Advertisement
০৩ মে ২০২৪

আমেরিকার রাস্তায় ছবি বেচছেন বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার

যেখানে তিনি ছবি বিক্রি করেন, তার কাছেই মাইক্রোসফ্‌টের দফতর। সেখানে কর্মরত, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাঙালি তরুণী আনন্দবাজারকে জানিয়েছিলেন যে, ভিডিওটা দেখে তিনিও ফোন করেছিলেন জয়শ্রীকে।

জয়শ্রী তলাপাত্র গিল

জয়শ্রী তলাপাত্র গিল

সূর্য্য দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৮
Share: Save:

ছবি-আঁকা এক বান্ডিল কার্ড দু’হাতে। গলায় হলদেটে স্কার্ফ, অবিন্যস্ত কাঁচাপাকা চুল। মোবাইলে তোলা ভিডিওটায় আমেরিকার সিয়াটল লাগোয়া বেলভিউয়ের রাস্তায় দাঁড়ানো এক ভদ্রমহিলা জানাচ্ছেন, তিনি কলকাতার নিউ আলিপুরের বাঙালি। খড়্গপুর আইআইটি থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ারও। ২০০০ সাল নাগাদ আমেরিকায় চাকরি করতে এসে এখন রাস্তায় ছবি বেচে পেট চালাচ্ছেন। তিনি, জয়শ্রী তলাপাত্র গিল এখন একটা চাকরি চান।

একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনে তাঁকে ছবি বিক্রি করতে দেখে দুই ভারতীয় যুবক কথা বলেন জয়শ্রীর সঙ্গে। তাঁরাই ওই ভিডিও তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেন। জয়শ্রী ভিডিওয় নিজের মোবাইল নম্বর দিয়েছিলেন। বুধবার সেই নম্বরেই তিন বারের চেষ্টায় পাওয়া গেল তাঁকে। জয়শ্রী বললেন, ‘‘আমার পাসপোর্ট, গ্রিন কার্ড সব চুরি হয়ে গিয়েছে। ফটোকপিগুলো শুধু আছে। একটা মোটেলে থাকি। নিজের ছবি বিক্রির টাকায় বিল মেটাচ্ছি।’’ কী ভাবে এই দুর্দশা হল, তার খুব একটা স্পষ্ট ছবি কিন্তু দিতে পারলেন না জয়শ্রী। ক্ষীণ গলায় বারবার ধরা পড়ল অসংলগ্নতা।

যেখানে তিনি ছবি বিক্রি করেন, তার কাছেই মাইক্রোসফ্‌টের দফতর। সেখানে কর্মরত, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাঙালি তরুণী আনন্দবাজারকে জানিয়েছিলেন যে, ভিডিওটা দেখে তিনিও ফোন করেছিলেন জয়শ্রীকে। জয়শ্রী তাঁকে বলেছিলেন, কলকাতায় তাঁর এক ভাই ও এক বোন থাকেন। ২০১৭-র সেপ্টেম্বরে বোনের সঙ্গে শেষ বার কথা হয়েছিল। তার পরে আর যোগাযোগ করতে পারছেন না। কিন্তু আনন্দবাজারকে জয়শ্রী বললেন, ‘‘কালকেও (মঙ্গলবার) ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে।’’ দেশে ফিরতে চান কি না, জিজ্ঞাসা করা সত্ত্বেও ক্রমাগত বলে গেলেন, ‘‘এখানে অনেক জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে।’’ কী রকম জটিল পরিস্থিতি, তা-ও খুব একটা বোধগম্য হল না। জয়শ্রী বললেন, ‘‘একটা গেম খেলা হচ্ছে। আমাকে হেনস্থা করা হচ্ছে নানা ভাবে। মাফিয়ারা আমার তৈরি সফ্‌টওয়্যার চুরি করেছে। ছবিও চুরি হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: রেললাইনে শুয়ে পড়ে ঝুঁকির স্টান্ট, ছুটন্ত ট্রেনের সঙ্গে নিজস্বী

মাইক্রোসফ্‌টের ওই কর্মীকে জয়শ্রী বলেছিলেন যে, ১৯৯১ সালে আইআইটি খড়্গপুর থেকে পাশ করার পরে তিনি আইআইএসসি বেঙ্গালুরুতে পিএইচডি-র সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে না গিয়ে দিল্লি আইআইটি-তে গবেষণা করেন কিছু দিন। ২০০০ সালে একটি টেলিকম সংস্থার চাকরি পেয়ে চলে যান টেক্সাসের রিচার্ডসনে। ২০০১-এ সেখানেই মার্কিন নাগরিক ব্রায়ান গিলের সঙ্গে পরিচয় ও বিয়ে। সেই প্রসঙ্গ তুলতে জয়শ্রী বললেন, ‘‘২০০৫-এ একটা দুর্ঘটনার পরে ব্রায়ান নিখোঁজ হয়ে গেল। ২০০৯ সালে ফিরে এল। কিন্তু আবার চলে গেল। ওকে শেষ দেখি ২০১৪-য়।’’ তার পরে? জয়শ্রী বলেন, ‘‘চাকরি করছিলাম। টিসিএসে, কগনিজেন্টে। তার পরে চাকরি চলে গেল। আমার সব জিনিসপত্রও চুরি হয়ে গেল।’’ মার্কিন পুলিশের রেকর্ড বলছে, শান্তি ভঙ্গ করার দায়ে টেক্সাসে এক বার গ্রেফতারও হয়েছিলেন জয়শ্রী।

এলোমেলো কথা। শত্রুর ভয়। আবার ঘোর অনিশ্চিতের মুখেও উদাসীন। চর্চা চলছে, কী ভাবে দেশে ফেরানো যায় তাঁকে? কলকাতায় এ দিন জয়শ্রীর বোনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE