ক্রিস্টোফার ওয়াইলি
বলতে গেলে গন্ডগোলটা শুরু হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। গোটা ঘটনায় নিজের ভূমিকা নিয়ে এখন হাত কামড়াচ্ছেন ক্রিস্টোফার ওয়াইলি। কানাডীয় তরুণ এই গবেষক ব্রিটিশ সংস্থা কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার প্রাক্তন কর্মী। তিনিই সম্প্রতি নিজের সংস্থার কাজকর্মের ধরনধারন একটি পত্রিকায় ফাঁস করে দিয়ে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছেন।
‘হুইসলব্লোয়ার’ ওয়াইলির দাবি, তিনি ভেবেছিলেন মার্ক জুকেরবার্গের সংস্থা অন্তত ওই ‘যন্ত্রণাদায়ক সত্য’ উদ্ঘাটনে তাঁর সঙ্গী হবে। হয়তো বা ফেসবুকের ‘গোপনীয়তা নীতি’তে কিছু পরিবর্তন ঘটানো হবে।
কিন্তু কোথায় কী? যৌথ বিবৃতি দেওয়া দূরে থাক, লন্ডনে গত শনিবার সকালে ঘুম ভেঙে ওয়াইলি দেখলেন, ফেসবুকের ব্লগ পোস্টে তাঁর, তাঁর প্রাক্তন মালিক এবং আরও এক জনের সাসপেন্ড হওয়ার কথা লেখা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ২০১8-র এক ঘটনায় ফেসবুকের তথ্য অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত সপ্তাহান্তের ওই বিস্ফোরক ঘটনার পরে ২৮ বছরের ওয়াইলি প্রযুক্তি দুনিয়ার সব চেয়ে শক্তিশালী এবং লাভজনক সংস্থার বিরুদ্ধে সরব হন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ফেসবুককে আক্রমণ করতে নামিনি। ফেসবুক অবিশ্বাস্য রকমের অসহযোগিতা করেছে। ওরা না সংবাদমাধ্যমকে সম্মান করছে। না এই সমালোচনাকে ইতিবাচক চোখে দেখে নিজেদের উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করছে।’’
আরও পড়ুন: দুঃখিত, সব দায় আমারই, ক্ষমা চাইলেন মার্ক
সম্প্রতি এক মার্কিন পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন কেমব্রিজ অ্যানালিটিকায় তথ্য বিশ্লেষণ কী ভাবে হত, ২০১৪ সালে ছেড়ে দেওয়ার আগে কী ভাবে তাঁর সংশয় বেড়ে গিয়েছিল। আর দু’বছর পরে তিনি সব চেয়ে স্তম্ভিত হয়েছিলেন, যখন দেখলেন অ্যানালিটিকার ‘বিখ্যাত ক্রেতা’ ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন।
২০১৫ সালের বসন্তে ট্রাম্পের প্রথম প্রচার-ম্যানেজার কোরি লেওয়ান্ডোস্কির সঙ্গে দেখা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন ওয়াইলি। লেওয়ান্ডোস্কি অবশ্য বিষয়টি মানতে চাননি। এই সূত্রেই ওয়াইলির আশঙ্কা, অ্যানালিটিকার সংগৃহীত এবং ব্যবহৃত তথ্য রাশিয়ার হাতে গিয়ে থাকতে পারে। তিনি জানাচ্ছেন, মার্কিন ভোটারদের নিয়ে সংগৃহীত তথ্য রুশ তৈল সংস্থা লুকঅয়েল-কে জানাত অ্যানালিটিকা। যখন এতটাই সংশয় ছিল, তা হলে মুখ খুলতে ওয়াইলি এত সময় নিলেন কেন? ওয়াইলির জবাব, ‘‘ভুলের পরে উচিত কাজ হল, তার দায় নেওয়া এবং সবাইকে জানানো। আমি প্রথম কাজটাই করছি।’’
ওয়াইলি জানিয়েছেন, সিইও অ্যালেকজান্ডর নিক্সের নির্দেশে একটি অ্যাপের মাধ্যমে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে। যা জানতেন ট্রাম্পের তৎকালীন পরামর্শদাতা স্টিভ ব্যানন। নিক্সকে এখন ব্রিটেনে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে হবে। ওয়াইলি বলেন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রুশ-মার্কিন মনোবিদ, আলেকজান্দার কোগান ওই অ্যাপ (দিসইসইওরডিজিটালঅ্যাপ) তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন। নিয়মিত রাশিয়াও যেতেন। কোগান অবশ্য বলছেন, ‘‘গোটাটাই বোকা-বোকা।’’
কোগান ফেসবুক ব্যবহারকারী হাজার জনের (তাঁরা অ্যাপটি ডাউনলোড করেছিলেন) তথ্য দিয়ে দেন। ওই ব্যবহারকারীদের এক লক্ষ ষাট হাজার বন্ধুর নাম, শহর, জন্মতারিখ, ধর্মবিশ্বাস, কাজ, শিক্ষা এবং পছন্দ-অপছন্দ। সারা পৃথিবী জুড়ে তাই নিয়ে শুরু হয়েছে হইচই। তদন্তে নামছে ইজরায়েলও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy