।’’ ঘটনার সময়ে মার-আ-লাগোর গল্ফ কোর্সে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিষয়টি জানানো হয় তাঁকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy